০৬:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অজ্ঞতার কারণে অপচয় হচ্ছে বিপুল সম্ভাবনা

বাংলাদেশের পরিত্যক্ত পাথর-বালুতে মূল্যবান ধাতু

মো. আহছান উল্লাহ
  • সময় ০৩:০৭:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
  • / 152

বাংলাদেশের পরিত্যক্ত পাথর এবং বালুতে মূল্যবান ধাতু

বাংলাদেশের পাথরশিল্প নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। তবে সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিত্যক্ত পাথর এবং বালুর মধ্যে স্বর্ণ, রূপা, টাইটেনিয়ামসহ অন্তত ৮ ধরনের মূল্যবান ধাতব পদার্থের নমুনা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আশ্চর্যের বিষয় হলো, এসব পাথরের মধ্যে দামি রত্নপাথরের অস্তিত্বও পাওয়া গেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে পারে।

যদি সঠিক গবেষণা, আধুনিক প্রযুক্তি এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়, তাহলে এই খাতটি বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও হতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে এই সম্ভাবনা এখনো অন্ধকারে রয়ে গেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীর চর, পাহাড়ি এলাকায় কিছু পাথর ও বালুতে মূল্যবান ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে স্বর্ণ, রূপা, তামা, লোহা এবং টাইটেনিয়ামসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধাতু লক্ষ্য করা গেছে। গবেষকদের মতে, যদি এই মূল্যবান ধাতুগুলোর প্রক্রিয়াকরণ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় করা যায়, তবে বাংলাদেশ নতুন একটি খনিজ শিল্প গড়ে তুলতে পারবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশে সাধারণত পাথরকে অবহেলিত সম্পদ হিসেবে দেখা হয়; অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা এবং চীন খনিজ সম্পদ এবং রত্নপাথর শিল্পের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। তাহলে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, গবেষণা ও বিনিয়োগের অভাবে বাংলাদেশ এই খাত থেকে সঠিকভাবে লাভবান হতে পারেনি। আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। গবেষকরা বলেন, “আমাদের দেশে পরিত্যক্ত পাথর ও বালুর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু রয়েছে, কিন্তু আমরা সেগুলোর বিষয়ে অবগত নই।”

বিশ্ববাজারে স্বর্ণ, রূপা, প্লাটিনাম, তামা, নিকেলসহ অন্যান্য খনিজ পদার্থের চাহিদা বিশাল। এই মূল্যবান ধাতুগুলো শুধু অলংকার শিল্পে নয়, বরং ইলেকট্রনিক্স, মহাকাশ গবেষণা, চিকিৎসা এবং বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। চীন, ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো তাদের খনিজ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বিশাল শিল্প গড়ে তুলেছে, কিন্তু বাংলাদেশে এই খাতে অগ্রগতি খুবই সীমিত।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এই বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি নতুন শিল্প গড়ে তুলবে কিনা, নাকি এটি অজ্ঞতা ও অবহেলায় হারিয়ে যাবে? সঠিক গবেষণা ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ এবং নীতিমালা তৈরি করে খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও পরিশোধন করার ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। বাংলাদেশ কি এই খাতকে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধ খনিজ সম্পদশালী দেশে পরিণত হবে, তা এখন দেখার বিষয়।

শেয়ার করুন

অজ্ঞতার কারণে অপচয় হচ্ছে বিপুল সম্ভাবনা

বাংলাদেশের পরিত্যক্ত পাথর-বালুতে মূল্যবান ধাতু

সময় ০৩:০৭:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের পাথরশিল্প নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। তবে সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিত্যক্ত পাথর এবং বালুর মধ্যে স্বর্ণ, রূপা, টাইটেনিয়ামসহ অন্তত ৮ ধরনের মূল্যবান ধাতব পদার্থের নমুনা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আশ্চর্যের বিষয় হলো, এসব পাথরের মধ্যে দামি রত্নপাথরের অস্তিত্বও পাওয়া গেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে পারে।

যদি সঠিক গবেষণা, আধুনিক প্রযুক্তি এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়, তাহলে এই খাতটি বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও হতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে এই সম্ভাবনা এখনো অন্ধকারে রয়ে গেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীর চর, পাহাড়ি এলাকায় কিছু পাথর ও বালুতে মূল্যবান ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে স্বর্ণ, রূপা, তামা, লোহা এবং টাইটেনিয়ামসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধাতু লক্ষ্য করা গেছে। গবেষকদের মতে, যদি এই মূল্যবান ধাতুগুলোর প্রক্রিয়াকরণ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় করা যায়, তবে বাংলাদেশ নতুন একটি খনিজ শিল্প গড়ে তুলতে পারবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

বাংলাদেশে সাধারণত পাথরকে অবহেলিত সম্পদ হিসেবে দেখা হয়; অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা এবং চীন খনিজ সম্পদ এবং রত্নপাথর শিল্পের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। তাহলে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, গবেষণা ও বিনিয়োগের অভাবে বাংলাদেশ এই খাত থেকে সঠিকভাবে লাভবান হতে পারেনি। আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। গবেষকরা বলেন, “আমাদের দেশে পরিত্যক্ত পাথর ও বালুর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এতে বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু রয়েছে, কিন্তু আমরা সেগুলোর বিষয়ে অবগত নই।”

বিশ্ববাজারে স্বর্ণ, রূপা, প্লাটিনাম, তামা, নিকেলসহ অন্যান্য খনিজ পদার্থের চাহিদা বিশাল। এই মূল্যবান ধাতুগুলো শুধু অলংকার শিল্পে নয়, বরং ইলেকট্রনিক্স, মহাকাশ গবেষণা, চিকিৎসা এবং বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। চীন, ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো তাদের খনিজ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বিশাল শিল্প গড়ে তুলেছে, কিন্তু বাংলাদেশে এই খাতে অগ্রগতি খুবই সীমিত।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এই বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি নতুন শিল্প গড়ে তুলবে কিনা, নাকি এটি অজ্ঞতা ও অবহেলায় হারিয়ে যাবে? সঠিক গবেষণা ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ এবং নীতিমালা তৈরি করে খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও পরিশোধন করার ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। বাংলাদেশ কি এই খাতকে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধ খনিজ সম্পদশালী দেশে পরিণত হবে, তা এখন দেখার বিষয়।