বরিশালের গৌরনদী
বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ, পুষ্টি মেলে বারো মাস

- সময় ০৭:০৪:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
- / 38
“কৃষিই কৃষ্টি” এই কথাটি প্রমাণ করেছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সদরের চরগাধাতলি গ্রামের শাহ জালাল। একসময় তিনি ছিলেন পেশাদার ফটোগ্রাফার, ক্যামেরার লেন্সে ধরে রাখতেন জীবনের নানা মুহূর্ত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে তিনি পেশা বদলে নেমে পড়েন কৃষিকাজে। আজ তিনি একজন সফল কৃষক, যিনি নিজের বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করে পুষ্টি ও স্বাবলম্বিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
শাহ জালালের বাড়ির উঠোনে ঢুকলেই চোখে পড়বে সবুজের সমারোহ। শিম, লাউ, করলা, টমেটো, ঢেঁড়স, পালং শাক, ধনেপাতা থেকে শুরু করে নানা জাতের মৌসুমি সবজি সেখানে বারো মাস চাষ হচ্ছে।
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে তিনি ব্যবহার করেন জৈব সার ও দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি বালাইনাশক। ফলে তার উৎপাদিত সবজি একদিকে যেমন নিরাপদ ও পুষ্টিকর, অন্যদিকে বাজারের তুলনায় অনেক বেশি স্বাদযুক্ত। চাহিদাও বেশী।
কীভাবে শুরু হলো কৃষির প্রতি আগ্রহ
একসময় শহরে ফটোগ্রাফি নিয়ে ব্যস্থ থাকলেও, শাহ জালালের মনে সবসময় ছিল নিজের গ্রামে কিছু করার ইচ্ছা। করোনা মহামারির সময় শহরের কাজ কমে যাওয়ায় তিনি গ্রামে ফিরে আসেন এবং কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্রথমে শখের বসে কয়েকটি সবজির চারা লাগিয়েছিলেন, ভালো ফল পাওয়ার পর এটি তার প্রধান পেশায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, “প্রথমে খুব ছোট পরিসরে শুরু করেছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, সঠিক যতœ নিলে বাড়ির আঙিনাতেই প্রচুর সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এখন শুধু নিজের পরিবারের জন্যই নয়, বাড়তি সবজি বিক্রি করেও আয় করতে পারছি।” সবচেয়ে আনন্দের যে আমার এখানে উৎপাদিত সাকসবজি বিষমুক্ত চাষ করায় বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ৪০ শতক জমির উপর অর্গানিকভাবে চাষাবাদ করছেন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ
শাহ জালালের এই উদ্যোগ দেখে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারাও তাকে পরামর্শ দিতে এগিয়ে আসেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সেকেন্দার শেখ কালের কন্ঠকে জানান, “শাহজালালের মতো উদ্যোগী কৃষকদের জন্য আমাদের নানা প্রশিক্ষণ ও সহায়তা আছে। বাড়ির আঙিনায় কিংবা অল্প জায়গায় সবজি চাষ করে কিভাবে পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি।
বাড়ির আঙিনার সবজি চাষের সুবিধা
শাহ জালাল মনে করেন, বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি সহজ ও ব্যয়সাশ্রয়ী। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ গ্রামীণ বাড়িতেই খালি জায়গা পড়ে থাকে, যেখানে সহজেই শাকসবজি চাষ করা সম্ভব। তাছাড়া বাজারের সবজির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের উৎপাদিত ফসল খেতে পারলে তা আরও স্বাস্থ্যকর হয়।
বর্তমানে শাহজালাল শুধু নিজে সবজি চাষ করছেন না, বরং আশপাশের মানুষদেরও উদ্বুদ্ধ করছেন। তার পরামর্শে অনেকেই বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ শুরু করেছেন। ফলে একদিকে যেমন পরিবারগুলো স্বল্প খরচে পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে, অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হচ্ছে।
শাহ জালালের সফলতার গল্প প্রমাণ করে, সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রম থাকলে বাড়ির সামান্য জায়গায়ও কৃষিকাজ করা সম্ভব। এটি শুধু ব্যক্তিগত পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্যই নয়, বরং বাণিজ্যিকভাবেও লাভজনক হতে পারে।
সবজি ক্রয় করতে আশা স্থানীয় ব্যবসায়ি হাজি মোয়াজ্জম হোসেন বলেন, তার এই সাফল্যের গল্প এলাকার অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। যারা নিজেদের বাড়ির খালি জায়গা কাজে লাগিয়ে সবজি চাষ করতে চান তাদের জন্য শাহ জালালের উদ্যোগ হতে পারে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
শাহজালাল বলেন, “যারা বেকার বা কাজের সন্ধানে আছেন, তারা চাইলে পরিত্যাক্ত জমি অথবা বাড়ির আঙিনায় বা ছাদে সবজি চাষ শুরু করতে পারেন। এটি শুধু পুষ্টির জন্য নয়, বরং একটি উপার্জনের মাধ্যম হিসেবেও কাজে লাগতে পারে।