ঢাকা ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাখাইনে বোমা হামলা, বাংলাদেশ সীমান্তে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, উখিয়া
  • সময় ১১:১৯:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
  • / 37

রাখাইনে বোমা হামলা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে কয়েক বছর ধরেই। তবে গত এক বছরে সেই সংঘাতের মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। এর জের ধরে বাংলাদেশও আক্রন্ত হয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নানা সময়ে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এবার সীমান্তের ওপারে বোমা হামলার ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

এক বছরের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সবচেয়ে বেশি আতংকিত হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি  সীমান্তের বাসিন্দারা।  সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান গত এক বছরে মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে এমন বিকট শব্দ কখনও শোনা যায়নি।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পর পর ৪ টি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে টেকনাফ সীমান্তে। আর বিস্ফোরণের শব্দের সাথে সাথে সীমান্ত এলাকার বসতঘর, ভবনগুলো থর থর করে কেঁপে উঠে। ঘর, অফিস বা দোকানে বসে থাকা মানুষগুলো দাঁড়িয়ে বাইরে ছুটে আসেন। মনে করেন ভয়াবহ কোনো ভূমিকম্প হয়েছে।

টেকনাফের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, পরপর যে চারটি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে সেগুলো হল- মংডু টাউনশিফের প্যারাংপুরু ও আশিক্কা পাড়ায় যুদ্ধবিমান দিয়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে ওইপার থেকে ফোন করে জেনেছেন। চারটি বোমা চিংড়ি খামার এলাকায় পড়েছে তবে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

রাত সাড়ে ৮ টার পর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক সীমান্ত এলাকার লোকজন এমন আতঙ্কের কথা প্রকাশও করেছেন। এরমধ্যে আজিজুল হক রানা নামের ঘুমধুম সীমান্তের এক ব্যক্তি লেখেছেন, ঘুমধুম সীমান্তের মিয়ানমার অভ্যন্তরে পর পর তিনটি বোমার বিস্ফোরণ! বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়েছে এপারে।

টেকনাফ পৌরসভার কুলালপাড়ার বাসিন্দা এবং একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার টেকনাফ প্রতিনিধি আব্দুস সালাম লেখেছেন, “সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতংকিত টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।”

টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর হোসেন আহমদ লেখেছেন, বারবার বিকট শব্দ, হে আল্লাহ সকলকে হেফাজত করুন

নুরুল আমিন আকাশ নামের একজন লেখেছেন, রাতের আকাশে বিমান চলাচল, বিকট শব্দে কাঁপছে টেকনাফ শহর। টেকনাফের সাংবাদিক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আশেকউল্লাহ ফারুকী লেখেছেন, “স্মরণকালের মিয়ানমারের শক্তিশালী বোমার বিকট শব্দে টেকনাফ কাঁপলো। একইভাবে আতংক প্রকাশ করেছেন সীমান্তবর্তি অনেকেই।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের  ইউপির চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, আজ বৃহস্পতিবার রাতের বিস্ফোরণের শব্দটি অনেক বেশি ভয়াবহ। এমন শব্দ আর কখনও শোনা যায়নি। ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন ফোন দিয়ে বিকট শব্দের বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন।

পরপর এই বিকট শব্দের কারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে খোলা আকাশের নিচে নেমে এসেছেন। তবে এলাকার বিভিন্ন বাড়িঘরে দেওয়ালে ফাটল ধরেছে বলে খবর শোনা যাচ্ছে । উখিয়ার পালংখালীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দীন বলেন, এইরকম বিকট শব্দ উখিয়া মানুষ আগে কখনো শুনেননি।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মুহাম্মদ  গিয়াস উদ্দিন বলেন, `এরকম বিকট শব্দ আর কখনো শুনতে পাইনি। প্রথমে আমি মনে করেছিলাম ভূমিকম্পে থানা কেঁপে উঠেছে। পরে বুঝতে পারলাম মিয়ানমারের ওই পারে বোম্পিং হচ্ছে।’

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়,টানা নয় মাসের বেশি সময় রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে আরাকান আর্মি। ইতিমধ্যে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের আশপাশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) বেশ কিছু সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে। বর্তমানে মংডু টাউনের অভ্যন্তরে থাকা দেশটির সেনাবাহিনী ও বিজিপির দুটি ব্যাটালিয়ান দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হলেও আজকের বিকট বিস্ফোরণের শব্দে মানুষের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

শেয়ার করুন

রাখাইনে বোমা হামলা, বাংলাদেশ সীমান্তে আতঙ্ক

সময় ১১:১৯:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে কয়েক বছর ধরেই। তবে গত এক বছরে সেই সংঘাতের মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। এর জের ধরে বাংলাদেশও আক্রন্ত হয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নানা সময়ে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এবার সীমান্তের ওপারে বোমা হামলার ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

এক বছরের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে সবচেয়ে বেশি আতংকিত হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি  সীমান্তের বাসিন্দারা।  সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান গত এক বছরে মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে এমন বিকট শব্দ কখনও শোনা যায়নি।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পর পর ৪ টি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে টেকনাফ সীমান্তে। আর বিস্ফোরণের শব্দের সাথে সাথে সীমান্ত এলাকার বসতঘর, ভবনগুলো থর থর করে কেঁপে উঠে। ঘর, অফিস বা দোকানে বসে থাকা মানুষগুলো দাঁড়িয়ে বাইরে ছুটে আসেন। মনে করেন ভয়াবহ কোনো ভূমিকম্প হয়েছে।

টেকনাফের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, পরপর যে চারটি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে সেগুলো হল- মংডু টাউনশিফের প্যারাংপুরু ও আশিক্কা পাড়ায় যুদ্ধবিমান দিয়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে ওইপার থেকে ফোন করে জেনেছেন। চারটি বোমা চিংড়ি খামার এলাকায় পড়েছে তবে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

রাত সাড়ে ৮ টার পর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক সীমান্ত এলাকার লোকজন এমন আতঙ্কের কথা প্রকাশও করেছেন। এরমধ্যে আজিজুল হক রানা নামের ঘুমধুম সীমান্তের এক ব্যক্তি লেখেছেন, ঘুমধুম সীমান্তের মিয়ানমার অভ্যন্তরে পর পর তিনটি বোমার বিস্ফোরণ! বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়েছে এপারে।

টেকনাফ পৌরসভার কুলালপাড়ার বাসিন্দা এবং একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার টেকনাফ প্রতিনিধি আব্দুস সালাম লেখেছেন, “সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতংকিত টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।”

টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর হোসেন আহমদ লেখেছেন, বারবার বিকট শব্দ, হে আল্লাহ সকলকে হেফাজত করুন

নুরুল আমিন আকাশ নামের একজন লেখেছেন, রাতের আকাশে বিমান চলাচল, বিকট শব্দে কাঁপছে টেকনাফ শহর। টেকনাফের সাংবাদিক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আশেকউল্লাহ ফারুকী লেখেছেন, “স্মরণকালের মিয়ানমারের শক্তিশালী বোমার বিকট শব্দে টেকনাফ কাঁপলো। একইভাবে আতংক প্রকাশ করেছেন সীমান্তবর্তি অনেকেই।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের  ইউপির চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, আজ বৃহস্পতিবার রাতের বিস্ফোরণের শব্দটি অনেক বেশি ভয়াবহ। এমন শব্দ আর কখনও শোনা যায়নি। ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন ফোন দিয়ে বিকট শব্দের বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন।

পরপর এই বিকট শব্দের কারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে খোলা আকাশের নিচে নেমে এসেছেন। তবে এলাকার বিভিন্ন বাড়িঘরে দেওয়ালে ফাটল ধরেছে বলে খবর শোনা যাচ্ছে । উখিয়ার পালংখালীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দীন বলেন, এইরকম বিকট শব্দ উখিয়া মানুষ আগে কখনো শুনেননি।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মুহাম্মদ  গিয়াস উদ্দিন বলেন, `এরকম বিকট শব্দ আর কখনো শুনতে পাইনি। প্রথমে আমি মনে করেছিলাম ভূমিকম্পে থানা কেঁপে উঠেছে। পরে বুঝতে পারলাম মিয়ানমারের ওই পারে বোম্পিং হচ্ছে।’

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়,টানা নয় মাসের বেশি সময় রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে আরাকান আর্মি। ইতিমধ্যে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের আশপাশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) বেশ কিছু সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে। বর্তমানে মংডু টাউনের অভ্যন্তরে থাকা দেশটির সেনাবাহিনী ও বিজিপির দুটি ব্যাটালিয়ান দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হলেও আজকের বিকট বিস্ফোরণের শব্দে মানুষের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।