১১:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেন ঢাকার বাতাস এতো দূষিত?

বিশেষ প্রতিনিধি
  • সময় ০২:১৫:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 49

কেন ঢাকার বাতাস এতো দূষিত?

বিশ্বব্যাপী দূষিত বাতাসের শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা প্রায় প্রতিদিনই শীর্ষে অবস্থান করে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের সূচক অনুযায়ী, ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’।

আইকিউএয়ারের সূচক অনুযায়ী, আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ২৭৭ স্কোর নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে সংস্থাটির সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এ ছাড়া ১৯৯ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচী (১৯৯)। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে উগান্ডার কাম্পালা (১৮০), নেপালের কাঠমান্ডু (১৭৮) ও ভারতের দিল্লি (১৭৭)।

সম্প্রতি সরকারের অর্থনৈতিক পুন:নির্ধারণ সংক্রান্ত যে টাস্ক ফোর্স রয়েছে তারা বলছেন, ঢাকার বর্তমান অবস্থা দেশের উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ কারনে বিশেষজ্ঞ ওই কমিটি ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ি, পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। যা ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অর্জিত জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশের সমান। সংস্থাটির এই হিসাব আরো ৬ বছর আগেরকার। বর্তমানে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়বে।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বিপদজনক হারে বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। বাংলাদেশে বছরে যেসব মানুষ মারা যায় তার ২৮ শতাংশই পরিবেশ দূষণের কারণে। অথচ সারা বিশ্বে এই হার মাত্র ১৬ শতাংশ।

সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ি, বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের ফলে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু হচ্ছে। যার মধ্যে শুধু বায়ু দূষণে ৫৫ শতাংশের মৃত্যু হচ্ছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের শহর অঞ্চলে ৮০ হাজার মানুষ পরিবেশ দূষণের কারণে মারা যান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চারশ’ বছরের বেশি পুরনো রাজধানী ঢাকা অনেক আগেই বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এখানের গতি পৃথিবীর অনান্য যে কোন রাজধানীর চেয়ে ধীর।

ঢাকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে ১৬১০ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের আমলে। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ইসলাম খান চিশতি নামে একজন গভর্নর ঢাকাকে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এর নামকরণ করা হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর’।

ঢাকার ইতিহাস আরও প্রাচীন। এই অঞ্চলে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা খ্রিস্টপূর্ব সময়কালের। তবে আধুনিক ঢাকা শহর হিসেবে এর বিকাশ মূলত মুঘল আমল থেকে শুরু হয়।

বর্তমানে ঢাকা শহর বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে একটি। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটে প্রায় ছয় হাজার ৩৭৮ জন বসবাস করেন।

এই ঘনত্বের কারণে ঢাকা শহরে যানজট, পরিবেশ দূষণ, আবাসন সংকট এবং অন্যান্য নাগরিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঢাকার জনসংখ্যার এই চাপ শহরের অবকাঠামো ও সম্পদের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে।

দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা হওয়ায়; প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছে কাজের সন্ধানে। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে ঢাকার অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে।

অতিরিক্ত এই জনসংখ্যার কারনে বিশ্বের অনান্য রাজধানীর তুলনায় ঢাকায় যানজটও অনেক বেশি। ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়।

বর্ধিত এই জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে প্রতিদিন ঢাকায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপণা। যে কারনে ঢাকার আশেপাশেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ঢাকা শহরের বায়ূ দূষণের ৫৮ শতাংশ হয় এই ইট ভাটা থেকে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, তিন দশক আগেও ঢাকার মোট আয়তনের ২০ শতাংশের বেশি এলাকায় জলাভূমি ছিল। কমতে কমতে এখন জলাভূমির পরিমাণ ৩ শতাংশের নিচে নেমেছে। অর্থাৎ তিন দশকে ঢাকায় জলাভূমি কমেছে ১৭ শতাংশ।

সংগঠনটি আরো জানায়, কোনো শহরের বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হলে সেই শহরের মোট ভূমির ১৫ শতাংশ সবুজ আচ্ছাদিত রাখতে হয়। ঢাকা শহরে এখন সেটি আছে মাত্র ৯ শতাংশ।

নগর-পরিকল্পনার মানদ- অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাশয়-জলাধার থাকার কথা। কিন্তু বিআইপির গবেষণার দেখা গেছে, ১৯৯৫ সালে ঢাকা শহরে সবুজ এলাকা ও ফাঁকা জায়গা ছিল ৫২ বর্গকিলোমিটারের বেশি। এখন সেটি প্রায় ৪৩ শতাংশ কমে ৩০ বর্গকিলোমিটারের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে ১৯৯৫ সালে ঢাকা শহরের মোট আয়তনের ২০ শতাংশের বেশি ছিল জলাভূমি। এখন তা মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। গত তিন দশকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট জলাভূমির প্রায় ৮৬ শতাংশ ভরাট করা হয়েছে।

বিআইপি’র এই গবেষণা ২০২৩ সালের। এই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে একদিকে সবুজ আচ্ছাদিত এলাকা ও জলাশয় কমেছে, অন্যদিকে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ বেড়েছে। ১৯৯৫ সালের পর থেকে ঢাকায় কংক্রিটের আচ্ছাদন প্রায় ৭৬ শতাংশ বেড়েছে।

বিআইপির গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণহীন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঢাকায় তাপপ্রবাহের প্রভাব অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। এর পেছনে ব্যক্তি, বেসরকারি গোষ্ঠী ও সরকারি সংস্থা সবার দায় রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার আশেপাশে এখনো অসংখ্য শিল্পকারখানা। এগুলো থেকে নির্গত ধোঁয়া ও রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে মিশে মারাত্মক দূষণ সৃষ্টি করছে। অনেক কারখানায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

শেষ কয়েক দশকে উন্নয়নের নামে যেসব কর্মযজ্ঞ হাতে নেয়া হয়েছে; তাও পরিবেশ দূষণের জন্য অধিকাংশ দায়ি। ঢাকা শহরে চলছে ব্যাপক নির্মাণ কাজ। রাস্তা, ফ্লাইওভার, বহুতল ভবন নির্মাণের সময় ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এই ধুলা বাতাসে মিশে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের ফুসফুসে পৌঁছাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

রয়েছে যানবাহনের কালো ধোঁয়ার প্রতিক্রিয়া। ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যানবাহন চলছে, অধিকাংশই পুরনো এবং কার্বন-মনোঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইড নির্গত করে। গাড়ির ইঞ্জিন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া প্রতিনিয়ত বাতাসের গুণমান নষ্ট করছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, দূষিত বাতাসে থাকা ক্ষুদ্র কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, ফুসফুস ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো জরুরি পদক্ষেপ নিলে বছরে ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। সিসা বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। দূষণের ফলে শিশুদের আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে বছরে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট।

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছেন, তাদের লোকবল কম হওয়ায় এনফোর্সমেন্ট কম হচ্ছে। ২০২১-২২ সালে প্রায় দুই হাজার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলেও মাত্র ৪৮ শতাংশ জরিমানা আদায় করা গেছে।

শেয়ার করুন

কেন ঢাকার বাতাস এতো দূষিত?

সময় ০২:১৫:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিশ্বব্যাপী দূষিত বাতাসের শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা প্রায় প্রতিদিনই শীর্ষে অবস্থান করে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের সূচক অনুযায়ী, ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’।

আইকিউএয়ারের সূচক অনুযায়ী, আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ২৭৭ স্কোর নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে সংস্থাটির সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এ ছাড়া ১৯৯ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচী (১৯৯)। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে উগান্ডার কাম্পালা (১৮০), নেপালের কাঠমান্ডু (১৭৮) ও ভারতের দিল্লি (১৭৭)।

সম্প্রতি সরকারের অর্থনৈতিক পুন:নির্ধারণ সংক্রান্ত যে টাস্ক ফোর্স রয়েছে তারা বলছেন, ঢাকার বর্তমান অবস্থা দেশের উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ কারনে বিশেষজ্ঞ ওই কমিটি ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ি, পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। যা ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অর্জিত জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশের সমান। সংস্থাটির এই হিসাব আরো ৬ বছর আগেরকার। বর্তমানে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়বে।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বিপদজনক হারে বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। বাংলাদেশে বছরে যেসব মানুষ মারা যায় তার ২৮ শতাংশই পরিবেশ দূষণের কারণে। অথচ সারা বিশ্বে এই হার মাত্র ১৬ শতাংশ।

সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ি, বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের ফলে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু হচ্ছে। যার মধ্যে শুধু বায়ু দূষণে ৫৫ শতাংশের মৃত্যু হচ্ছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের শহর অঞ্চলে ৮০ হাজার মানুষ পরিবেশ দূষণের কারণে মারা যান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চারশ’ বছরের বেশি পুরনো রাজধানী ঢাকা অনেক আগেই বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এখানের গতি পৃথিবীর অনান্য যে কোন রাজধানীর চেয়ে ধীর।

ঢাকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে ১৬১০ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের আমলে। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ইসলাম খান চিশতি নামে একজন গভর্নর ঢাকাকে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এর নামকরণ করা হয় ‘জাহাঙ্গীরনগর’।

ঢাকার ইতিহাস আরও প্রাচীন। এই অঞ্চলে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা খ্রিস্টপূর্ব সময়কালের। তবে আধুনিক ঢাকা শহর হিসেবে এর বিকাশ মূলত মুঘল আমল থেকে শুরু হয়।

বর্তমানে ঢাকা শহর বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে একটি। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে প্রতি বর্গফুটে প্রায় ছয় হাজার ৩৭৮ জন বসবাস করেন।

এই ঘনত্বের কারণে ঢাকা শহরে যানজট, পরিবেশ দূষণ, আবাসন সংকট এবং অন্যান্য নাগরিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঢাকার জনসংখ্যার এই চাপ শহরের অবকাঠামো ও সম্পদের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে।

দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা হওয়ায়; প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছে কাজের সন্ধানে। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে ঢাকার অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে।

অতিরিক্ত এই জনসংখ্যার কারনে বিশ্বের অনান্য রাজধানীর তুলনায় ঢাকায় যানজটও অনেক বেশি। ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়।

বর্ধিত এই জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে প্রতিদিন ঢাকায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপণা। যে কারনে ঢাকার আশেপাশেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ঢাকা শহরের বায়ূ দূষণের ৫৮ শতাংশ হয় এই ইট ভাটা থেকে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, তিন দশক আগেও ঢাকার মোট আয়তনের ২০ শতাংশের বেশি এলাকায় জলাভূমি ছিল। কমতে কমতে এখন জলাভূমির পরিমাণ ৩ শতাংশের নিচে নেমেছে। অর্থাৎ তিন দশকে ঢাকায় জলাভূমি কমেছে ১৭ শতাংশ।

সংগঠনটি আরো জানায়, কোনো শহরের বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হলে সেই শহরের মোট ভূমির ১৫ শতাংশ সবুজ আচ্ছাদিত রাখতে হয়। ঢাকা শহরে এখন সেটি আছে মাত্র ৯ শতাংশ।

নগর-পরিকল্পনার মানদ- অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাশয়-জলাধার থাকার কথা। কিন্তু বিআইপির গবেষণার দেখা গেছে, ১৯৯৫ সালে ঢাকা শহরে সবুজ এলাকা ও ফাঁকা জায়গা ছিল ৫২ বর্গকিলোমিটারের বেশি। এখন সেটি প্রায় ৪৩ শতাংশ কমে ৩০ বর্গকিলোমিটারের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে ১৯৯৫ সালে ঢাকা শহরের মোট আয়তনের ২০ শতাংশের বেশি ছিল জলাভূমি। এখন তা মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। গত তিন দশকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট জলাভূমির প্রায় ৮৬ শতাংশ ভরাট করা হয়েছে।

বিআইপি’র এই গবেষণা ২০২৩ সালের। এই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে একদিকে সবুজ আচ্ছাদিত এলাকা ও জলাশয় কমেছে, অন্যদিকে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ বেড়েছে। ১৯৯৫ সালের পর থেকে ঢাকায় কংক্রিটের আচ্ছাদন প্রায় ৭৬ শতাংশ বেড়েছে।

বিআইপির গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণহীন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঢাকায় তাপপ্রবাহের প্রভাব অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। এর পেছনে ব্যক্তি, বেসরকারি গোষ্ঠী ও সরকারি সংস্থা সবার দায় রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার আশেপাশে এখনো অসংখ্য শিল্পকারখানা। এগুলো থেকে নির্গত ধোঁয়া ও রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে মিশে মারাত্মক দূষণ সৃষ্টি করছে। অনেক কারখানায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

শেষ কয়েক দশকে উন্নয়নের নামে যেসব কর্মযজ্ঞ হাতে নেয়া হয়েছে; তাও পরিবেশ দূষণের জন্য অধিকাংশ দায়ি। ঢাকা শহরে চলছে ব্যাপক নির্মাণ কাজ। রাস্তা, ফ্লাইওভার, বহুতল ভবন নির্মাণের সময় ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এই ধুলা বাতাসে মিশে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের ফুসফুসে পৌঁছাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

রয়েছে যানবাহনের কালো ধোঁয়ার প্রতিক্রিয়া। ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যানবাহন চলছে, অধিকাংশই পুরনো এবং কার্বন-মনোঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইড নির্গত করে। গাড়ির ইঞ্জিন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া প্রতিনিয়ত বাতাসের গুণমান নষ্ট করছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, দূষিত বাতাসে থাকা ক্ষুদ্র কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, ফুসফুস ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো জরুরি পদক্ষেপ নিলে বছরে ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। সিসা বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। দূষণের ফলে শিশুদের আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে বছরে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট।

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছেন, তাদের লোকবল কম হওয়ায় এনফোর্সমেন্ট কম হচ্ছে। ২০২১-২২ সালে প্রায় দুই হাজার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলেও মাত্র ৪৮ শতাংশ জরিমানা আদায় করা গেছে।