০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০২ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ: তিউনিসিয়ার পথে !

বিশেষ প্রতিনিধি
  • সময় ১০:১০:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • / 64

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ: তিউনিসিয়ার পথে

তিউনিসিয়ায় ২০১১ সালে পশ্চিমা সমর্থনে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক জাইন এল আবিদিন বেন আলিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়। এ ঘটনাকে বলা হয় ‘জেসমিন বিপ্লব’।

গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিল দেশটির জনগণ; কিন্তু এক দশকের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও তিউনিসিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি। একই ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাংলাদেশে আরব ওই দেশটির পরিনতির দিকে।

জেসমিন বিপ্লবের পর তিউনিসিয়ায় অন্তবর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল। জনগণের প্রত্যাশা ছিল অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে, দুর্নীতি কমবে, সমাজে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, জনতুষ্টিবাদের নামে সরকার একের পর এক দাবির সামনে নতি স্বীকার করছে, কিন্তু কার্যকর সংস্কারের পথে হাঁটেনি।

ফলাফল একটি দীর্ঘমেয়াদী অস্থিতিশীলতা। তিউনিসিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পৌছেছে, বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, আর কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে।

বাংলাদেশেও দীর্ঘদিনের শাসন পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও জনগণের আকাঙ্ক্ষাগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে অসন্তোষ রয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া, বিনিয়োগ কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্যের ঊর্ধ্বগতি সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি এখন একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তিউনিসিয়ার মতো বাংলাদেশেও সরকার দাবি মেনে নিতে ব্যস্ত, কিন্তু স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ক্ষেত্রে অটোপাসের দাবি মেনে নেয়া। সরকারি কর্মচারিদের মহার্ঘ ভাতা, সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুক্ত করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানান মহল থেকে তোলা দাবির বিষয়ে মনে হয় সরকারের একটা ভীতি আছে। যৌক্তিক দাবির সঙ্গে অযৌক্তিক দাবিও কিছু ক্ষেত্রে মেনে নেয়া হয়। বিশেষ করে ছাত্ররা যদি কোনো দাবি করে তখন বিচার-বিবেচনা করে না। আবার যৌক্তিক অনেক দাবি পূরণ হচ্ছে না।

বিবেচনা ছাড়াই সরকারের এই দাবি মেনে নেয়াকে ‘জনতুষ্টিবাদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এটা যদি অব্যাহত থাকে, তবে এর প্রভাব পড়বে দেশের নীতিনির্ধারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ওপর।

তিউনিসিয়ার অর্থনীতি আজ চরম সংকটে। বেকারত্ব বেড়েছে, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে গেছে, সরকার নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এটি তুলনা করলে স্পষ্ট হয়, যদি কার্যকর সংস্কার ও সুশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে একই পরিণতি হতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ ইতোমধ্যে দাবি করেছে ‘গত ছয় মাসে সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে। এই অবস্থা আরো দীর্ঘায়িত হলে, পরিস্থিতি কারো জন্যই সুখকর হবে না।
রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে বলতে শুরু করেছে, ‘ছয় মাসে তাদের যেটা মূল কাজ তারা সেটি এখনো শুরু করতে পারেনি।

শেয়ার করুন

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ: তিউনিসিয়ার পথে !

সময় ১০:১০:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তিউনিসিয়ায় ২০১১ সালে পশ্চিমা সমর্থনে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক জাইন এল আবিদিন বেন আলিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়। এ ঘটনাকে বলা হয় ‘জেসমিন বিপ্লব’।

গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিল দেশটির জনগণ; কিন্তু এক দশকের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও তিউনিসিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি। একই ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাংলাদেশে আরব ওই দেশটির পরিনতির দিকে।

জেসমিন বিপ্লবের পর তিউনিসিয়ায় অন্তবর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল। জনগণের প্রত্যাশা ছিল অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে, দুর্নীতি কমবে, সমাজে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, জনতুষ্টিবাদের নামে সরকার একের পর এক দাবির সামনে নতি স্বীকার করছে, কিন্তু কার্যকর সংস্কারের পথে হাঁটেনি।

ফলাফল একটি দীর্ঘমেয়াদী অস্থিতিশীলতা। তিউনিসিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পৌছেছে, বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, আর কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে।

বাংলাদেশেও দীর্ঘদিনের শাসন পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও জনগণের আকাঙ্ক্ষাগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে অসন্তোষ রয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া, বিনিয়োগ কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্যের ঊর্ধ্বগতি সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি এখন একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তিউনিসিয়ার মতো বাংলাদেশেও সরকার দাবি মেনে নিতে ব্যস্ত, কিন্তু স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ক্ষেত্রে অটোপাসের দাবি মেনে নেয়া। সরকারি কর্মচারিদের মহার্ঘ ভাতা, সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুক্ত করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানান মহল থেকে তোলা দাবির বিষয়ে মনে হয় সরকারের একটা ভীতি আছে। যৌক্তিক দাবির সঙ্গে অযৌক্তিক দাবিও কিছু ক্ষেত্রে মেনে নেয়া হয়। বিশেষ করে ছাত্ররা যদি কোনো দাবি করে তখন বিচার-বিবেচনা করে না। আবার যৌক্তিক অনেক দাবি পূরণ হচ্ছে না।

বিবেচনা ছাড়াই সরকারের এই দাবি মেনে নেয়াকে ‘জনতুষ্টিবাদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এটা যদি অব্যাহত থাকে, তবে এর প্রভাব পড়বে দেশের নীতিনির্ধারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ওপর।

তিউনিসিয়ার অর্থনীতি আজ চরম সংকটে। বেকারত্ব বেড়েছে, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে গেছে, সরকার নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এটি তুলনা করলে স্পষ্ট হয়, যদি কার্যকর সংস্কার ও সুশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে একই পরিণতি হতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ ইতোমধ্যে দাবি করেছে ‘গত ছয় মাসে সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে। এই অবস্থা আরো দীর্ঘায়িত হলে, পরিস্থিতি কারো জন্যই সুখকর হবে না।
রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে বলতে শুরু করেছে, ‘ছয় মাসে তাদের যেটা মূল কাজ তারা সেটি এখনো শুরু করতে পারেনি।