সড়কে মৃত্যুর মিছিলে সামিল সাংবাদিক মাসুমা

- সময় ০৫:২৩:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 38
সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়ছে। গত এক মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩২৭ জনেরও বেশি (নিসচা)। সেই মর্মান্তিক তালিকায় এবার সামিল হলো রাজশাহীর সাংবাদিক মাসুমা ইসলামের (৩০) নাম। কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর দীর্ঘ লড়াই শেষে মঙ্গলবার (ভোর সাড়ে ৪টা) রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মাসুমা ইসলাম বেসরকারি টেলিভিশন এখন টিভির রাজশাহী ব্যুরো অফিসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। বাবা-মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র মেয়ে। রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করা মাসুমা শিক্ষাজীবন থেকেই সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন এবং পরে এটিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন।
২০২৩ সালের শেষের দিকে বিয়ে করে রাজশাহীতে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছিলেন মাসুমা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কুমিল্লায় শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নূরজাহান হোটেলের উল্টোদিকে বাস থেকে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঠিক করার সময় একটি দ্রুতগামী বাস তাঁদের ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশার চালক, মাসুমা ইসলাম ও তাঁর স্বামী গুরুতর আহত হন।
তৎক্ষণাৎ মাসুমাকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। টানা চার দিন চিকিৎসার পরও বাঁচানো যায়নি এই তরুণ সাংবাদিককে।
এখন টিভির রাজশাহী ব্যুরোপ্রধান রাকিবুল হাসান জানিয়েছেন, মাসুমার মরদেহ রাজধানীর বাবর রোডে মারকাজুল ইসলামে এ গোসল করানো হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিজ গ্রাম নাটোরের গুরুদাসপুরে, যেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
সাংবাদিকতা জগতে কঠোর পরিশ্রম ও বিনয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন মাসুমা ইসলাম। তাঁর অকালমৃত্যু রাজশাহীর সাংবাদিক মহলে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁর স্মৃতিচারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই ঝরছে মূল্যবান প্রাণ। মাসুমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আবারও উঠে এল নিরাপদ সড়কের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি। তাঁর মতো মেধাবী ও প্রতিশ্রুতিশীল মানুষদের এভাবে অকালে হারিয়ে যাওয়া যে কতটা বেদনাদায়ক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।