দুই স্ত্রী, তিন বান্ধবী নিয়ে ফান্দে বিমান পরিচালক
- সর্বশেষ আপডেট ০৩:২৭:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
- / 2160
বিতর্ক আর সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছে না রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। কখনো গ্রাহক সেবা, কখনো কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, আবার পাইলট বা কেবিন ক্রুদের চোরাচালানে যুক্ত হওয়া। তবে এবার বিষয়বস্তু কিছুটা ভিন্ন। একজন শীর্ষ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত জীবনের গোপন অধ্যায় সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
রাষ্ট্রীয় এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (গ্রাহক সেবা) রাশেদুল করিম প্রায় দুই বছর আগে তার প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, সে সংসারে তার ১০ মাস বয়সী এক শিশু সন্তান রয়েছে।
রাশেদুল করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী জানান, দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু বিষয়টি পুরোপুরি গোপণ রাখতে বলা হয় তাকে। তাকে আলাদা বাসা নিয়ে দেন রাশেদুল। ১০ মাস আগে তাদের একটি সন্তানও হয়। কিন্তু এরপরও সবকিছুই গোপণ রাখতে বলেন রাশেদুল। কিন্তু সম্প্রতি জানাজানি হলে তার থেকে দূরে সরতে থাকেন রাশেদুল। তাই বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে তার কোন লিখিত অভিযোগ নেয়া হয়নি।

সম্প্রতি দ্বিতীয় স্ত্রী নিজ অধিকার এবং সন্তানের স্বীকৃতি চাইতে সরাসরি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন। অফিস সূত্রে জানা গেছে, তিনি লিখিত অভিযোগ দাখিলের চেষ্টা করলেও, কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেনি। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সচেষ্ট হয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ভুক্তভোগী দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাশেদুল করিমের সঙ্গে বৈধ দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তিনি বলেন, “আমি কোনো অবৈধ সম্পর্ক বা লুকিয়ে কিছু করিনি। আমার সন্তান আছে, তার পরিচয় ও অধিকার নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব।”
তবে জানা গেছে, বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর রাশেদুল করিম এখন দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং অর্থের বিনিময়ে ‘মীমাংসা’করতে চাইছেন। এ প্রস্তাবে রাজি হননি স্ত্রী। বরং তিনি আইনি পথে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, রাশেদুল করিমের বিষয়ে অভিযোগ জানাতে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাফিকুর রহমানের কাছে যান। কিন্তু তিনি লিখিত অভিযোগ গ্রহণ না করে মিমাংসার আশ্বাস দেন।
তবে, স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব না নিয়ে তালাকের পাশাপাশি অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি সুরাহা করতে চান রাশেদুল করিম। এতেই বাধে বিপত্তি।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছত্রছায়ায় রাশেদুল করিম আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা।
এ ঘটনার পাশাপাশি, রাশেদুল করিমের বিরুদ্ধে আরও কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, তার আরও ২-৩ জন ‘ঘনিষ্ঠ বান্ধবী’রয়েছেন, যাদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। যাদের একজন প্রতিষ্ঠানটির কেবিন ক্রু, একজন সিডিউল বিভাগ এবং আরেকজন সিকিউরিটি বিভাগে কর্মরত।
নিরাপত্তা বিভাগের সেই নারী কর্মকর্তাকে রাশেদুল করিম গাড়িও কিনে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আর নারী কেবিন ক্রু এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
তবে সিডিউল বিভাগের সেই নারী কর্মকর্তা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, রাশেদ স্যার ভালো মানুষ। কিন্তু তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিষয়টি জেনে আমরাও অবাক হয়েছি। আর রাশেদ স্যারের সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিলো তবে তা একজন সহকর্মী হিসেবে। তাছাড়া ভিন্ন সম্পর্ক করার মতো কোন ক্রাইটেরিয়া নেই তার।
এ ধরনের আচরণ একজন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে অনৈতিক ও প্রশ্নবিদ্ধ বলে মত দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
বিষয়টি নিয়ে এখনো পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও অফিস অভ্যন্তরে ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চললেও, কর্তৃপক্ষ এখনো নীরব ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তার ব্যক্তিগত জীবনের এমন অনিয়ম প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। একজন কর্মকর্তা তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও যদি নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা বজায় না রাখেন, তবে তা পুরো প্রতিষ্ঠানের জন্যই বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয় স্ত্রী ইতিমধ্যে পারিবারিক আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি চান, তার সন্তানকে পিতার স্বীকৃতি এবং আর্থিক দায়িত্ব নিশ্চিত করা হোক। পাশাপাশি, তিনি নিজেও স্বামীর কাছ থেকে স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা দাবি করছেন।
জানা যায়, দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরপরই ওমরাহ হজে চলে যান রাশেদুল করিম। তবে তার মুঠোফোনটি খোলা পাওয়া যায়। মুঠোফোনে সরাসরি এবং হোয়াট অ্যাপে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
বি:দ্র: সঙ্গত কারণে রাশেদুল করিম, তার দুই স্ত্রী ও তার বান্ধবীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

































