মাঘী পূর্ণিমা: হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র উৎসব

- সময় ১১:৩৩:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
- / 74
মাঘী পূর্ণিমা হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক বিশেষ তিথি। পুরাণ অনুসারে, এই দিনে দেবতারা স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন এবং যে কেউ এই পূর্ণিমায় গঙ্গাস্নান ও দান-ধ্যান করলে তারা বিশেষ পূণ্য অর্জন করেন। কথিত আছে, একসময় কান্তিকা নগরীর এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ ধনেশ্বর ও তার স্ত্রী রূপবতী নিঃসন্তান ছিলেন। একদিন এক ঋষির পরামর্শে তারা মা কালীর পূজা ও চন্দ্রিকা দেবীর আরাধনা করেন এবং অবশেষে সন্তান লাভ করেন। এই বিশ্বাস থেকেই মাঘী পূর্ণিমার দিনে বিশেষ পূজা, গঙ্গাস্নান, দান-ধ্যান এবং তর্পণ করা হয়।
দৃক পঞ্চাঙ্গ অনুসারে মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পূর্ণিমা তিথি শুরু হচ্ছে ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ মঙ্গলবার। ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টা ৫৫ মিনিটে তিথি শুরু হচ্ছে। আর তিথি শেষ হবে পরের দিন ১২ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা ৭ টা ২২ মিনিটে। অর্থাৎ উদয়া তিথি অনুসারে ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বুধবার পড়বে মাঘ পূর্ণিমা। এবারের মাঘ পূর্ণিমায়, শোভন ও সৌভাগ্য যোগ রয়েছে। এই দিনে স্নান ও দান করার পূণ্য অর্জন করতে পারেন অনেকে।
এছাড়াও, মাঘ মাসে অনুষ্ঠিত হয় কুম্ভমেলা, যা প্রতি ১২ বছরে একবার হয়, এবং বার্ষিক মাঘ মেলা, যা প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে পালিত হয়। এই উপলক্ষে ভক্তরা গঙ্গাস্নান করেন এবং বিভিন্ন দান কর্মে অংশগ্রহণ করেন।
বৌদ্ধ ধর্মে মাঘী পূর্ণিমার মাহাত্ম্য
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য মাঘী পূর্ণিমা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে গৌতম বুদ্ধ তার মহাপরিনির্বাণের ঘোষণা করেন। রাজগৃহের বেনুবনে তিনি তার শেষ বর্ষাবাস পালন করেন এবং তখনই তিনি মৃত্যুর অসংখ্য সত্য উপলব্ধি করেন। পরবর্তীতে বৈশালীর চাপালচৈত্যে উপস্থিত হয়ে তিনি তার শিষ্য আনন্দকে জানান যে তিন মাস পর বৈশাখী পূর্ণিমায় তিনি পরিনির্বাপিত হবেন।
বুদ্ধের এই ঘোষণা শুনে তার শিষ্যরা ব্যথিত হন, কিন্তু তিনি তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে “জীবন অনিত্য, সংস্কার অনিত্য।” তিনি বলেন, “উৎপত্তি ও বিলয় জগতের চিরন্তন নিয়ম, এবং এই মহাসত্যটি সকল জীবনের জন্য প্রযোজ্য।” এই উপলক্ষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সংঘদান, বুদ্ধপূজা, এবং বিশ্বশান্তির জন্য সমবেত প্রার্থনা করেন।
মাঘী পূর্ণিমার উদযাপন
এই দিনে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ প্রার্থনা, পূজা এবং দান-ধ্যান করেন। বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে এবং ভক্তরা নদী বা গঙ্গাস্নান করেন। কেউ কম্বল, তিল, গুড়, ঘি, পোশাক ও খাবার দান করেন। বৌদ্ধ সম্প্রদায় সংঘদান করেন এবং বিশ্ব শান্তির জন্য সমবেত প্রার্থনায় অংশ নেন।
মাঘী পূর্ণিমা কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, এটি মানবকল্যাণ ও আত্মশুদ্ধির এক বিশেষ দিন হিসেবে পালিত হয়।