০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিশরে আরেক ফেরাউনের সমাধির খোঁজ মিলেছে

আকাশ ইসলাম
  • সময় ১০:৩০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 63

মিশরে আরেক ফেরাউনের সমাধির খোঁজ মিলেছে

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে ফেরাউন দ্বিতীয় থুতমোসের সমাধি। বৃটেন ও মিশরের যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক দল এই আবিষ্কারটি করেছে, যা মিশরের প্রত্নতত্ত্ব গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক। প্রায় এক শতাব্দী পর লুক্সরের রাজাদের উপত্যকায় আবিষ্কৃত এই সমাধি ইতিহাসবিদদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

মিশরের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় জানানো হয়েছে, সমাধির অভ্যন্তরে পাওয়া অ্যালাব্যাস্টার পাত্রে দ্বিতীয় থুতমোস ও তার স্ত্রী রানি হাতশেপসুতের নাম খোদাই করা ছিল। এই শিলালিপির ভিত্তিতেই প্রত্নতত্ত্ববিদরা নিশ্চিত হন যে এটি দ্বিতীয় থুতমোসের রাজকীয় সমাধি।

দ্বিতীয় থুতমোস ছিলেন মিশরের অষ্টাদশ রাজবংশের একজন ফেরাউন। তার স্ত্রী, রানি হাতশেপসুত, মিশরের ইতিহাসে স্বল্প সংখ্যক নারী শাসকের একজন ছিলেন। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে একজন রানির মর্যাদা পেয়েছিলেন, পরবর্তীতে তিনি নিজেকে ফেরাউন হিসেবে ঘোষণা করেন এবং দীর্ঘদিন মিশর শাসন করেন।

সমাধির অভ্যন্তরে পাওয়া রাজকীয় দাফন সামগ্রীর মধ্যে নীল রঙের লিপি, হলুদ রঙের তারা এবং ধর্মীয় লেখাযুক্ত ধাতব বস্তু পাওয়া গেছে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, রাজা দ্বিতীয় থুতমোসের মৃত্যুর পর এক ভয়াবহ বন্যার ফলে সমাধিটি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এছাড়া, সমাধির বেশিরভাগ দ্রব্য স্থানান্তরিত হয়ে গেছে বলে বিশ্লেষণে জানা গেছে, যা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চলছে। এর আগে ১৯২২ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক হাওয়ার্ড কার্টার ফারাও তুতেনখামুনের সমাধিস্থল আবিষ্কার করেন, যা মিশরের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এক যুগান্তকারী ঘটনা ছিল। তুতেনখামুনের সমাধি থেকে পাওয়া অমূল্য নিদর্শন গবেষণার এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছিল।

প্রথমদিকে মনে করা হতো, তুতেনখামুন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন, কারণ এক্স-রে রিপোর্টে তার মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত জমাট বাঁধার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, তিনি ম্যালেরিয়ার সংক্রমণের কারণে মারা যান।

গবেষকরা মনে করেন, তুতেনখামুনের বাবা-মা পরস্পর ভাই-বোন ছিলেন, যার ফলে তার জিনগত জটিলতা তৈরি হয় এবং তিনি রক্তের রোগে আক্রান্ত হন।

ফেরাউন দ্বিতীয় থুতমোসের সমাধির আবিষ্কার প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এটি মিশরীয় রাজবংশের ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য উন্মোচনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি, সমাধির ভেতরে থাকা নিদর্শনগুলো মিশরীয় ধর্ম, সংস্কৃতি এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে পারে।

মিশরের এই নতুন আবিষ্কার শুধু ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্যই এক মূল্যবান উপহার।

শেয়ার করুন

মিশরে আরেক ফেরাউনের সমাধির খোঁজ মিলেছে

সময় ১০:৩০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে ফেরাউন দ্বিতীয় থুতমোসের সমাধি। বৃটেন ও মিশরের যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক দল এই আবিষ্কারটি করেছে, যা মিশরের প্রত্নতত্ত্ব গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক। প্রায় এক শতাব্দী পর লুক্সরের রাজাদের উপত্যকায় আবিষ্কৃত এই সমাধি ইতিহাসবিদদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

মিশরের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় জানানো হয়েছে, সমাধির অভ্যন্তরে পাওয়া অ্যালাব্যাস্টার পাত্রে দ্বিতীয় থুতমোস ও তার স্ত্রী রানি হাতশেপসুতের নাম খোদাই করা ছিল। এই শিলালিপির ভিত্তিতেই প্রত্নতত্ত্ববিদরা নিশ্চিত হন যে এটি দ্বিতীয় থুতমোসের রাজকীয় সমাধি।

দ্বিতীয় থুতমোস ছিলেন মিশরের অষ্টাদশ রাজবংশের একজন ফেরাউন। তার স্ত্রী, রানি হাতশেপসুত, মিশরের ইতিহাসে স্বল্প সংখ্যক নারী শাসকের একজন ছিলেন। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে একজন রানির মর্যাদা পেয়েছিলেন, পরবর্তীতে তিনি নিজেকে ফেরাউন হিসেবে ঘোষণা করেন এবং দীর্ঘদিন মিশর শাসন করেন।

সমাধির অভ্যন্তরে পাওয়া রাজকীয় দাফন সামগ্রীর মধ্যে নীল রঙের লিপি, হলুদ রঙের তারা এবং ধর্মীয় লেখাযুক্ত ধাতব বস্তু পাওয়া গেছে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, রাজা দ্বিতীয় থুতমোসের মৃত্যুর পর এক ভয়াবহ বন্যার ফলে সমাধিটি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এছাড়া, সমাধির বেশিরভাগ দ্রব্য স্থানান্তরিত হয়ে গেছে বলে বিশ্লেষণে জানা গেছে, যা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চলছে। এর আগে ১৯২২ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক হাওয়ার্ড কার্টার ফারাও তুতেনখামুনের সমাধিস্থল আবিষ্কার করেন, যা মিশরের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এক যুগান্তকারী ঘটনা ছিল। তুতেনখামুনের সমাধি থেকে পাওয়া অমূল্য নিদর্শন গবেষণার এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছিল।

প্রথমদিকে মনে করা হতো, তুতেনখামুন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন, কারণ এক্স-রে রিপোর্টে তার মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত জমাট বাঁধার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, তিনি ম্যালেরিয়ার সংক্রমণের কারণে মারা যান।

গবেষকরা মনে করেন, তুতেনখামুনের বাবা-মা পরস্পর ভাই-বোন ছিলেন, যার ফলে তার জিনগত জটিলতা তৈরি হয় এবং তিনি রক্তের রোগে আক্রান্ত হন।

ফেরাউন দ্বিতীয় থুতমোসের সমাধির আবিষ্কার প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় নতুন দিক উন্মোচন করেছে। এটি মিশরীয় রাজবংশের ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য উন্মোচনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি, সমাধির ভেতরে থাকা নিদর্শনগুলো মিশরীয় ধর্ম, সংস্কৃতি এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে পারে।

মিশরের এই নতুন আবিষ্কার শুধু ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্যই এক মূল্যবান উপহার।