০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৭৩০ কোটি টাকা কর ফাঁকি, ফারুকী বললেন বৈধ আয়

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৮:০৪:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
  • / 39

প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান

করমুক্ত ও নগদ প্রণোদনার সুযোগ নিয়ে বিদেশ থেকে একজন প্রবাসী ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন বলে গত ১৭ মার্চ এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন। তবে ব্যক্তির নাম ও পরিচায় কিছুই বলেননি তিনি। পরিচয় জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, নাম না বলাই ভালো। অ্যাকশনগুলো নিতে হবে। অ্যাকশন নেওয়ার পরে আপনারা অটোমেটিক্যালি জেনে যাবেন। তবে পরিচয় পাওয়া গেছে সেই আলোচিত ব্যবসায়ীর। তিনি প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। তিনি দাবি করেছেন, এই আয় তার বৈধ, তিনি কোনো কর ফাঁকি দেননি।

এনবিআর চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যের পর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি চার বছর আগের। কোনও প্রবাসী শ্রমিক নয়, চীন থেকে ৭২১ কোটি টাকা প্রবাসী আয়ের নামে অর্থ আনা হয়েছিল। যার মাধ্যমে ১৮০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছিল। মূলত কালো টাকা সাদা করতেই ওই ব্যবসায়ী প্রবাসী আয়ের নাটক সাজিয়েছেন।

সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান নামের ওই ব্যক্তির দেশে আবাসন ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তও ছিলেন ওই ব্যবসায়ী।

এনবিআর সূত্রে আরও জানা যায়, ওই ব্যবসায়ী ঢাকার কর অঞ্চল-৫–এর একজন করদাতা। তিনি বিপুল অর্থ ওয়েজ আর্নাস হিসেবে তার কর নথিতে দেখিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের ওপর কর না থাকায় তিনি বিদেশ থেকে আনা ওই অর্থের ওপর কোনো কর দেননি। বরং উল্টো নগদ প্রণোদনা নিয়েছেন। বর্তমানে ওই ব্যবসায়ীর মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই ফারুকী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

আয়কর গোয়েন্দা তথ্যানুসারে, ফারুকী চীনের নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এবং চায়না শিপবিল্ডিং অ্যান্ড অফশোর ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ পেয়েছেন। ওই অর্থ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রভাবশালীদের হতে পারে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান

এরই মধ্যে ফারুকী হাসান ও তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাব জব্দ করা হয়েছে। আলোচিত ব্যবসায়ী নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে ৭২১ কোটি টাকা এনেছেন। যা থেকে ১৮০ কোটি টাকা কর পরিশোধ করার কথা ছিল। তবে এ বিপুল অর্থের কোনও করই পরিশোধ করা হয়নি।

কর অঞ্চল-৫–এর তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরেই ২৬৯ কোটি টাকা দেশে আসে। তার আগের ২ বছরে যথাক্রমে ৭৭ কোটি ও ৮১ কোটি টাকা এসেছে।

এছাড়া অতীতে আরও ৪ বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। কর নথিতে পুরোটাই প্রবাসী আয় হিসেবে দেখানো হয়। এই সময়ে কর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তা করা হয়। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ কেন প্রবাসী আয়ের আওতায় করমুক্ত রেখে ছেড়ে দেওয়া হলো, তা নিয়ে এনবিআরের কর গোয়েন্দা ইউনিটের তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় হিসেবে ‘৭৩০ কোটি টাকা’ দেশে আনা প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান বলেছেন, বৈধ আয়ের অর্থই তিনি দেশে এনেছেন। নিয়ম মেনে সেই অর্থ আয়কর নথিতেও দেখিয়েছেন। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর থেকে তিনি প্রত্যয়ন সনদও পেয়েছেন।

এ অর্থ দেশে আনার বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। দেশের বাইরে অবস্থানকারী ফারুকী হাসান আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় নিজ থেকেই কীভাবে দেশের বাইরে থেকে এ অর্থ আয় করেছেন এবং কোন প্রক্রিয়ায় তা দেশে এনেছেন, তার বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি জানান, প্রতীক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে এই অর্থ দেশে আনা হয়েছে।

ফারুকী হাসান জানান, তিনি চীনের সরকারি বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের হয়ে এজেন্ট ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চীনের সরকারি বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৫টি জাহাজ কিনেছে। এসব জাহাজ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তিনি এজেন্ট ও পরামর্শক সেবা দেন। তার বিনিময়ে ১৩ বছরে ৭৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ এজেন্ট ও পরামর্শ মাশুল পেয়েছেন। এই আয়ের ওপর চীনে করও পরিশোধ করেছেন। পরে সেই অর্থ প্রবাসী আয় হিসেবে বাংলাদেশে এনেছেন। তবে এ জন্য প্রবাসী আয়ের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা প্রাপ্য হলেও তিনি তা নেননি।

প্রবাসী আয় হিসেবে ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন এক ব্যবসায়ী, সাংবাদিকদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে গত সোমবার এই তথ্য জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। এরপর বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা তৈরি হয়। সাংবাদিকেরাও এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে সাংবাদিকেরা জানতে পারেন বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় হিসেবে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ এনেছেন প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান।

ফারুকী জানান, তাঁর নামে দেশে কোনো ব্যাংকঋণ নেই। চীন থেকে তিনি তাঁর আয়ের অর্থ ইস্টার্ন ব্যাংকের হিসাবের মাধ্যমে বৈধভাবে দেশে এনেছেন। একবারে এই অর্থ তিনি দেশে আনেননি। কয়েক বছর ধরে ধাপে এনেছেন। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আনা অর্থে আমি চারটি কারখানা করেছি। এসব কারখানায় প্রায় তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। যখন যে বছর আমি এই অর্থ এনেছি, প্রতিবারই এনবিআরের পক্ষ থেকে আমাকে প্রত্যয়ন সনদ দেওয়া হয়েছে। এখন কেন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। বিদেশে সেবা দিয়ে দেশে অর্থ এনেছি, এটা তো আমার অপরাধ হতে পারে না।’

সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান জানান, তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি কানাডায়ও বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘আমার আয় কত, তা আয়কর ফাইলে সব দেখানো আছে। কোনো কিছু গোপন করতে চাইলে আমি তা ফাইলে দেখাতাম না। আমি সিরামিক রপ্তানি করে চারবার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হয়েছি। এখন কেন আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে, এটা বুঝতে পারছি না।’ এখন এনবিআরের দিক থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় এনবিআরের সঙ্গে কথা বলতে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। ২০০১ সালে পাড়ি দেন কানাডায়। পরে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা শুরু করেন। একে একে গড়ে তোলেন প্রতীক সিরামিক, প্রতীক ডেভেলপার, হোটেল লেক ক্যাসেল, প্রতীক ফুড অ্যান্ড অ্যালাইড, প্রতীক বোন চায়না লিমিটেড, প্রতীক লজিস্টিক, প্রতীক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, চেরি ইন্টারন্যাশনাল।

কানাডার অন্টারিও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। তবে এখন কোনো পদ নেই। তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে রাজনীতি ছেড়ে পুরোপুরি ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছেন। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কারখানার পাশাপাশি তিনি বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকেরও উদ্যোক্তা পরিচালক।

শেয়ার করুন

৭৩০ কোটি টাকা কর ফাঁকি, ফারুকী বললেন বৈধ আয়

সময় ০৮:০৪:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

করমুক্ত ও নগদ প্রণোদনার সুযোগ নিয়ে বিদেশ থেকে একজন প্রবাসী ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন বলে গত ১৭ মার্চ এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন। তবে ব্যক্তির নাম ও পরিচায় কিছুই বলেননি তিনি। পরিচয় জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, নাম না বলাই ভালো। অ্যাকশনগুলো নিতে হবে। অ্যাকশন নেওয়ার পরে আপনারা অটোমেটিক্যালি জেনে যাবেন। তবে পরিচয় পাওয়া গেছে সেই আলোচিত ব্যবসায়ীর। তিনি প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। তিনি দাবি করেছেন, এই আয় তার বৈধ, তিনি কোনো কর ফাঁকি দেননি।

এনবিআর চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যের পর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি চার বছর আগের। কোনও প্রবাসী শ্রমিক নয়, চীন থেকে ৭২১ কোটি টাকা প্রবাসী আয়ের নামে অর্থ আনা হয়েছিল। যার মাধ্যমে ১৮০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছিল। মূলত কালো টাকা সাদা করতেই ওই ব্যবসায়ী প্রবাসী আয়ের নাটক সাজিয়েছেন।

সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান নামের ওই ব্যক্তির দেশে আবাসন ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তও ছিলেন ওই ব্যবসায়ী।

এনবিআর সূত্রে আরও জানা যায়, ওই ব্যবসায়ী ঢাকার কর অঞ্চল-৫–এর একজন করদাতা। তিনি বিপুল অর্থ ওয়েজ আর্নাস হিসেবে তার কর নথিতে দেখিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের ওপর কর না থাকায় তিনি বিদেশ থেকে আনা ওই অর্থের ওপর কোনো কর দেননি। বরং উল্টো নগদ প্রণোদনা নিয়েছেন। বর্তমানে ওই ব্যবসায়ীর মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই ফারুকী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

আয়কর গোয়েন্দা তথ্যানুসারে, ফারুকী চীনের নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এবং চায়না শিপবিল্ডিং অ্যান্ড অফশোর ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ পেয়েছেন। ওই অর্থ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রভাবশালীদের হতে পারে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান

এরই মধ্যে ফারুকী হাসান ও তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাব জব্দ করা হয়েছে। আলোচিত ব্যবসায়ী নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে ৭২১ কোটি টাকা এনেছেন। যা থেকে ১৮০ কোটি টাকা কর পরিশোধ করার কথা ছিল। তবে এ বিপুল অর্থের কোনও করই পরিশোধ করা হয়নি।

কর অঞ্চল-৫–এর তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরেই ২৬৯ কোটি টাকা দেশে আসে। তার আগের ২ বছরে যথাক্রমে ৭৭ কোটি ও ৮১ কোটি টাকা এসেছে।

এছাড়া অতীতে আরও ৪ বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। কর নথিতে পুরোটাই প্রবাসী আয় হিসেবে দেখানো হয়। এই সময়ে কর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তা করা হয়। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ কেন প্রবাসী আয়ের আওতায় করমুক্ত রেখে ছেড়ে দেওয়া হলো, তা নিয়ে এনবিআরের কর গোয়েন্দা ইউনিটের তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় হিসেবে ‘৭৩০ কোটি টাকা’ দেশে আনা প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান বলেছেন, বৈধ আয়ের অর্থই তিনি দেশে এনেছেন। নিয়ম মেনে সেই অর্থ আয়কর নথিতেও দেখিয়েছেন। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর থেকে তিনি প্রত্যয়ন সনদও পেয়েছেন।

এ অর্থ দেশে আনার বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। দেশের বাইরে অবস্থানকারী ফারুকী হাসান আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় নিজ থেকেই কীভাবে দেশের বাইরে থেকে এ অর্থ আয় করেছেন এবং কোন প্রক্রিয়ায় তা দেশে এনেছেন, তার বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি জানান, প্রতীক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে এই অর্থ দেশে আনা হয়েছে।

ফারুকী হাসান জানান, তিনি চীনের সরকারি বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের হয়ে এজেন্ট ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চীনের সরকারি বিভিন্ন জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৫টি জাহাজ কিনেছে। এসব জাহাজ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তিনি এজেন্ট ও পরামর্শক সেবা দেন। তার বিনিময়ে ১৩ বছরে ৭৩০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ এজেন্ট ও পরামর্শ মাশুল পেয়েছেন। এই আয়ের ওপর চীনে করও পরিশোধ করেছেন। পরে সেই অর্থ প্রবাসী আয় হিসেবে বাংলাদেশে এনেছেন। তবে এ জন্য প্রবাসী আয়ের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা প্রাপ্য হলেও তিনি তা নেননি।

প্রবাসী আয় হিসেবে ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন এক ব্যবসায়ী, সাংবাদিকদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে গত সোমবার এই তথ্য জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। এরপর বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা তৈরি হয়। সাংবাদিকেরাও এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে সাংবাদিকেরা জানতে পারেন বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় হিসেবে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ এনেছেন প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান।

ফারুকী জানান, তাঁর নামে দেশে কোনো ব্যাংকঋণ নেই। চীন থেকে তিনি তাঁর আয়ের অর্থ ইস্টার্ন ব্যাংকের হিসাবের মাধ্যমে বৈধভাবে দেশে এনেছেন। একবারে এই অর্থ তিনি দেশে আনেননি। কয়েক বছর ধরে ধাপে এনেছেন। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আনা অর্থে আমি চারটি কারখানা করেছি। এসব কারখানায় প্রায় তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। যখন যে বছর আমি এই অর্থ এনেছি, প্রতিবারই এনবিআরের পক্ষ থেকে আমাকে প্রত্যয়ন সনদ দেওয়া হয়েছে। এখন কেন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। বিদেশে সেবা দিয়ে দেশে অর্থ এনেছি, এটা তো আমার অপরাধ হতে পারে না।’

সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান জানান, তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি কানাডায়ও বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘আমার আয় কত, তা আয়কর ফাইলে সব দেখানো আছে। কোনো কিছু গোপন করতে চাইলে আমি তা ফাইলে দেখাতাম না। আমি সিরামিক রপ্তানি করে চারবার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হয়েছি। এখন কেন আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে, এটা বুঝতে পারছি না।’ এখন এনবিআরের দিক থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় এনবিআরের সঙ্গে কথা বলতে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসানের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। ২০০১ সালে পাড়ি দেন কানাডায়। পরে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা শুরু করেন। একে একে গড়ে তোলেন প্রতীক সিরামিক, প্রতীক ডেভেলপার, হোটেল লেক ক্যাসেল, প্রতীক ফুড অ্যান্ড অ্যালাইড, প্রতীক বোন চায়না লিমিটেড, প্রতীক লজিস্টিক, প্রতীক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, চেরি ইন্টারন্যাশনাল।

কানাডার অন্টারিও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। তবে এখন কোনো পদ নেই। তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে রাজনীতি ছেড়ে পুরোপুরি ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছেন। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কারখানার পাশাপাশি তিনি বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকেরও উদ্যোক্তা পরিচালক।