বাংলাদেশের মুসলিম দেশ হওয়ার ইতিহাস!

- সময় ০৩:০০:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 28
বাংলাদেশ, যা একসময় বৈচিত্র্যময় ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য বিখ্যাত ছিল, আজ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। প্রায় ৯১ শতাংশ জনসংখ্যা মুসলিম ধর্মালম্বী।
এর ইতিহাস একদিকে যেমন সমৃদ্ধ, তেমনই জটিল। কেমন করে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ও বৌদ্ধ ধর্মের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের মধ্য দিয়ে এই ভূখ- একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পরিণত হলো ?
বাংলাদেশের ইতিহাস শুরু হয় হিন্দু ও বৌদ্ধ শাসনামলের মাধ্যমে। পাল রাজবংশের সময় ৭৫০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্ম এই অঞ্চলের প্রধান ধর্ম ছিল। এর আগে, গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে হিন্দু ধর্মেরও ব্যাপক প্রভাব ছিল।
স্থাপত্য, সংস্কৃতি এবং জীবনধারায় এই ধর্মগুলোর ছাপ স্পষ্ট। সোমপুর মহাবিহার এবং ময়নামতির বৌদ্ধ স্থাপত্য এই যুগের সাক্ষ্য বহন করে।
বাংলাদেশে ইসলামের আগমন ঘটে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। তবে রাজনৈতিক প্রভাব শুরু হয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে, দিল্লি সালতানাতের শাসকদের মাধ্যমে।
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা করেন। বখতিয়ার খিলজির শাসনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়, যেখানে ইসলাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ইতিহাসবিদরা বলছেন, বাংলার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নবর্ণের হিন্দু সমাজ, মুসলিম শাসনের অধীনে ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে থাকে। এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল জমিদারি প্রথা ও বর্ণভেদের মতো সামাজিক অবিচারের হাত থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেন।
পাশাপাশি সুফি সাধকরা এই অঞ্চলে ইসলামের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শাহ জালাল (রহঃ), শাহ মাখদুম রূপোশ (রহঃ)-এর মতো সুফি সাধকদের প্রভাব এই প্রসারের মূল চালিকাশক্তি ছিল।
মুঘল শাসনামলে বাংলায় মুসলিম সংস্কৃতি আরও গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকার মসজিদ, সমাধি ও অন্যান্য স্থাপত্যে এই সময়কার প্রভাব স্পষ্ট। এই সময় কৃষি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও মুসলমানদের অবস্থান শক্তিশালী হয়। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয়, বাংলার সামাজিক কাঠামো তখনও বহুমাত্রিক ছিল।
বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকাল ধর্মীয় বিভাজনের নতুন অধ্যায় রচনা করে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং পরবর্তী সময়ে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা, বিশেষ করে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম, বাংলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তি আরও সুসংহত করে। পূর্ব বাংলা, যা পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত হয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলেও এর জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ মুসলিমই রয়ে যায়। হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের মানুষদের অনেকেই দেশত্যাগ করেন বা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েন। তবে বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও, এ অঞ্চলের মুসলিম সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের মূলভিত্তি অটুট থাকে।