যেভাবে ‘স্বৈরশাসক’ হয়ে উঠলেন এরদোয়ান

- সময় ১২:০৪:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
- / 24
তুরস্কে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। প্রতিবাদকারীরা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে স্বৈরশাসনের অভিযোগ তুলছেন। আন্তর্জাতিক মহলও এরদোয়ানের সরকারের কঠোর সমালোচনা করছে।
কী ঘটেছে আসলে?
গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত। তার গ্রেপ্তারের পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। প্রতিবাদকারীরা বলছেন, এরদোয়ান বিরোধীদের দমন করতেই এই ব্যবস্থা নিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তুরস্ককে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। জার্মানি বলেছে, রাজনীতি কোর্টরুমে চলতে পারে না, জনগণের রায়ই চূড়ান্ত হওয়া উচিত। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এরদোয়ানের দমননীতির কঠোর সমালোচনা করছে।
সংস্কারক থেকে স্বৈরশাসক?
এরদোয়ান একসময় তুরস্কের উন্নয়নের প্রতীক ছিলেন। ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়, তুরস্কের অর্থনীতি ও অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। ইইউতে যোগদানের জন্য আইনি সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং তুরস্কের মধ্যবিত্ত শ্রেণি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তিনি বিরোধীদের ওপর কঠোর হতে শুরু করেন।
২০১৩: গেজি পার্ক আন্দোলন
গেজি পার্কে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে বিরোধীদের সংগঠিত হওয়ার শুরু। তখন থেকেই এরদোয়ান কঠোর হাতে আন্দোলন দমন করা শুরু করেন।
২০১৬: ব্যর্থ অভ্যুত্থান
২০১৬ সালে একদল সেনা এরদোয়ানকে উৎখাত করতে চেয়েছিল। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তিনি হাজার হাজার বিরোধী নেতা, সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেন।
২০১৮: নতুন সংবিধান ও স্বৈরতন্ত্রের পথে অগ্রসর
২০১৮ সালে তুরস্কের সংবিধান পরিবর্তন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদ বাতিল করা হয় এবং এরদোয়ান এককভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা পান। তার দল একে পার্টি এখন বিচার ব্যবস্থা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
গণমাধ্যম ও বিরোধী কণ্ঠের ওপর দমননীতি
তুরস্কে এখন স্বাধীন গণমাধ্যমের সংখ্যা খুবই কম। সমালোচনামূলক সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বা সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। সাংবাদিকরা এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই গ্রেপ্তার হচ্ছেন। ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর অন্তত ৯ জন সাংবাদিক আটক হয়েছেন।
এরদোয়ানের ভবিষ্যৎ কী?
ইস্তাম্বুলের মেয়র গ্রেপ্তারের ঘটনায় জনগণের ক্ষোভ বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এরদোয়ান তার পুরো প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করছেন। তবে জনগণের ক্ষোভ তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
এরদোয়ান এখন সম্পূর্ণভাবে তার পার্টির ওপর নির্ভরশীল এবং বিচারব্যবস্থাকেও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই কঠোরতা তার জনপ্রিয়তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে যদি অর্থনৈতিক সংকট আরও প্রকট হয় এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়।
তথ্য: ডয়েচে ভেলে, রয়টার্স