১০:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটছে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • সময় ০৭:৪২:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
  • / 20

তুরস্ক সরকার এবং কুর্দি ওয়ার্কার্স পার্টি

তুরস্ক সরকার এবং কুর্দি ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) এর মধ্যে চলমান ৪০ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান হতে চলেছে। পিকেকের কারাবন্দী নেতা আবদুল্লা ওচালানের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বানের পর এই যুদ্ধের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

১ মার্চ পিকেকে একটি বিবৃতিতে জানায়, তারা আশা করছে যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী ওচালানকে মুক্তি দেয়া হবে। মুক্তি পেয়ে তিনি এই নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেবেন।

১৯৯৯ সাল থেকে কারাবন্দী থাকা এই নেতার আহ্বানে পিকেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

১৯৮৪ সালে কুর্দি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী পিকেকে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কুর্দিদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। এই সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

পিকেকে শুরুতে বিচ্ছিন্নতাবাদী লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে তারা তাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করে দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়ায় কুর্দিদের জন্য স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের দাবি জানায়।

তুরস্ক সরকার পিকেকেকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক অভিযান চালায়। পিকেকের সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীগুলো তুরস্কের সেনা ও সামরিক অবকাঠামোর উপর গাড়ি বোমা ও অন্যান্য হামলা চালিয়ে আসছে।

আবদুল্লা ওচালান পিকেকের প্রতিষ্ঠাতা নেতা এবং কুর্দি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৯ সালে তিনি তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং এরপর থেকে কারাবন্দী রয়েছেন।

কারাগার থেকেই তিনি পিকেকের কৌশল ও লক্ষ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সম্প্রতি তিনি পিকেকেকে অস্ত্র সমর্পণ এবং সংগঠনটি বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার এই আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে পিকেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

পিকেকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শান্তি ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার যে আহ্বান আমাদের নেতা জানিয়েছেন, তার প্রতি সম্মান রেখে আমরা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করছি। আমাদের কোনো সেনা আক্রান্ত না হলে সশস্ত্র কোনো পদক্ষেপ নেবে না।’

এই ঘোষণা তুরস্ক ও কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে তুরস্ক সরকার এখনও পিকেকের এই ঘোষণাকে সতর্কতার সঙ্গে দেখছে এবং ওচালানের মুক্তির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

তুরস্কের পাশাপাশি পিকেকের কার্যক্রম সিরিয়া ও ইরাকেও বিস্তৃত। তুরস্ক এবং তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো পিকেকেকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। পিকেকের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে।

অনেকেই আশা করছেন, এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী শান্তির পথ প্রশস্ত করবে এবং কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

শেয়ার করুন

৪০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটছে!

সময় ০৭:৪২:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

তুরস্ক সরকার এবং কুর্দি ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) এর মধ্যে চলমান ৪০ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান হতে চলেছে। পিকেকের কারাবন্দী নেতা আবদুল্লা ওচালানের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বানের পর এই যুদ্ধের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

১ মার্চ পিকেকে একটি বিবৃতিতে জানায়, তারা আশা করছে যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী ওচালানকে মুক্তি দেয়া হবে। মুক্তি পেয়ে তিনি এই নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেবেন।

১৯৯৯ সাল থেকে কারাবন্দী থাকা এই নেতার আহ্বানে পিকেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

১৯৮৪ সালে কুর্দি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী পিকেকে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কুর্দিদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। এই সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

পিকেকে শুরুতে বিচ্ছিন্নতাবাদী লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে তারা তাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করে দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়ায় কুর্দিদের জন্য স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের দাবি জানায়।

তুরস্ক সরকার পিকেকেকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক অভিযান চালায়। পিকেকের সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীগুলো তুরস্কের সেনা ও সামরিক অবকাঠামোর উপর গাড়ি বোমা ও অন্যান্য হামলা চালিয়ে আসছে।

আবদুল্লা ওচালান পিকেকের প্রতিষ্ঠাতা নেতা এবং কুর্দি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৯ সালে তিনি তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন এবং এরপর থেকে কারাবন্দী রয়েছেন।

কারাগার থেকেই তিনি পিকেকের কৌশল ও লক্ষ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সম্প্রতি তিনি পিকেকেকে অস্ত্র সমর্পণ এবং সংগঠনটি বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার এই আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে পিকেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

পিকেকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শান্তি ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার যে আহ্বান আমাদের নেতা জানিয়েছেন, তার প্রতি সম্মান রেখে আমরা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করছি। আমাদের কোনো সেনা আক্রান্ত না হলে সশস্ত্র কোনো পদক্ষেপ নেবে না।’

এই ঘোষণা তুরস্ক ও কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তবে তুরস্ক সরকার এখনও পিকেকের এই ঘোষণাকে সতর্কতার সঙ্গে দেখছে এবং ওচালানের মুক্তির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

তুরস্কের পাশাপাশি পিকেকের কার্যক্রম সিরিয়া ও ইরাকেও বিস্তৃত। তুরস্ক এবং তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো পিকেকেকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। পিকেকের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে।

অনেকেই আশা করছেন, এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী শান্তির পথ প্রশস্ত করবে এবং কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।