কেউ দত্তক নিলেন না হাসপাতালে একা ছোট্ট শিশুটিকে

- সময় ১০:২২:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
- / 26
সোমবার দুপুর ১২টা। বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর শয্যায় শান্ত শুয়ে আছে শিশু। তার পাশে বসে আছেন এক নারী; নাম পারভীন বেগম। গত শনিবার রাতে তিনি ও তার স্বামী রুহুল আমিন নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরসংলগ্ন এক পরিত্যক্ত শৌচাগার থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন।
পারভীন জানান, রাত ১২টার দিকে ঘরের বাইরে বেরিয়ে কান্না শুনতে পান তিনি। কান্নার আওয়াজ ধরে এগিয়ে পাশে পরিত্যক্ত একটি শৌচাগারে শিশুটিকে পড়ে থাকতে দেখেন। সেখানে মশা তার ছোট্ট শরীরটা প্রায় ঢেকে রেখেছিল। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন পারভীন ও রুহুল। এর পর গত দুই দিনেও তার মা-বাবার খোঁজ মেলেনি। শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য অনেকে হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু তার পিঠে একটি টিউমার রয়েছে। আর পায়ের গঠন দেখে মনে হচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধী হবে। এসব কারণে বেশ কয়েক দম্পতি ফিরে গেছেন।
রুহুল আমিন কীর্তনখোলা নদীর তীরে ত্রিশ গোডাউন এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। তার স্ত্রী পারভীন বিক্রি করেন ফুচকা। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত শিশুটিকে দেখভাল করছিলেন এই দম্পতি।
হাসপাতাল থেকে ফেরার পর দুপুর ২টার দিকে মোবাইল ফোনে কল করা হলে রুহুল জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকায় পাঠানোর কথা বলেছেন চিকিৎসকরা। তাদেরও সঙ্গে যেতে বলেছেন। কিন্তু তারা ছোট ব্যবসা করে সংসার চালান। গত দুই দিন হাসপাতালে থাকায় আয় বন্ধ। ঝালমুড়ি-ফুচকা বিক্রি না করলে তাদের সংসার চলে না। এখন ব্যবসা ছেড়ে ঢাকায় যাওয়া সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন রুহুল।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউর মুনীর বলেন, ‘ওই শিশুকে আপাতত ওয়ার্ডের সেবিকার তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর সমাজসেবা অধিদপ্তরে হস্তান্তরের কথা চলছে। তাকে সুস্থ করতে নিউরোলজি চিকিৎসা দিতে হবে। আপাতত বরিশাল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। পুরোপুরি সুস্থ করতে ঢাকায় পাঠানো হবে।’
অনেকের ধারণা, শারীরিক সমস্যা থাকায় স্বজনরা শিশুটিকে ফেলে রেখে গেছে। হাসপাতালের সেবিকারা জানান, শিশুটির নাড়িও কাটা ছিল না। তাই ধারণা করা হচ্ছে, তার বয়স সাত দিনের বেশি হবে না।
শেবাচিম হাসপাতালে দায়িত্বরত সমাজসেবা কর্মকর্তা দিলরুবা রিচি জানান, হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। শিশুটি সুস্থ হলে সমাজসেবার শিশু নিবাসে হস্তান্তর করা হবে।
শেয়ার করুন
-
সর্বশেষ
-
সর্বাধিক
Devoloped By: InnoSoln Limited