হোসেনপুরে আইডিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় গিলে খাচ্ছে রিসন-লিজা

- সময় ০৯:৩৭:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
- / 38
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার শামসুল ইসলাম আইডিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি খসরুজ্জামান রিসন ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহীন সুলতানা লিজার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের জমি বন্ধক রাখা, সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তে প্রমাণ মিললেও তারা এখনো লিখিত জবাব দেননি। অভিভাবক ও এলাকাবাসীর দাবি, দুজন মিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে গিলে খাচ্ছে।
সোমবার (১০ মার্চ) উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের কেশেরা গ্রামে বিদ্যালয়টি পরিদর্শনকালে দেখা যায়, রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে (২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ এপ্রিল) পর্যন্ত বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ের মাঠে স্থাপিত পল্লী বিদ্যুতের পিলারে ঝুলানো একটি সাইনবোর্ডে লেখা, “বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক হোসেনপুর শাখার নিকট দায়বদ্ধ”—যা ইঙ্গিত করে বিদ্যালয়ের জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া হয়েছে। তদন্তে জানা যায়, সাবেক সভাপতি খসরুজ্জামান রিসন ও তার ভাই খালেকুজ্জামান এই ঋণ গ্রহণ করেছেন।
বিদ্যালয় চত্বরে গড়ে তোলা হয়েছে মাছের হ্যাচারি, ভবনের ছাদে বসানো হয়েছে একাধিক পানির ট্যাংকি, যা হ্যাচারির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের টিন সেট ঘরে মাছের হ্যাচারি ও পোল্ট্রি ফার্মের খাবার মজুদ করা হয়েছে। এছাড়া, বিদ্যালয় মাঠের তিনটি মেহগনি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাচ্চু মিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ১৭ বছর ধরে সাবেক সভাপতি খসরুজ্জামান রিসন ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহীন সুলতানা লিজা যৌথভাবে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। বিদ্যালয়ের পানি ট্যাংক ব্যবহার করা হচ্ছে মাছের হ্যাচারি ও ধানক্ষেতে, ফলে ভবনের স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া, বিদ্যালয়ের জমির প্রকৃত পরিমাণও অস্পষ্ট এবং অন্যের জমি বিদ্যালয়ের নামে দেখানো হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিজেদের পছন্দের লোকজন নিয়ে গঠন করা হয়েছে। শিক্ষকরা প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন এবং ২০২৪ সালের মে-জুন মাসে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত ৫ লক্ষ টাকা কোনো কাজ ছাড়াই আত্মসাৎ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও হোসেনপুর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের প্রধান ইন্সট্রাক্টর মফিজ উদ্দিন জানান, তিনটি মেহগনি গাছ কাটার কোনো অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও সাবেক সভাপতি। সরকারি বরাদ্দের ৫ লক্ষ টাকা কীভাবে ব্যয় হয়েছে, তার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এছাড়া, তদন্তকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় মাছের হ্যাচারি ও ভবনে পানি ট্যাংক দেখতে পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহীন সুলতানা লিজা জানান, অভিভাবক বাচ্চু মিয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্ত করে গেছেন আগামী সাত দিনের মধ্যে আমি ও সাবেক সভাপতি লিখিত ভাবে জবাব দিব।
হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাহিদ ইভা জানান, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটির প্রতিনিধিদল সরেজমিনে তদন্ত চালিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে একটি খসড়া তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।