কে এই তুলসী গ্যাবার্ড?

- সময় ০৯:৫২:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
- / 101
মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড। মাথা ভর্তি সাদা-কালো চুল, সুগঠিত চোয়াল আর মুখে রহস্যময় হাসি। দেখে মনে হবে- জেমস বন্ড সিরিজের কোন এক নারী গোয়েন্দা চরিত্র।
৪৩ বছরের এই নারী; ট্রাম্প প্রশাসনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। তার চিন্তা, কথায় মূলত মার্কিন কূটনীতিরই প্রতিচ্ছবি!
গত ১৭ মার্চ ভারত সফরে এসে বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্য করে এখন তুমুল আলোচনায়। দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নিউজিল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশের গোয়েন্দা প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তিনি।
বৈঠকের এর এক ফাঁকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় মার্কিন সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্য অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।
কট্টর ট্রাম্প সমর্থক তুলসী গ্যাবার্ড দেশটির হাওয়াইয়ের সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান। একই সঙ্গে তিনি ইউএস আর্মিও একজন রিজার্ভ কর্মকর্তা। গোয়েন্দা বিষয়ক গভীর অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তিনি মস্কোর প্রতি সহানুভূতিশীল যুদ্ধবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তিনি ১৮টি গুপ্তচর সংস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তদারকি করছেন ৭৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের। তবে ট্রাম্পের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে তুলসীকে বেছে নেওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তুলসি গ্যাবার্ডের জন্ম আমেরিকান সামোয়ায়। ৪৩ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদে হাওয়াইয়ের চারবারের কংগ্রেস সদস্য, ডেমোক্র্যাটদের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং আর্মি রিজার্ভের লেফটেন্যান্ট কর্নেল। তিনি ইরাকে সামরিক সেবা দিয়েছেন।

মাত্র ২১ বছর বয়স থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি তখন হাওয়াই হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ৪২তম জেলা থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সিনেমাটোগ্রাফার আব্রাহাম উইলিয়ামসকে বিয়ে করেছেন।
মার্কিন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিভে প্রথম হিন্দু ব্যত্বিত্ব হিসেবে ২০১২ সালে ১১৩তম কংগ্রেসে তুলসি গ্যাবার্ড ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে আসন জিতেন। ২০২০ সালের ১১৭ তম কংগ্রেসে পুনঃনির্বাচনের প্রার্থী হননি এবং এর পরিবর্তে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চেষ্টা করেন।
তার নির্বাচনী প্রচারণা আমেরিকান সামরিক হস্তক্ষেপ এবং প্রগতিশীল এজেন্ডাগুলির উপর কেন্দ্রীভূত ছিল। যদিও পরে তিনি প্রার্থী হিসেবে সরে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সমর্থন জানান।
২০২২ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ত্যাগ করেন এবং অভিযোগ করেন, পার্টি “একটি অভিজাত যুদ্ধে আগ্রহী গোষ্ঠী” এবং “উইওক” মতবাদীরা পার্টি নিয়ন্ত্রণ করছে। এরপর গ্যাবার্ড ২০২২ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবিরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন জানান এবং রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এছাড়াও, তিনি ২০২১ সাল থেকে মার্কিন আর্মি রিজার্ভে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসাবে কাজ করেছেন।
তুলসী ২০০৩ সালে হাওয়াই আর্মি ন্যাশনাল গার্ডে যোগ দেন এবং ২০০৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ইরাকে মোতায়েন ছিলেন, যেখানে তিনি ২৯তম ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড কমব্যাট টিমের মেডিকেল ইউনিটে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পান।
কংগ্রেসে থাকাকালীন, গ্যাবার্ড মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং সিরিয়া বিষয়ে বিতর্কিত মতামতের জন্য পরিচিত হন। ২০১৫ সালের দিকে, তিনি ওবামা প্রশাসনকে ইসলামি চরমপন্থাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত না করার জন্য প্রায়ই সমালোচনা করতেন।
তিনি ফক্স নিউজে অতিথি উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছেন। তার মা ইন্ডিয়ানাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মিশিগানে বড় হন। তার বাবা, যিনি সামোয়ান এবং ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত। স্কুল জীবনে তিনি ইসকনের শিক্ষায় পরিচালিত হন।
শেয়ার করুন

কে এই তুলসী গ্যাবার্ড?

মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড। মাথা ভর্তি সাদা-কালো চুল, সুগঠিত চোয়াল আর মুখে রহস্যময় হাসি। দেখে মনে হবে- জেমস বন্ড সিরিজের কোন এক নারী গোয়েন্দা চরিত্র।
৪৩ বছরের এই নারী; ট্রাম্প প্রশাসনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। তার চিন্তা, কথায় মূলত মার্কিন কূটনীতিরই প্রতিচ্ছবি!
গত ১৭ মার্চ ভারত সফরে এসে বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্য করে এখন তুমুল আলোচনায়। দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নিউজিল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশের গোয়েন্দা প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তিনি।
বৈঠকের এর এক ফাঁকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় মার্কিন সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্য অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।
কট্টর ট্রাম্প সমর্থক তুলসী গ্যাবার্ড দেশটির হাওয়াইয়ের সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান। একই সঙ্গে তিনি ইউএস আর্মিও একজন রিজার্ভ কর্মকর্তা। গোয়েন্দা বিষয়ক গভীর অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তিনি মস্কোর প্রতি সহানুভূতিশীল যুদ্ধবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তিনি ১৮টি গুপ্তচর সংস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তদারকি করছেন ৭৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের। তবে ট্রাম্পের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে তুলসীকে বেছে নেওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তুলসি গ্যাবার্ডের জন্ম আমেরিকান সামোয়ায়। ৪৩ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদে হাওয়াইয়ের চারবারের কংগ্রেস সদস্য, ডেমোক্র্যাটদের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং আর্মি রিজার্ভের লেফটেন্যান্ট কর্নেল। তিনি ইরাকে সামরিক সেবা দিয়েছেন।

মাত্র ২১ বছর বয়স থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি তখন হাওয়াই হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ৪২তম জেলা থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সিনেমাটোগ্রাফার আব্রাহাম উইলিয়ামসকে বিয়ে করেছেন।
মার্কিন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টিভে প্রথম হিন্দু ব্যত্বিত্ব হিসেবে ২০১২ সালে ১১৩তম কংগ্রেসে তুলসি গ্যাবার্ড ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে আসন জিতেন। ২০২০ সালের ১১৭ তম কংগ্রেসে পুনঃনির্বাচনের প্রার্থী হননি এবং এর পরিবর্তে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চেষ্টা করেন।
তার নির্বাচনী প্রচারণা আমেরিকান সামরিক হস্তক্ষেপ এবং প্রগতিশীল এজেন্ডাগুলির উপর কেন্দ্রীভূত ছিল। যদিও পরে তিনি প্রার্থী হিসেবে সরে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সমর্থন জানান।
২০২২ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ত্যাগ করেন এবং অভিযোগ করেন, পার্টি “একটি অভিজাত যুদ্ধে আগ্রহী গোষ্ঠী” এবং “উইওক” মতবাদীরা পার্টি নিয়ন্ত্রণ করছে। এরপর গ্যাবার্ড ২০২২ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিবিরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন জানান এবং রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এছাড়াও, তিনি ২০২১ সাল থেকে মার্কিন আর্মি রিজার্ভে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসাবে কাজ করেছেন।
তুলসী ২০০৩ সালে হাওয়াই আর্মি ন্যাশনাল গার্ডে যোগ দেন এবং ২০০৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ইরাকে মোতায়েন ছিলেন, যেখানে তিনি ২৯তম ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড কমব্যাট টিমের মেডিকেল ইউনিটে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পান।
কংগ্রেসে থাকাকালীন, গ্যাবার্ড মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং সিরিয়া বিষয়ে বিতর্কিত মতামতের জন্য পরিচিত হন। ২০১৫ সালের দিকে, তিনি ওবামা প্রশাসনকে ইসলামি চরমপন্থাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত না করার জন্য প্রায়ই সমালোচনা করতেন।
তিনি ফক্স নিউজে অতিথি উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছেন। তার মা ইন্ডিয়ানাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মিশিগানে বড় হন। তার বাবা, যিনি সামোয়ান এবং ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত। স্কুল জীবনে তিনি ইসকনের শিক্ষায় পরিচালিত হন।