১১:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলন্ত বাসে ধর্ষণকাণ্ড: প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর
  • সময় ০৪:৪০:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 63

চলন্তবাসে ডাকাতি-ধর্ষণ

ঢাকা-রাজশাহী রুটের একটি বাসে সংঘটিত ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের ধর্ষণের ঘটনার তিন দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করা হয়। তবে পাওয়া গেছে সেই বাসের একজন প্রতক্ষ্যদর্শীর বক্তব্য। যেখানে তিনি তুলে ধরেছেন ঘটনার বিবরণ।

সোহাগ হাসান এক যাত্রী বলেন, ওই দুই নারীর সিট ছিল বাসের মাঝামাঝি। এক নারীর সাথে তার স্বামীও ছিলেন।

ডাকাতরা প্রথমে ওই নারীর কাছে যা যা ছিল, সব নিয়ে নেয়। এরপর চিকন করে একজন ছেলে আমাদের সামনেই ওই নারীকে টানতে টানতে জোর করে পেছনের সিটে নিয়ে চলে যায়। ওর স্বামী বাধা দিতে গেলে স্বামীকে অনেক মারধর করে। পিছনে নিয়ে গেলে ওই নারী অনেক চিৎকার করছিল। ওদিকে আমাদের যেতে দিচ্ছিল না। আমরা শুধু চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। জোরে জোরে কাঁদছিল। কিন্তু ওখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না।

একটু থেমে তিনি আরও বলেন, ধর্ষণ না করলে কেউ এরকম চিৎকার করবে না।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলছেন, নারী যাত্রীদের নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনার কথা কেউ তাকে বলেননি। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
তবে, আজ শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা ওমর আলী মামলাটি করেন। মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশাররফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ধর্ষণ
চলন্তবাসে ধর্ষণ: তিন দিন পর মামলা

এ ঘটনায় বাসটি আটক করে পুলিশ। ওই বাসের যাত্রী সোহাগ হোসেন, ওমর আলী, মজনু আকন্দ (৭৩) এবং তাদের ব্যবসায়িক অংশীদার আবু হানিফ বাস আটকানোর পর থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বড়াইগ্রাম থানায় অবস্থান করছিলেন। তারা মামলা করতে চাইছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থল মির্জাপুর থানা এলাকা হওয়ায় সেখানেই মামলা হবে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার সময় ওমর আলী বলেন, নাটোরের পুলিশ সুপার তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে নিয়ে গেছেন। মির্জাপুর থানার পুলিশ বড়াইগ্রাম থানার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। খবর বিবিসি বাংলার

পরে এ ঘটনায় শুক্রবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় বাসযাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত সোমবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস্ পরিবহনের বাসে টিকিট কেটে বাসে উঠি, যার নম্বর ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১। বাসটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ছাড়ার সময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল।

রাত ১টার দিকে বাসটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে এসে চা পানের বিরতির দেয়। এ সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও ৩ থেকে ৪ জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।

রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮/৯ জন ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারাল চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে। এর মধ্যে তিনজন বাসটির ড্রাইভারের গলায় ধারাল চাকু ধরে নিয়ন্ত্রণ নেয়।

এক পর্যায়ে তারা ধারাল চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গাড়িতে থাকা সব যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার, রূপা নিতে থাকে। এ সময় ২ থেকে ৩ জন ডাকাত গাড়িতে থাকা অজ্ঞাতনামা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানির পর ধর্ষণ করে। পরে ডাকাতরা বাসটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে সেখানে নামিয়ে দেয়।

শেয়ার করুন

চলন্ত বাসে ধর্ষণকাণ্ড: প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

সময় ০৪:৪০:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঢাকা-রাজশাহী রুটের একটি বাসে সংঘটিত ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের ধর্ষণের ঘটনার তিন দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করা হয়। তবে পাওয়া গেছে সেই বাসের একজন প্রতক্ষ্যদর্শীর বক্তব্য। যেখানে তিনি তুলে ধরেছেন ঘটনার বিবরণ।

সোহাগ হাসান এক যাত্রী বলেন, ওই দুই নারীর সিট ছিল বাসের মাঝামাঝি। এক নারীর সাথে তার স্বামীও ছিলেন।

ডাকাতরা প্রথমে ওই নারীর কাছে যা যা ছিল, সব নিয়ে নেয়। এরপর চিকন করে একজন ছেলে আমাদের সামনেই ওই নারীকে টানতে টানতে জোর করে পেছনের সিটে নিয়ে চলে যায়। ওর স্বামী বাধা দিতে গেলে স্বামীকে অনেক মারধর করে। পিছনে নিয়ে গেলে ওই নারী অনেক চিৎকার করছিল। ওদিকে আমাদের যেতে দিচ্ছিল না। আমরা শুধু চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। জোরে জোরে কাঁদছিল। কিন্তু ওখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না।

একটু থেমে তিনি আরও বলেন, ধর্ষণ না করলে কেউ এরকম চিৎকার করবে না।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলছেন, নারী যাত্রীদের নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনার কথা কেউ তাকে বলেননি। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
তবে, আজ শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা ওমর আলী মামলাটি করেন। মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশাররফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ধর্ষণ
চলন্তবাসে ধর্ষণ: তিন দিন পর মামলা

এ ঘটনায় বাসটি আটক করে পুলিশ। ওই বাসের যাত্রী সোহাগ হোসেন, ওমর আলী, মজনু আকন্দ (৭৩) এবং তাদের ব্যবসায়িক অংশীদার আবু হানিফ বাস আটকানোর পর থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বড়াইগ্রাম থানায় অবস্থান করছিলেন। তারা মামলা করতে চাইছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থল মির্জাপুর থানা এলাকা হওয়ায় সেখানেই মামলা হবে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার সময় ওমর আলী বলেন, নাটোরের পুলিশ সুপার তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে নিয়ে গেছেন। মির্জাপুর থানার পুলিশ বড়াইগ্রাম থানার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। খবর বিবিসি বাংলার

পরে এ ঘটনায় শুক্রবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় বাসযাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত সোমবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস্ পরিবহনের বাসে টিকিট কেটে বাসে উঠি, যার নম্বর ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১। বাসটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ছাড়ার সময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল।

রাত ১টার দিকে বাসটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে এসে চা পানের বিরতির দেয়। এ সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও ৩ থেকে ৪ জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।

রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮/৯ জন ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারাল চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে। এর মধ্যে তিনজন বাসটির ড্রাইভারের গলায় ধারাল চাকু ধরে নিয়ন্ত্রণ নেয়।

এক পর্যায়ে তারা ধারাল চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গাড়িতে থাকা সব যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার, রূপা নিতে থাকে। এ সময় ২ থেকে ৩ জন ডাকাত গাড়িতে থাকা অজ্ঞাতনামা নারী যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানির পর ধর্ষণ করে। পরে ডাকাতরা বাসটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে সেখানে নামিয়ে দেয়।