রাজউকে একাই একশো, কে এই রাজিয়া!
- সময় ১২:০৪:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 716
সরকারি চাকুরির শুরুতে ছুটি না নিয়ে এবং জিও ( গভারমেন্ট অর্ডার ) ছাড়াই বিদেশ যাওয়ার তথ্য মিলেছে। অভিযোগ আছে রাজউক প্রশাসনে কাজ করার সময় নিজের বোনকে রাজউকের চাকুরি পরীক্ষায় অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, গড়েছেন অবৈধ সম্পত্তি ও ব্যবসা। এতসব অভিযোগ থাকার পরও মিলেছে তার পদোন্নতি। রাজউক জোন ৮ এর পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) রাজিয়া সুলতানা, যিনি সংস্থাটির একাই একশো ক্ষমতাবান কর্মকর্তা বলেও দাবি করেছেন খোদ রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই।
এদিকে, নকশা বহির্ভুত অবকাঠামো নির্মাণে নারায়ণগঞ্জ দেশের অন্য যে কোনো অঞ্চলের থেকে এগিয়ে। যাদের নকশা অনুমোদন ও নির্মাণ তদারকি করার কথা সেই রাজউকের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে এসব দেখেও না দেখার ভান করার। যার ফলে নারায়ণগঞ্জের মত গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। মানুষের জন্য তৈরি হচ্ছে পরিকল্পনার নামে এক অপরিকল্পিত নগরায়নের ফাঁদ।
সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জে রাজউক জোন ৮ থেকে ইয়াশফি ডেভলপার লিমিটেড, সুফিয়া কমপ্লেক্স, সেন্ট্রাল প্লাজা, আছিয়া ম্যানশন, টিপিল টাওয়ার, কেএমএস টাওয়ারসহ একাধিক ভবন নির্মাণে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজউক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, রাজউক ৮ এর কর্মকর্তারাই নারায়ণগঞ্জের পরিকল্পিত নগরায়নের অন্তরায় হয়ে উঠেছে। ভবন নির্মাণের নিয়মনীতি নারায়নগঞ্জ জোনে শুধু কাগজ কলমের বিষয়, এসব অনিয়ম রোধে কোনো ব্যবস্থা তো দূরের কথা, তদারকিও হচ্ছে না।
পদোন্নতি পাওয়া পরিচালক রাজিয়া সুলতানার নীরব ভূমিকাও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এছাড়াও রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চাকুরির শুরুতে ছুটি না নিয়ে এবং জিও ( গভারমেন্ট অর্ডার ) ছাড়াই বিদেশ যাওয়ার তথ্য মিলেছে, অভিযোগ আছে রাজউক প্রশাসনে কাজ করার সময় নিজের বোনকে রাজউকের চাকুরি পরিক্ষায় অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তা নিয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
নারায়ণগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, চাষাড়ার ৬৯ নং প্লটে সুফিয়া কমপ্লেক্স ৯ তলার নকশায় তৈরি হয়েছে ১০ তলা। সে অভিযোগও আমলে নেয়নি রাজিয়া সুলতানা। সেন্ট্রাল প্লাজার ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায় অভিযোগ উঠা ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই, ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, বিদ্যুতের সাবস্টেশন সব এক জায়গায় করার পক্রিয়াও চলছে।
এমনকি নারায়ণগঞ্জ রাজউক -৮’র অফিস টিপিএল টাওয়ারে রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতি, রাজউক কয়েকবার জরিমানা করেও সংশোধন করাতে পারে নাই টিপিএল ভবন। এ ভবনের ঠিক পাশেই কে এম এস টাওয়ার সেখানেও ভবন নির্মানে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও চুপ রয়েছে রাজউক।
এছাড়া, সেন্ট্রাল প্লাজা গাড়ী পার্কিংযের জায়গায় গোডাউন বানিয়ে দোকান ভাড়া দেয়া হয়েছে, নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এমনকি মূল ভবন থেকে রাস্তা রাখার কথা, তারা তাও রাখেনি।
কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, সেন্ট্রাল প্লাজার মালিক আলমগীরের সাথে রাজউকের অফিসারদের দহরম-মহরমের কথা। সেই সম্পর্ক ও অর্থের বিনিময়ে আলমগীর অন্য আরও দুটি ভবন এমন নকশা বহির্ভূত কাজ করেছেন, জানিয়েছেন রাজউক জোন ৮ এর নাম প্রকাশ না করতে চাওয়া এক কর্মকর্তা।
স্থানীয় একাধিক বাড়ির মালিক প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাথমিক ছাড়পত্র থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন প্রতি পদক্ষেপে ঘুষ বাণিজ্য রাজউক জোন ৮ অফিসের প্রত্যাহিক বিষয়, আগে তবুও কিছুটা গোপন ছিল এখন নতুন পরিচালক রাজিয়া সুলতানা আসার পর ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, রাজিয়া সুলতানা, সহকারী পরিচালক হিসেবে রাজউকে যোগদান ২৪ মার্চ ২০১১ তারিখ। চাকরির শুরুতে জিও ছাড়াই তিনি ২০১১ সালের ১৭ মে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণে যান (পাসপোর্ট নাম্বার – Z 0*44**80 ) । যা চাকুরির বিধিমালা পরিপন্থি এমনকি ধারবাহিকভাবে রাজিয়া সুলতানার বিদেশ ভ্রমণ নিয়েও গুঞ্জন আছে খোদ রাজউক অফিসে, মালায়েশিয়া, দুবাই, কানাডা, আমেরিকা, ঘুরে বেরিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র নিশিচত করেছে, দেশের বাইরে রাজিয়া সুলতানার একাধিক ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে, তার ভ্রমণের কাগজপত্র পর্যালোচান করলে বিনিয়োগের সূত্র পাওয়া যাবে।
দেশের মধ্যে তার নামে বেনামে অঢেল সম্পত্তির তথ্য নিয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে, ইতিমধ্যে পূর্বাচলে বিশেষ ব্যবস্থায় বাগিয়ে নিয়েছেন প্লট, হাজী ক্যাম্পের বিপরীতে দক্ষিণখানে করেছেন ৫ তলা বাড়ি। পূর্বাচলের প্লটের ক্ষেত্রেও অসৎ উপায় অবলম্বন করেছেন রাজিয়া সুলতানা। সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাটাগরিতে বরাদ্দ পাওয়া প্লট কৌশলে নিজের করে নেওয়ার অভিযোগ আছে।
জিও ছাড়া বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য, প্রশাসন ও অর্থ ও যুগ্মসচিব ড. আলম মোস্তফা বলেন, জিও ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ নেই, যদি কেউ করে থাকে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
রাজউক প্রশাসনে কাজ করার সময় নিজের বোনকে রাজউকের চাকুরি পরীক্ষায় অনৈতিক সুবিধা দিতে গিয়ে তখনকার পরিচালক (প্রশাসন) মুহম্মদ কামরুজ্জামান হাতে ধৃত হন। অসদাচরণ ও অনৈতিকতার জন্য শাস্তির বিধান থাকলেও পরিচালক রাজিয়া সুলতানাকে জবাবদিহিতার আওতায় নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি উল্টো দিতে হয়েছে পদোন্নতি।
মুহম্মদ কামরুজ্জামান এখন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক তিনি ফোনে, বিষয়টি অনেকদিন হয়েছে ঠিক মনে নাই বলে জানান প্রতিবেদককে।
রাজিয়ার পদোন্নতিতেও আছে নানা গুঞ্জন। জানা যায়, রাজউকে উপপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১১টি এর মধ্যে পূরণকৃত পদের সংখ্যা ০৮টি। সেখানে শুন্য পদের সংখ্যা ছিল ০৩টি। ইতিমধ্যে রাজউক কতৃপক্ষ ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজিয়া সুলতানাকে শুন্য পদের বিপরীতে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ৮ এর পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেছে। অন্যদিকে উপ পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) হিসেবে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১২টি। এই ১২ টি পদই শূন্য আছে। এই ১২টি পদ থেকে পরিচালক হিসাবে কাউকে দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে না, যা রাজউক অভ্যান্তরে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে রাজিয়া সুলতানাকে ফোন করলে এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠালে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।