০১:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নিরাপত্তা প্রধান বরখাস্ত

ইসরায়েলি হামলায় পূর্ণ সমর্থন আছে ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • সময় ০১:৩০:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
  • / 24

ডোনাল্ড ট্রাম্প

ফিলিস্তিনের গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় পূর্ণ সমর্থন আছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এ তথ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। খবর দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই সপ্তাহে গাজায় আইডিএফের সামরিক তৎপরতা পুনরায় চালু করার বিষয়টিকে পূর্ণ সমর্থন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজায় যুদ্ধবিরতি পুনঃস্থাপনের জন্য ট্রাম্প কাজ করছেন কি না জানতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে লিভিটের জবাব ছিল এটি।

হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের লিভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট হামাসকে স্পষ্ট করে বলেছেন- যদি তারা সমস্ত জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তাহলে তাদের নারকীয় মূল্য দিতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, হামাস জীবন নিয়ে খেলা খেলতে বেছে নিয়েছে।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণরূপে হামাস দায়ী। যখন তারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর নৃশংস আক্রমণ শুরু করে তখনই এ পরিস্থিতি নির্ধারিত হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি চান সমস্ত জিম্মি বাড়ি ফিরে আসুক। অতএব, ইসরায়েল এবং আইডিএফ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করেন ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট

এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ ও উত্তরের বেইত লাহিয়ায় স্থল অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার অস্ত্রবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫৯০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ক্রমাগত বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সেখানে ৪৯ হাজার ৬১৭ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫০ জন আহত হয়েছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস জানিয়েছে, নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজারো মানুষ আটকা পড়ে আছে, যাদের বেশিরভাগেরই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল এবং ২০০-এর বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়েছিল। বর্তমানে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি এখনও হামাসের বন্দিদশায় রয়েছে। প্রথম দফায় যুদ্ধবিরতিতে গোষ্ঠীটি বেশ কয়েকবার জিম্মি মুক্তি স্থগিত করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন নির্ধারিত সময়ে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিশ্ব তাগিদ উপেক্ষা করে হামাস। এ নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ভাটা পড়ে। এরই ফলে ইসরায়েল ফের অভিযানের নামে গাজায় নারকীয় তাণ্ডব শুরু করেছে।

এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করেছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থতার দায়ে তাকে বরখাস্ত করা হয়। খবর বিবিসির।

এ আদেশ অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা বৈঠক করে। বৈঠকে রোনেন বারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্ত করার অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটের প্রধান হিসেবে তার কর্মজীবন শেষ হচ্ছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে পাঁচ বছরের জন্য দেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত হন তিনি।

বৈঠকের আগে নেতানিয়াহু তার সরকারের সদস্যদের কাছে একটি চিঠি পাঠান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং বারের মধ্যে পেশাদার এবং ব্যক্তিগত আস্থার ক্রমাগত ক্ষতি উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বারের অদক্ষতা এবং ব্যর্থতার বর্ণনাও তাতে সংযুক্ত ছিল। এ জন্য তার চাকরির মেয়াদ এপ্রিলে শেষ করার প্রস্তাব করা হয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান রোনেন বার
নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান রোনেন বার

এর আগে নেতানিয়াহু রোববার একটি ভিডিও বিবৃতিতে বারকে বরখাস্ত করার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করেন। দুই ব্যক্তির মধ্যে চলমান অবিশ্বাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নেতানিয়াহু। অপরদিকে বার তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন।

ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারভ-মিয়ারাও নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যুক্তি দিয়েছেন, বরখাস্তের আদেশ মূল্যায়ন না করা পর্যন্ত বারকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। তবে গালি বাহারভকে নেতানিয়াহু তেমন পাত্তা দেন না। নেতানিয়াহুর কট্টর সমালোচক হওয়ায় গালি বাহারভ গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কোণঠাসা। বর্তমানে তিনি নিজেও বরখাস্তের শঙ্কার মুখোমুখি।

শিন বেট হলো ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এবং যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কার্যক্রম এবং সদস্যপদ রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা হিসেবে ঘনিষ্ঠভাবে রক্ষিত। গাজা যুদ্ধে সফলতায় শিন বেটের বেশ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে হামাস নেতাদের চিহ্নিত এবং অবস্থান শনাক্তে সংস্থাটির সাফল্য অভূতপূর্ব।

শেয়ার করুন

নিরাপত্তা প্রধান বরখাস্ত

ইসরায়েলি হামলায় পূর্ণ সমর্থন আছে ট্রাম্পের

সময় ০১:৩০:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় পূর্ণ সমর্থন আছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এ তথ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। খবর দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই সপ্তাহে গাজায় আইডিএফের সামরিক তৎপরতা পুনরায় চালু করার বিষয়টিকে পূর্ণ সমর্থন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজায় যুদ্ধবিরতি পুনঃস্থাপনের জন্য ট্রাম্প কাজ করছেন কি না জানতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে লিভিটের জবাব ছিল এটি।

হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের লিভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট হামাসকে স্পষ্ট করে বলেছেন- যদি তারা সমস্ত জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তাহলে তাদের নারকীয় মূল্য দিতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, হামাস জীবন নিয়ে খেলা খেলতে বেছে নিয়েছে।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণরূপে হামাস দায়ী। যখন তারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর নৃশংস আক্রমণ শুরু করে তখনই এ পরিস্থিতি নির্ধারিত হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি চান সমস্ত জিম্মি বাড়ি ফিরে আসুক। অতএব, ইসরায়েল এবং আইডিএফ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করেন ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট

এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ ও উত্তরের বেইত লাহিয়ায় স্থল অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার অস্ত্রবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫৯০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ক্রমাগত বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সেখানে ৪৯ হাজার ৬১৭ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫০ জন আহত হয়েছে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস জানিয়েছে, নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজারো মানুষ আটকা পড়ে আছে, যাদের বেশিরভাগেরই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল এবং ২০০-এর বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়েছিল। বর্তমানে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি এখনও হামাসের বন্দিদশায় রয়েছে। প্রথম দফায় যুদ্ধবিরতিতে গোষ্ঠীটি বেশ কয়েকবার জিম্মি মুক্তি স্থগিত করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন নির্ধারিত সময়ে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিশ্ব তাগিদ উপেক্ষা করে হামাস। এ নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ভাটা পড়ে। এরই ফলে ইসরায়েল ফের অভিযানের নামে গাজায় নারকীয় তাণ্ডব শুরু করেছে।

এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করেছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থতার দায়ে তাকে বরখাস্ত করা হয়। খবর বিবিসির।

এ আদেশ অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা বৈঠক করে। বৈঠকে রোনেন বারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্ত করার অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটের প্রধান হিসেবে তার কর্মজীবন শেষ হচ্ছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে পাঁচ বছরের জন্য দেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত হন তিনি।

বৈঠকের আগে নেতানিয়াহু তার সরকারের সদস্যদের কাছে একটি চিঠি পাঠান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী এবং বারের মধ্যে পেশাদার এবং ব্যক্তিগত আস্থার ক্রমাগত ক্ষতি উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বারের অদক্ষতা এবং ব্যর্থতার বর্ণনাও তাতে সংযুক্ত ছিল। এ জন্য তার চাকরির মেয়াদ এপ্রিলে শেষ করার প্রস্তাব করা হয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান রোনেন বার
নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান রোনেন বার

এর আগে নেতানিয়াহু রোববার একটি ভিডিও বিবৃতিতে বারকে বরখাস্ত করার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করেন। দুই ব্যক্তির মধ্যে চলমান অবিশ্বাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নেতানিয়াহু। অপরদিকে বার তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন।

ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারভ-মিয়ারাও নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যুক্তি দিয়েছেন, বরখাস্তের আদেশ মূল্যায়ন না করা পর্যন্ত বারকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। তবে গালি বাহারভকে নেতানিয়াহু তেমন পাত্তা দেন না। নেতানিয়াহুর কট্টর সমালোচক হওয়ায় গালি বাহারভ গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কোণঠাসা। বর্তমানে তিনি নিজেও বরখাস্তের শঙ্কার মুখোমুখি।

শিন বেট হলো ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এবং যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কার্যক্রম এবং সদস্যপদ রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা হিসেবে ঘনিষ্ঠভাবে রক্ষিত। গাজা যুদ্ধে সফলতায় শিন বেটের বেশ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে হামাস নেতাদের চিহ্নিত এবং অবস্থান শনাক্তে সংস্থাটির সাফল্য অভূতপূর্ব।