‘সাকিবকে আরও আগেই জরিমানা করা উচিত ছিল’
- সময় ০২:১১:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 21
পুঁজিবাজার কারসাজির জন্য বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে আরও দুই বছর আগেই জরিমানা করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ রোববার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘চুরি-দুর্নীতি অনেক দেশেই হয়, কিন্তু বাংলাদেশের মতো দুর্নীতি সচরাচর দেখা যায় না।’ তিনি বলেন, কর কমানো হলেও নিত্যপণ্যের বাজারে দাম কমছে না। চাঁদাবাজির হাত পরিবর্তন হয়েছে, বন্ধ হয়নি।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজার কারসাজির জন্য সাকিব আল হাসানকে দুই বছর আগেই জরিমানা করা উচিত ছিল।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলায় দ্রুত স্বস্তি না দিতে পারলে সংস্কারের জন্য মানুষের ধৈর্য থাকবে না। তিনি বলেন, মধ্যমেয়াদি সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার।
২০২২ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক তদন্ত প্রতিবেদনে শেয়ার কারসাজির অভিযোগে সাকিব আল হাসানের নাম ওঠে। এরপর শেয়ার কারসাজির অভিযোগে জরিমানার মুখেও পড়েন এই ক্রিকেটার। সবশেষ ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইস।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে সামলোচনা করার সুযোগ কম। তিনি বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের একজন। কিন্তু তিনি ক্রিকেটের পাশাপাশি হয়ে উঠেছিলেন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী হতে গিয়ে অনৈতিক অনেক কাজের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। ফলে অতিলোভে কপাল পুরলো সাকিবের এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এবার একা তার কপালে দুঃখ টেনে এনেছেন এমনটা নয়, নিজের মাকেও জড়িয়েছেন সেই দুঃখের ভাগিদার করতে। ফলে নিজের মা শিরিন আকতারকেও সেই কেলেংকারিতে পরতে হয়েছে। মূলত, শেয়ারবাজারে কারসাজিতে ৯০ লাখ টাকা মুনাফা করে এখন ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তার মা শিরিন আকতারকে। চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এ জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি কারসাজির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে।
বিএসইসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে সংঘটিত কারসাজিতে যুক্ত ছিলেন সাকিব আল হাসান। যে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব ব্যবহার করে শেয়ারবাজারে কারসাজি করা হয় সেটি প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের। সেটি সাকিব ও তার মায়ের নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউসে খোলা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ১৭ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রায় ৩৫ টাকা বা ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। ওই সময়ে সিরিজ লেনদেন বা নিজেদের মধ্যে হাতবদল করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন শেয়ারবাজারের বহুল আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরু, সাকিব আল হাসানসহ তাদের নিকটাত্মীয়, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
ডিএসইর তদন্ত ও বিএসইসির প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, মাত্র তিন দিনে ৬৫ টাকা ২৪ পয়সা ক্রয়মূল্যে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের ১০ লাখ ৬০ হাজার শেয়ার কেনা হয় সাকিব আল হাসান ও তার মায়ের বিও হিসাবে। এ জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। গত বছরের ১২, ১৪ এ ১৭ সেপ্টেম্বর ভিন্ন ভিন্ন দামে এসব শেয়ার কেনা হয়। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ২১ হাজার শেয়ার কেনা হয় ১২ ও ১৪ সেপ্টেম্বর। এই দুই দিনে কেনা সব শেয়ারই পাঁচ দিনের ব্যবধানে বিক্রি করে দেন সাকিব আল হাসান। তাতে প্রতি শেয়ারে প্রায় ৯ টাকা করে মুনাফা হয়। সব মিলিয়ে মুনাফা দাঁড়ায় ৯০ লাখ টাকা।
এতে আরও বলা হয়, প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে সাকিব আল হাসান ও তার মা শিরিন আকতারসহ সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। জরিমানা করা অন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হলো ইশাল কমিউনিকেশন, আবুল খায়ের হিরু, আবুল খায়ের হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতলুব, হিরুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্ট, লাভা ইলেকট্রোডস ও জাহিদ কামাল।
এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ইশাল কমিউনিকেশনকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে। ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় আবুল খায়ের হিরুকে, যা তৃতীয় সর্বাধিক। এ ছাড়া আবুল কালাম মাতলুবকে ১০ লাখ টাকা, হিরুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্টকে ১ লাখ টাকা এবং লাভা ইলেকট্রোডস ও জাহিদ কামাল নামের একজনকে ১ লাখ করে টাকা জরিমানা করা হয়।