সরকারের সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট, বক্তব্য বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: তারেক
- সময় ১১:৫৪:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
- / 263
বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সরকারের সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে উপদেষ্টাদের বক্তব্য মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বলেও মনে করেন তিনি। পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহবানসহ প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার জিয়াউর রহমানের ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তারেক রহমান বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিক।
তারেক বলেন, বর্তমানে দেশে কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুর এবং স্বল্প আয়ের মানুষ দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যে দিশেহারা। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। সরকারকে বলবো- জিনিসপত্রের দাম কমাতে পদক্ষেপ নিন। সিন্ডিকেট ভেঙে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনুন। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ানো যেতে পারে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হচ্ছে বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে উপদেষ্টাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
সংস্কারকে ধারাবাহিক ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে সরকারকে এজেন্ডা ঠিক করার পরামর্শ দেন তারেক রহমান। বলেন, এজেন্ডা ও অগ্রাধিকার ঠিক করতে আড়াই মাস অনেক সময়।
তিনি বলেন, সংস্কার অনেক প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেটি ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া। কখনও সময় সাপেক্ষ। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। জনগণের সঙ্গে সংস্কার কাজ করলে সেটি সহজ হয়।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরচারের আমলে তাদের বিভিন্ন নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি-জায়গা, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছিল। তারা সেগুলো পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়েছে। সেগুলো পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব তেমনই রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের দায়িত্ব রয়েছে। সেজন্য সবাইকে স্বেচ্ছাসেবীর মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। আসুন আমরা প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের তরে এই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাই। আমি সবশেষে জুলাই-আগস্টে হতাহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আবার কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, নতুন প্রজন্ম রাজনীতি বিমুখ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে ছাত্রজনতা কিন্তু মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। তারাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়েছেনে। আজকে তারাই রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে তাদের দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
ড. মঈন খান বলেন, বিএনপির হাল ধরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বেগম খালেদা জিয়া হাল ধরেছিলেন। তিনি নেতৃত্ব দিয়ে দলকে মানুষের কাছে নিয়ে যান। এই যে ত্যাগের ধারাবাহিকতা সেটি নতুন প্রজন্মকে মনে রাখা উচিত। জিয়াউর রহমান মাত্র চার বছরে দেশের যে পরিবর্তন এনেছিলেন পরবর্তীতে ৪০ বছরেও অন্যরা আনতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি লগি-বৈঠা ও প্রতিহিংসার নয়, জনগণের রাজনীতি করে। জেডআরএফ যার নামে হয়েছে তার কথা বলতে গেলে বলা শেষ হবে না। জেডআরএফ নিরলসভাবে দেশের গরিব-অসহায় মানুষকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই।
রজতজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, পররাষ্ট্রনীতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এম. শাহীদুজ্জামান, এসএম রাশেদ আহমেদসহ নিহত ও আহত পরিবারের কয়েকজন।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের মধ্যে অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, সাইফুল আলম নীরব, গোলাম সারওয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, ড. মো. আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. মো. আব্দুস সালাম, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. শাহাদত হোসেন, ডা. মো. আনোয়ারুল হক, অধ্যাপক এসএম আব্দুল আওয়াল সোহাগ, ড. আব্দুল করিম, ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, সাংবাদিক আব্দুল হাই শিকদার, কামাল উদ্দিন সবুজ, আমিরুল ইসলাম কাগজী, আতিকুর রহমান রুমন, প্রকৌশলী মাহবুব আলম ও প্রকৌশলী আইয়ুব হোসেন মুকুলসহ অনেক ডাক্তার, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও সাংবাদিকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ১০ জন নিহতের পরিবার এবং ১০ জন আহতকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। নিহতদের পরিচয় তুলে ধরেন ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ডা. পারভেজ রেজা কাকন এবং ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম। আহতদের পরিচয় তুলে ধরেন ডা. সাজিদ ইমতিয়াজ উদ্দিন।
এর আগে সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে নেতাকর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
১৯৯৯ সালের ১৮ অক্টোবর জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি রক্ষায় এই প্রতিষ্ঠাটি গড়ে তুলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্টও তিনি। জেডআরএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘একটি উদ্যোগ, একটু চেষ্টা এনে দেবে স্বচ্ছলতা, দেশে আসবে স্বনির্ভরতা’ স্লোগান নিয়ে গরিব এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করে আসছে।