সাগরে মিয়ানমারের ৩ যুদ্ধজাহাজ, সেন্টমার্টিনে আতঙ্ক
- সময় ০৮:৩০:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪
- / 270
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মর্টার শেল ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের সীমান্ত এলাকা। এর মধ্যেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে স্পষ্ট দেখা যা”েছ মিয়ানমারের তিনটি যুদ্ধজাহাজ। সাগরে মিয়ানমারের জলসীমায় গত দু’দিন ধরে নোঙর করে আছে জাহাজগুলো। এতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা সাড়ে তিন মাস ধরে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। স¤প্রতি মংডু টাউনশিপের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের দুটি শহরসহ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৪টি সীমান্ত চৌকি, রাচিডং-বুচিডং টাউনশিপের বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এখন মংডু দখলের জন্য লড়ছে তারা।
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র কোরাল বা প্রবাল দ্বীপ। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমার উপক‚ল থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় দ্বীপটির অব¯’ান। প্রচুর পরিমাণে নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়।
গেল নির্বাচনের আগে সেন্টমার্টিন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনার ঝড় উঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জাতীয় সংসদের কয়েকজন সংসদ সদস্য অভিযোগ করেন আমেরিকা এই দ্বীপটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। যদিও প্রধানমন্ত্রী সে সময় সরাসরি কোন দেশের নাম উল্লেখ করেননি। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপটি তার জন্মলগ্ন থেকেই উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপক‚লের এক গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। দ্বীপটি নিজেদের দখলে নিতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার।
দ্বীপটি মূলত চুনাপাথরের। যেখানে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক- ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। এছাড়াও দ্বীপটি সামুদ্রিক কচ্ছপ সবুজ সাগর কাছিম এবং জলপাই রঙা সাগর কাছিম প্রজাতির ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে জায়গাটি খ্যাত।
সমুদ্র নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সেন্টমার্টিন যতোটা না অর্থনৈতিক; তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনীতির কারনে। কেননা বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে মোট আটটি দেশ রয়েছে। এর উত্তরাঞ্চলে আছে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার। সেন্টমার্টিন এমন একটি ভূখন্ড যেখান থেকে বিশ্বের যেকোনো জায়গায় সমুদ্রপথে সহজে আসা-যাওয়া করা সম্ভব। তাই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। যেমন আন্দামান নিকোবর দ্বীপ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যমতে, প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে ভূতাত্তি¡ক সময়পঞ্জির হিমবাহ যুগে বাংলাদেশের একমাত্র এ প্রবাল দ্বীপটির উত্থান শুরু হয়েছিল। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে দ্বীপটি ছিল মূল ভূমি তথা টেকনাফ পেনিনসুলার বর্ধিত অংশ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে দ্বীপটি সমুদ্রের নিচে নিমজ্জিত হয়ে যায়। প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ অংশ জেগে ওঠে।