২ টাকা লাভ
অন্যরকম সবজির বাজার!

- সময় ০১:১৩:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪
- / 153
সবজির বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের যেন শেষ নেই। সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের কোনো সরকার। এবার প্রথা বিরোধী হয়ে অন্যরকম এক সবজির বাজারের সন্ধান মিলেছে বাংলাদেশে। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্ররা।
মঙ্গলবার থেকে তারা ন্যায্যমূল্যে কয়েকটি পদের তরিতরকারি বিক্রি শুরু করেছেন। কেজিপ্রতি মাত্র ২ টাকা লাভে এসব পণ্য তারা ভোক্তার কাছে বিক্রি করছেন।
কুমারখালী পৌরসভার হলবাজার-থানা মোড় সড়কে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায়, কয়েকজন ছাত্র হরেকরকম শাক ও সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। পেছনে ব্যানারে লেখা ‘ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রয়।’ সেখানে ক্রেতার ভিড় দেখা যায়।
পৌরসভার দুর্গাপুর এলাকায় থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাহিদা আক্তার। তিনি এসেছিলেন আলু কিনতে। সাহিদা বলেন, ‘বুধবার বাজার থেকে এক কেজি আলু কিনেছিলাম ৭০ টাকায়। আজ ছাত্রদের কাছ থেকে কিনলাম ৬৫ টাকায়।’ পাঁচ টাকা কমে আলু কিনতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এভাবে পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্য তুলে ধরেন কুমারখালী সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফাবিহা ইবনাথ। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ক্রেতাদের জিম্মি করে আসছেন। এতে চড়া দামে সবজি কিনতে বাধ্য হয় মানুষ। বাজারে গেলেই ক্রেতার নাভিশ্বাস ওঠে। বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে ও ক্রেতা-বিক্রেতাকে উৎসাহ দিতেই ন্যায্যমূল্যে এ অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন।
পৌর তহবাজার থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে অবস্থিত দোকানে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। রিপন হোসেন নামে এক ছাত্র বলেন, ‘প্রতিকেজিতে মাত্র ২ টাকা লাভে সবজি বিক্রি করছি। একই সবজি বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা ৮-১০ টাকা লাভ করছেন। আমরা মূলত এ সিন্ডিকেট ভাঙতে চাই।’

আশিকুর রহমান বলেন, প্রতিকেজি আলু ৬৫ টাকা, মরিচ ৯৫ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, পেঁয়াজ ১২৫ টাকা, শসা ৪২ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বাজার দর থেকে এসব পণ্যের দাম ৫-২০ টাকা কম।
তাদের উদ্যোগের প্রশংসা করেন ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বাজার থেকে কম দামে ছাত্রদের কাছ থেকে আলু, পটোল, মরিচ, শসা ও শাক কিনেছেন। তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সীমিত লাভে সবজি বিক্রি করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
অস্থায়ী এ দোকানের ৫০ মিটার দূরেই পৌর তহবাজার। সেখানে প্রতিকেজি আলু ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, শিম ১০০ টাকা, ফুলকপি ১০০ টাকা, ঝিঙে ৪০ টাকা, কচু ৭০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, পেঁয়াজ ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, তারা প্রতিকজি সবজিতে ৮-১০ টাকা লাভ করেন। পাইকারিভাবে কেনা পণ্যে কিছু পচা থাকে, নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় ওজনে কম থাকে। সেজন্য বেশি লাভে বিক্রি করতে হয় বলে দাবি করেন।
ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির স্থানীয় উদ্যোক্তাদের একজন আসাদুজ্জামান আলী। তিনি বলেন, প্রতিদিন ৬৫ কেজি আলু, ২০ কেজি পেঁয়াজ, ৫ কেজি মরিচ, ৫ কেজি করে পটোল, শসা, ঝিঙে ও বেগুন, ১৬ আঁটি করে লাল ও পুঁইশাক এবং ৩ খাঁচি করে ডিম ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছেন।
এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনো কারসাজি হলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।