২৩ ফেব্রুয়ারি: বঙ্গবন্ধু উপাধির গৌরবময় মুহূর্ত

- সময় ০৫:২৮:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 228
“বঙ্গবন্ধু” উপাধিটি বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেওয়া সর্বোচ্চ সম্মানের একটি উপাধি। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আয়োজিত এক বিশাল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তৎকালীন ডাকসু ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা শেখ মুজিবুর রহমানকে এই উপাধিতে ভূষিত করেন।
সুনিদিষ্টভাবে তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ ওই গণসংবর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
সেই থেকে বঙ্গবন্ধু নামে খ্যাত হন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর নেতৃত্ব, ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি কেবল একজন রাজনীতিবিদ নন, বরং একটি জাতির মুক্তির প্রতীক হয়ে ওঠেন। বঙ্গবন্ধু উপাধি অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম ও বাঙালি জাতির প্রতি তাঁর অপরিসীম ভালোবাসা।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালির একটি ঐতিহাসিক প্রতিবাদ। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের পতন ঘটে এবং বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম আরও বেগবান হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে ছাত্রনেতারা শেখ মুজিবুর রহমানকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করেন। এই উপাধি ছিল বাঙালি জাতির প্রতি তাঁর অবদানের স্বীকৃতি।
শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর তিনি পূর্ব বাংলার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার দাবিতে গঠিত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। এরপর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় লাভ করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর করতে টালবাহানা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু তখন ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক। এরপর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, তিনি বাংলাদেশের জাতির জনক। বঙ্গবন্ধু উপাধি তাঁর ত্যাগ, নেতৃত্ব এবং বাঙালি জাতির প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার প্রতীক।