১১ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

- সময় ০৭:০৮:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
- / 25
বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার শেষে কক্সবাজারের টেকনাফে ফেরার পথে গত ৬ দিনে দুটি মাছ ধরার ট্রলারসহ ১১ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গত শনিবার – বৃহস্পতিবার পৃথক সময়ে নাফ নদীর মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকা থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা নবী হোসেনের মালিকাধীন ট্রলারের জেলেদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা জাকির হোসেনের মালিকাধীন ট্রলারের জেলেদের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি।
নবী হোসেনের মালিকাধীন ট্রলারের জেলেরা হলেন, মোহাম্মদ কাসেম (৩৫), আজিজুর রহমন (২০), মোহাম্মদ ইব্রাহিম (২৫), মো মহিউদ্দিন (৪৬), মো আব্দুল্লাহ (৩০)। তাঁরা সকলেই শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
ট্রলার মালিকদের বরাত দিয়ে মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া খাল থেকে শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা জাকির হোসেনের মালিকাধীন ট্রলারটি ৬জন জেলে নিয়ে মাছ ধরার জন্য বঙ্গোপসাগরে যায়। তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে মাছ শিকার শেষে ফেরারপথে ভূলবশত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূণ্য লাইন অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমার নাইক্ষ্যংদিয়া মোহনা নামক এলাকায় ঢুকে পড়ে। এ সময় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে একটি স্পিডবোট যোগে ট্রলারসহ ৬জন জেলেকে আটক করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ফাতংজা খালে ভিতরে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে, গত শনিবার (১ মার্চ ) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা নবী হোসেনের মালিকাধীন ট্রলার শাহপরীর দ্বীপ জেটির উত্তর-পূর্বে দিক থেকে ৬ জন জেলে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বঙ্গোপসাগরে যায়। তারা সেন্টমাটিন দ্বীপ দক্ষিণে জাল ফেলে মাছ শিকারের সময় তাদের ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। তিনদিন ধরে সাগরে ভাসমান অবস্থায় থাকেন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে অন্য একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ওই ট্রলারটিকে উদ্ধারের জন্য সেন্টমার্টিন থেকে আনুমানিক ৩০কিলোমিটার দক্ষিণে দিকে বঙ্গোপসাগরে যায়। এ সময় মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির(এএ)সদস্যরা তাদেরকে ধাওয়া করলে বিকল হওয়া ট্রলার থেকে শফিক নামে একজন সাগরে ঝাঁপ দেন এবং ওই ট্রলারটি রেখে উদ্ধারকারী ট্রলারটি চলে আসে।
পরে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে আরাকান আর্মি সাগরের “জোড়া টাওয়ার” নামক এলাকা থেকে ৫জন জেলেসহ ট্রলারটিকে আটক করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ফাতংজা খালের ভিতরে নিয়ে যায়।
এছাড়া গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাবার সময় সাগরে ভাসমান অবস্থায় নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকায় শফিক নামে একজন জেলেকে উদ্ধার করেছে সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌপথে চলাচলকারি একটি সার্ভিস ট্রলার।
সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌপথে চলাচলকারি সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টেকনাফ থেকে সেন্ট মাটিন আসার পথে সাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকা থেকে একজন জেলেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম শফিক। তিনি আরাকান আর্মির ধাওয়ায় ট্রলার থেকে আত্মরক্ষার জন্য সাগরের পানিতে ঝাপ দিয়েছিলেন।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আবারো দুটি ট্রলার ধরে নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। তারমধ্যে একটি ট্রলারের মালিক আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। অপরজন শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা বলে শোনা যাচ্ছে।
টেকনাফ-২ বিজিবির ব্যাটলিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি শুনেছি । তবে কেউ আমাদের কাছে কোন ধরনের অভিযোগ করেননি। তারপরও বিজিবি সার্বক্ষণিক জেলেদের বিষয় নিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, স্থানীয় জেলেদের বার বার নিদের্শনা দেওয়া হচ্ছে। কোনো ভাবে সীমান্তের জলসীমানা পাড়ি না দেওয়ার জন্য। সুযোগ পেলেই আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যাচ্ছেন জেলেদের।