ঢাকা ০৯:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোমাঞ্চকর রোলারকোস্টার জয় পেয়েছে বার্সা

ক্রীড়া ডেস্ক
  • সময় ০৫:২০:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 17

বার্সার জয়

বেনফিকার স্তাদিও দো স্পোর্ত লিসবোয়ার গ্যালারিতে উপস্থিত ৬৩ হাজারের কিছু বেশি দর্শক এক রোমাঞ্চকর রোলারকোস্টার রাইড উপভোগ করেছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে বেনফিকা আর বার্সেলোনার ম্যাচে যা হয়েছে, সেটাকে রোলারকোস্টার রাইড ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়!

ম্যাচের স্কোরলাইনই চোখ কচলে দেখার মতো – বার্সেলোনা ৫: ৪ বেনফিকা। ম্যাচের শুরুতে বার্সার পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানো, বিরতির আগেই গ্রিক স্ট্রাইকার ভাঙ্গেলিস পাভলিদিসের হ্যাটট্রিকে বেনফিকার ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া, সেখান থেকে আবার দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে একদম শেষ মুহূর্তের গোলে বার্সার রোমাঞ্চকর জয়। ৯ গোলের এ ম্যাচে ৩টিই ছিল পেনাল্টিতে। দুই দলের গোলকিপারের একাধিক অবিশ্বাস্য ভুলে গোল হজম কিংবা আত্মঘাতী গোলও দেখা গেছে। বাদ যায়নি রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখার ঘটনাও। একটা ম্যাচে এর চেয়ে বেশি আর কী-ই বা হতে পারে?

বহু বাঁকবদলের মহানাটকীয় ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত করেছে বার্সা। গ্রুপ পর্বের ৭ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে ফ্লিকের দল। সমান ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে ১৮ নম্বরে আছে পর্তুগালের ক্লাবটি।

গতকাল লিসবনে ম্যাচের মাত্র দ্বিতীয় মিনিটেই স্বাগতিক সমর্থকদের আনন্দে ভাসান পাভলিদিস। তমাস আরাউহোর বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের ভেতর পাস দিয়েছিলেন আলভারো ক্যারেরাস। স্প্যানিশ রাইট ব্যাকের ক্রসে বক্সে ভেতর থেকে গোল দারুণ ফিনিশিংয়ে বেনফিকাকে এগিয়ে (১-০) দেন পাভলিদিস।

অবশ্য ম্যাচে ফিরতে বেশি সময় নেয়নি বার্সা। বক্সের ভেতর আলেহান্দ্রো বালদে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় কাতালান ক্লাবটি। ম্যাচের ১৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে স্কোরলাইন ১-১ করেন লেভানদফস্কি। এরপর দুবার গোলের খুব কাছে চলে গিয়েছিল বার্সা। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন গাভি- লেভানদফস্কিরা।

বার্সার জয়
বার্সার জয়

ম্যাচের ২২তম মিনিটে শিশুতোষ ভুল করে বসেন চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার জার্সিতে প্রথম বারের মতো খেলতে নামা গোলকিপার ভয়চেক শেজনি। বল ক্লিয়ার করতে বক্সের বাইরে এসে উল্টো সতীর্থ বালদের শরীরে শট নিয়ে বসেন সেজনি। এতে দুজনেই মাঠে লুটিয়ে পড়েন। এই সুযোগে ফাঁকায় বল পেয়ে বেনফিকাকে আরেকদফা এগিয়ে (২-১) দেন পাভলিদিস।

৬ মিনিট পর আবারও ভুল করেন সেজনি। বক্সের ভেতর আকতুরকোগলুকে ফাউল করেন বার্সা গোলকিপার। উপহার পাওয়া পেনাল্টিতে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করে স্কোরলাইন ৩-১ করে পাভলিদিস। গ্রিক স্ট্রাইকারের হ্যাটট্রিকে বেনফিকাও যেন গ্রিক রূপকথা লেখার পথে।

চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে ম্যাচের শুরু থেকে সময় বিবেচনায় এটি তৃতীয় দ্রুততম হ্যাটট্রিক। এর আগে ২০২২ সালে সালসবুর্গের বিপক্ষে লেভানদফস্কি ২৩ মিনিটে ও ১৯৯৬ সালে মার্কো সিমোন রোসেনবার্গের বিপক্ষে ২৪ মিনিটে হ্যাটট্রিক করেছিলেন।

বার্সার জয়
বার্সার জয়

৩-১ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বার্সা। বিরতির পর বৃষ্টির মাত্রাও বাড়তে থাকে। সঙ্গে বাড়তে থাকে ম্যাচের নাটকীয়তাও। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে ভুল করে বসেন বেনফিকা গোলকিপার আনাতেলি ত্রুবিন। ২৩ বছর বয়সী এ ইউক্রেন গোলকিপারের গোল কিক বক্সের ঠিক বাইরেই দাঁড়ানো রাফিনিয়ার মাথায় লাগে, সেখান থেকে বল জড়ায় বেনফিকার জালে! কী অদ্ভুত গোল!

এর ৪ মিনিট পর বার্সা ডিফেন্ডার রোনাল্দ আরাউহোর ভুলে আবারও দুই গোলের লিড (৪-২) পায় বেনফিকা। স্লাইড করে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে জড়িয়ে বসেন পর্তুগিজ উইঙ্গার। মনে হচ্ছিল, বার্সা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

তবে কাতালান ক্লাবটিকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ বাতলে দেয় বেনফিকাই। ম্যাচের ৭৮ মিনিটে বক্সের ভেতর ইয়ামালকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় ফ্লিকের দল। স্পটকিক থেকে ঠান্ডা মাথায় ব্যবধান কমান (৪-৩) লেভানদফস্কি। নির্ধারিত সময়ের ৪ মিনিট বাকি থাকতে পেদ্রির ক্রসে দারুণ হেডে স্কোরলাইন ৪-৪ করেন এরিক গার্সিয়া।

বার্সার জয়
বার্সার জয়

নাটকের তখনও বাকি। যোগ করা সময়ের শেষ দিকে বার্সার দুই খেলোয়াড়ের ধাক্কায় প্রতিপক্ষের বক্সের ভেতর পড়ে যান লিয়ান্দ্রো বারেইরো। এতে পেনাল্টির আবেদন জানায় বেনফিকা। কিন্তু রেফারি সে আবেদনে সাড়া না দিয়ে খেলা চালিয়ে যান। সেখান থেকেই প্রতি আক্রমণে ওঠে বার্সা। ফেরান তোরেসের পাসে বল পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় বক্সে ঢুকে বেনফিকার এক ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে জোরালো শটে জালে বল জড়ান রাফিনিয়া। ব্রাজিলিয়ান গোলকিপারের গোলের কিছুক্ষণ পরেই শেষ বাঁশি বাজান রেফারি।

ম্যাচ শেষ মুহূর্তে আরও একটু নাটক হয়েছে। বারেইরো বার্সার বক্সে পড়ে যাওয়ার পর পেনাল্টি না দেওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে লাল কার্ড দেখেন বেনফিকার বেঞ্চে থাকা ফুটবলার আর্থুর কাবরাল। প্রতিপক্ষের সঙ্গে তর্কে জড়ানোয় হলুদ কার্ড দেখেছেন বার্সার ফেরমিন লোপেসও। হয়তো লোপেস সেটি মনে রাখবেন না! এর কয়েক সেকেন্ড পরেই যে শেষ বাঁশি বাজে। আর আনন্দে মেতে ওঠে জয়োল্লাসে মেতে ওঠে তাঁর দল।

শেয়ার করুন

রোমাঞ্চকর রোলারকোস্টার জয় পেয়েছে বার্সা

সময় ০৫:২০:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

বেনফিকার স্তাদিও দো স্পোর্ত লিসবোয়ার গ্যালারিতে উপস্থিত ৬৩ হাজারের কিছু বেশি দর্শক এক রোমাঞ্চকর রোলারকোস্টার রাইড উপভোগ করেছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে বেনফিকা আর বার্সেলোনার ম্যাচে যা হয়েছে, সেটাকে রোলারকোস্টার রাইড ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়!

ম্যাচের স্কোরলাইনই চোখ কচলে দেখার মতো – বার্সেলোনা ৫: ৪ বেনফিকা। ম্যাচের শুরুতে বার্সার পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানো, বিরতির আগেই গ্রিক স্ট্রাইকার ভাঙ্গেলিস পাভলিদিসের হ্যাটট্রিকে বেনফিকার ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া, সেখান থেকে আবার দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে একদম শেষ মুহূর্তের গোলে বার্সার রোমাঞ্চকর জয়। ৯ গোলের এ ম্যাচে ৩টিই ছিল পেনাল্টিতে। দুই দলের গোলকিপারের একাধিক অবিশ্বাস্য ভুলে গোল হজম কিংবা আত্মঘাতী গোলও দেখা গেছে। বাদ যায়নি রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখার ঘটনাও। একটা ম্যাচে এর চেয়ে বেশি আর কী-ই বা হতে পারে?

বহু বাঁকবদলের মহানাটকীয় ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত করেছে বার্সা। গ্রুপ পর্বের ৭ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে ফ্লিকের দল। সমান ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে ১৮ নম্বরে আছে পর্তুগালের ক্লাবটি।

গতকাল লিসবনে ম্যাচের মাত্র দ্বিতীয় মিনিটেই স্বাগতিক সমর্থকদের আনন্দে ভাসান পাভলিদিস। তমাস আরাউহোর বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সের ভেতর পাস দিয়েছিলেন আলভারো ক্যারেরাস। স্প্যানিশ রাইট ব্যাকের ক্রসে বক্সে ভেতর থেকে গোল দারুণ ফিনিশিংয়ে বেনফিকাকে এগিয়ে (১-০) দেন পাভলিদিস।

অবশ্য ম্যাচে ফিরতে বেশি সময় নেয়নি বার্সা। বক্সের ভেতর আলেহান্দ্রো বালদে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় কাতালান ক্লাবটি। ম্যাচের ১৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে স্কোরলাইন ১-১ করেন লেভানদফস্কি। এরপর দুবার গোলের খুব কাছে চলে গিয়েছিল বার্সা। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন গাভি- লেভানদফস্কিরা।

বার্সার জয়
বার্সার জয়

ম্যাচের ২২তম মিনিটে শিশুতোষ ভুল করে বসেন চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার জার্সিতে প্রথম বারের মতো খেলতে নামা গোলকিপার ভয়চেক শেজনি। বল ক্লিয়ার করতে বক্সের বাইরে এসে উল্টো সতীর্থ বালদের শরীরে শট নিয়ে বসেন সেজনি। এতে দুজনেই মাঠে লুটিয়ে পড়েন। এই সুযোগে ফাঁকায় বল পেয়ে বেনফিকাকে আরেকদফা এগিয়ে (২-১) দেন পাভলিদিস।

৬ মিনিট পর আবারও ভুল করেন সেজনি। বক্সের ভেতর আকতুরকোগলুকে ফাউল করেন বার্সা গোলকিপার। উপহার পাওয়া পেনাল্টিতে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করে স্কোরলাইন ৩-১ করে পাভলিদিস। গ্রিক স্ট্রাইকারের হ্যাটট্রিকে বেনফিকাও যেন গ্রিক রূপকথা লেখার পথে।

চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে ম্যাচের শুরু থেকে সময় বিবেচনায় এটি তৃতীয় দ্রুততম হ্যাটট্রিক। এর আগে ২০২২ সালে সালসবুর্গের বিপক্ষে লেভানদফস্কি ২৩ মিনিটে ও ১৯৯৬ সালে মার্কো সিমোন রোসেনবার্গের বিপক্ষে ২৪ মিনিটে হ্যাটট্রিক করেছিলেন।

বার্সার জয়
বার্সার জয়

৩-১ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বার্সা। বিরতির পর বৃষ্টির মাত্রাও বাড়তে থাকে। সঙ্গে বাড়তে থাকে ম্যাচের নাটকীয়তাও। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে ভুল করে বসেন বেনফিকা গোলকিপার আনাতেলি ত্রুবিন। ২৩ বছর বয়সী এ ইউক্রেন গোলকিপারের গোল কিক বক্সের ঠিক বাইরেই দাঁড়ানো রাফিনিয়ার মাথায় লাগে, সেখান থেকে বল জড়ায় বেনফিকার জালে! কী অদ্ভুত গোল!

এর ৪ মিনিট পর বার্সা ডিফেন্ডার রোনাল্দ আরাউহোর ভুলে আবারও দুই গোলের লিড (৪-২) পায় বেনফিকা। স্লাইড করে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে জড়িয়ে বসেন পর্তুগিজ উইঙ্গার। মনে হচ্ছিল, বার্সা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

তবে কাতালান ক্লাবটিকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ বাতলে দেয় বেনফিকাই। ম্যাচের ৭৮ মিনিটে বক্সের ভেতর ইয়ামালকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় ফ্লিকের দল। স্পটকিক থেকে ঠান্ডা মাথায় ব্যবধান কমান (৪-৩) লেভানদফস্কি। নির্ধারিত সময়ের ৪ মিনিট বাকি থাকতে পেদ্রির ক্রসে দারুণ হেডে স্কোরলাইন ৪-৪ করেন এরিক গার্সিয়া।

বার্সার জয়
বার্সার জয়

নাটকের তখনও বাকি। যোগ করা সময়ের শেষ দিকে বার্সার দুই খেলোয়াড়ের ধাক্কায় প্রতিপক্ষের বক্সের ভেতর পড়ে যান লিয়ান্দ্রো বারেইরো। এতে পেনাল্টির আবেদন জানায় বেনফিকা। কিন্তু রেফারি সে আবেদনে সাড়া না দিয়ে খেলা চালিয়ে যান। সেখান থেকেই প্রতি আক্রমণে ওঠে বার্সা। ফেরান তোরেসের পাসে বল পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় বক্সে ঢুকে বেনফিকার এক ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে জোরালো শটে জালে বল জড়ান রাফিনিয়া। ব্রাজিলিয়ান গোলকিপারের গোলের কিছুক্ষণ পরেই শেষ বাঁশি বাজান রেফারি।

ম্যাচ শেষ মুহূর্তে আরও একটু নাটক হয়েছে। বারেইরো বার্সার বক্সে পড়ে যাওয়ার পর পেনাল্টি না দেওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে লাল কার্ড দেখেন বেনফিকার বেঞ্চে থাকা ফুটবলার আর্থুর কাবরাল। প্রতিপক্ষের সঙ্গে তর্কে জড়ানোয় হলুদ কার্ড দেখেছেন বার্সার ফেরমিন লোপেসও। হয়তো লোপেস সেটি মনে রাখবেন না! এর কয়েক সেকেন্ড পরেই যে শেষ বাঁশি বাজে। আর আনন্দে মেতে ওঠে জয়োল্লাসে মেতে ওঠে তাঁর দল।