১০:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এক মাসের আগেই

সেকেন্ড রিপাবলিক ভুলেই গেছে এনসিপি!

সিনিয়র প্রতিবেদক
  • সময় ১০:১৭:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
  • / 9

সেকেন্ড রিপাবলিক

আত্মপ্রকাশের এক মাসও পূর্ণ হয়নি নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। শুরুতেই দলটি জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন করে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার সংকল্প তুলে ধরেছিল। কিন্তু এক মাস পূর্ণ করার আগেই বিষয়টি বেমালুম ভুলেই গেছে দলটি।

এ মুহুর্তে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শুরু থেকেই সেকেন্ড রিপাবলিক নিয়ে বিরোধিতা করেছিল। ফলে নতুন দলের কোনো দায়িত্বশীল নেতাই গত দুই সপ্তাহ ধরে সেকেন্ড রিপাবলিক নিয়ে কোনো টুঁ শব্দও করছেন না। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির কয়েকজন নেতা কথা বলেছেন সরাসরি। এরপর থেকেই তারা চুপ হয়ে গেছেন।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ এবং ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিএনপি। তিনি বলেছেন, “যারা এই ধারণা সামনে এনেছে, তারা হয় বিষয়টি বুঝতে পারেনি, নয়তো এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরও দীর্ঘায়িত করে অগণতান্ত্রিক পথে চালিত করার ষড়যন্ত্র।”

এছাড়া, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আইন সংস্কারের জন্য নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো আইন সংস্কার সম্ভব নয়। এজন্য আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন। সেকেন্ড রিপাবলিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাপেরই যদি জন্ম না হয়, সন্তানের জন্ম কীভাবে হবে?”

উল্লেখ্য, সেকেন্ড রিপাবলিক বা দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র হলো একটি রাজনৈতিক ধারণা, যা একটি দেশের ইতিহাসে নতুন শাসনব্যবস্থার সূচনাকে নির্দেশ করে। এটি সাধারণত তখনই ব্যবহৃত হয় যখন কোনো দেশে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক ব্যবস্থার অবসান ঘটে এবং নতুন একটি প্রজাতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ধারণাটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ হয়েছে, এবং প্রতিটি দেশের প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য আলাদা।

জাতীয় নাগরিক পার্টি
জাতীয় নাগরিক পার্টি

ফ্রান্সের ইতিহাসে সেকেন্ড রিপাবলিক একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৭৯২ সালে ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সে প্রথম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৮৪৮ সালে ফ্রান্সে আবারও একটি বিপ্লব সংঘটিত হয়, যার ফলে রাজা লুই ফিলিপ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই প্রজাতন্ত্রের শাসনকাল ছিল মাত্র চার বছর, ১৮৫২ সালে নেপোলিয়ন তৃতীয় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দ্বিতীয় ফরাসি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ফ্রান্সের সেকেন্ড রিপাবলিক যদিও সংক্ষিপ্ত ছিল, কিন্তু এটি ফ্রান্সের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তন এনেছিল।

ইরানের ইতিহাসেও সেকেন্ড রিপাবলিকের ধারণা পাওয়া যায়। ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের মাধ্যমে শাহ মোহাম্মদ রেজা পহলভির রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। প্রথমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও, আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই পরিবর্তনকে অনেকেই ইরানের সেকেন্ড রিপাবলিক হিসেবে চিহ্নিত করেন। এই নতুন শাসনব্যবস্থা ইরানের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়।

ভেনিজুয়েলার ইতিহাসেও সেকেন্ড রিপাবলিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রয়েছে। ১৮১৩ সালে সিমন বলিভারের নেতৃত্বে স্পেনের উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু হয়। এই সময়ে ভেনিজুয়েলায় একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়, যা সেকেন্ড রিপাবলিক নামে পরিচিত।

কিন্তু ১৮১৪ সালে স্পেনীয় সেনাবাহিনী ভেনিজুয়েলার শাসন পুনরুদ্ধার করে এবং এই প্রজাতন্ত্রের অবসান ঘটে। যদিও এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল, তবুও এটি ভেনিজুয়েলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

বাংলাদেশেও সেকেন্ড রিপাবলিকের ধারণা আলোচিত হচ্ছে গত অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তোলার সময় থেকে। ওই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে পাঁচ দফা দিয়েছিল, সেখানে প্রথম ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সামনে আনা হয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টি
জাতীয় নাগরিক পার্টি

ফ্রান্স সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্বের সংবিধান এবং রাষ্ট্রকাঠামোকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এনসিপি; তারা পূর্বের সংবিধানের ওপর ভর করেই ইতোমধ্যে যাত্রা শুরু করেছে। এবং এখন নতুন করে সংস্কার চাইছে।

এক্ষেত্রে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিটির সুপারিশগুলোকে ভিত্তি ধরে গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রচেষ্টা চালানোর কথা বলছেন। গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান রচনা করতে চাইছেন তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সেকেন্ড রিপাবলিক মানে হল, বাংলাদেশে গত ৫৩ বছরের যা আছে, সেটাকে মুছে ফেলে নতুন শপথ নিয়ে নতুন অঙ্গীকারে যাত্রা শুরু করা। এটাতে সংবিধান আসবে, রাষ্ট্রকাঠামো আসবে- অর্থাৎ, নবযাত্রা।

সেকেন্ড রিপাবলিক বা দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের ধারণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ হয়েছে। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনই নয়, বরং একটি দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়।

তবে বাংলাদেশে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা দরকার। যেটা নির্বাচনের আগে সম্ভব না। কেনননা বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এই তত্ত্বে বিশ্বাস করে না।

এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি পক্ষ থেকে এক মাসের মধ্যেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ এই তত্ত্ব ভুলে যাওয়ার পিছনে কি কারণ রয়েছে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন; দলটি এখনো পর্যন্ত নিবন্ধিত নয়। এমনকি তাদের রাজনৈতিক ভিশন-মিশন জনগণের সামনে সুস্পষ্ট নয়। কারণ তাদের গঠনতন্ত্রই এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তারা সেকেন্ড রিপাবলিক ভুলে গেছে, সামনে হয়তো আরো অনেক কিছুই ভুলে যাবে। এক্ষেত্রে বিএনপির চাপও হয়তো তারা সহ্য করতে পারেনি, এমনটাও হতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন

এক মাসের আগেই

সেকেন্ড রিপাবলিক ভুলেই গেছে এনসিপি!

সময় ১০:১৭:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

আত্মপ্রকাশের এক মাসও পূর্ণ হয়নি নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। শুরুতেই দলটি জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন করে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার সংকল্প তুলে ধরেছিল। কিন্তু এক মাস পূর্ণ করার আগেই বিষয়টি বেমালুম ভুলেই গেছে দলটি।

এ মুহুর্তে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শুরু থেকেই সেকেন্ড রিপাবলিক নিয়ে বিরোধিতা করেছিল। ফলে নতুন দলের কোনো দায়িত্বশীল নেতাই গত দুই সপ্তাহ ধরে সেকেন্ড রিপাবলিক নিয়ে কোনো টুঁ শব্দও করছেন না। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির কয়েকজন নেতা কথা বলেছেন সরাসরি। এরপর থেকেই তারা চুপ হয়ে গেছেন।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ এবং ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিএনপি। তিনি বলেছেন, “যারা এই ধারণা সামনে এনেছে, তারা হয় বিষয়টি বুঝতে পারেনি, নয়তো এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরও দীর্ঘায়িত করে অগণতান্ত্রিক পথে চালিত করার ষড়যন্ত্র।”

এছাড়া, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আইন সংস্কারের জন্য নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো আইন সংস্কার সম্ভব নয়। এজন্য আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন। সেকেন্ড রিপাবলিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাপেরই যদি জন্ম না হয়, সন্তানের জন্ম কীভাবে হবে?”

উল্লেখ্য, সেকেন্ড রিপাবলিক বা দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র হলো একটি রাজনৈতিক ধারণা, যা একটি দেশের ইতিহাসে নতুন শাসনব্যবস্থার সূচনাকে নির্দেশ করে। এটি সাধারণত তখনই ব্যবহৃত হয় যখন কোনো দেশে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক ব্যবস্থার অবসান ঘটে এবং নতুন একটি প্রজাতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ধারণাটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ হয়েছে, এবং প্রতিটি দেশের প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য আলাদা।

জাতীয় নাগরিক পার্টি
জাতীয় নাগরিক পার্টি

ফ্রান্সের ইতিহাসে সেকেন্ড রিপাবলিক একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৭৯২ সালে ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সে প্রথম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৮৪৮ সালে ফ্রান্সে আবারও একটি বিপ্লব সংঘটিত হয়, যার ফলে রাজা লুই ফিলিপ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই প্রজাতন্ত্রের শাসনকাল ছিল মাত্র চার বছর, ১৮৫২ সালে নেপোলিয়ন তৃতীয় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দ্বিতীয় ফরাসি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ফ্রান্সের সেকেন্ড রিপাবলিক যদিও সংক্ষিপ্ত ছিল, কিন্তু এটি ফ্রান্সের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তন এনেছিল।

ইরানের ইতিহাসেও সেকেন্ড রিপাবলিকের ধারণা পাওয়া যায়। ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের মাধ্যমে শাহ মোহাম্মদ রেজা পহলভির রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। প্রথমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও, আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই পরিবর্তনকে অনেকেই ইরানের সেকেন্ড রিপাবলিক হিসেবে চিহ্নিত করেন। এই নতুন শাসনব্যবস্থা ইরানের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়।

ভেনিজুয়েলার ইতিহাসেও সেকেন্ড রিপাবলিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রয়েছে। ১৮১৩ সালে সিমন বলিভারের নেতৃত্বে স্পেনের উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু হয়। এই সময়ে ভেনিজুয়েলায় একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়, যা সেকেন্ড রিপাবলিক নামে পরিচিত।

কিন্তু ১৮১৪ সালে স্পেনীয় সেনাবাহিনী ভেনিজুয়েলার শাসন পুনরুদ্ধার করে এবং এই প্রজাতন্ত্রের অবসান ঘটে। যদিও এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল, তবুও এটি ভেনিজুয়েলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

বাংলাদেশেও সেকেন্ড রিপাবলিকের ধারণা আলোচিত হচ্ছে গত অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তোলার সময় থেকে। ওই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে পাঁচ দফা দিয়েছিল, সেখানে প্রথম ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সামনে আনা হয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টি
জাতীয় নাগরিক পার্টি

ফ্রান্স সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্বের সংবিধান এবং রাষ্ট্রকাঠামোকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এনসিপি; তারা পূর্বের সংবিধানের ওপর ভর করেই ইতোমধ্যে যাত্রা শুরু করেছে। এবং এখন নতুন করে সংস্কার চাইছে।

এক্ষেত্রে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিটির সুপারিশগুলোকে ভিত্তি ধরে গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রচেষ্টা চালানোর কথা বলছেন। গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান রচনা করতে চাইছেন তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সেকেন্ড রিপাবলিক মানে হল, বাংলাদেশে গত ৫৩ বছরের যা আছে, সেটাকে মুছে ফেলে নতুন শপথ নিয়ে নতুন অঙ্গীকারে যাত্রা শুরু করা। এটাতে সংবিধান আসবে, রাষ্ট্রকাঠামো আসবে- অর্থাৎ, নবযাত্রা।

সেকেন্ড রিপাবলিক বা দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের ধারণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ হয়েছে। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনই নয়, বরং একটি দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়।

তবে বাংলাদেশে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা দরকার। যেটা নির্বাচনের আগে সম্ভব না। কেনননা বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এই তত্ত্বে বিশ্বাস করে না।

এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি পক্ষ থেকে এক মাসের মধ্যেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ এই তত্ত্ব ভুলে যাওয়ার পিছনে কি কারণ রয়েছে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন; দলটি এখনো পর্যন্ত নিবন্ধিত নয়। এমনকি তাদের রাজনৈতিক ভিশন-মিশন জনগণের সামনে সুস্পষ্ট নয়। কারণ তাদের গঠনতন্ত্রই এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তারা সেকেন্ড রিপাবলিক ভুলে গেছে, সামনে হয়তো আরো অনেক কিছুই ভুলে যাবে। এক্ষেত্রে বিএনপির চাপও হয়তো তারা সহ্য করতে পারেনি, এমনটাও হতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।