যে কারণে ১ জানুয়ারি হচ্ছে না বই উৎসব
- সময় ০৩:২৩:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 28
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, নতুন পাঠ্যপুস্তকে থাকছে জুলাই-আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি। তবে অন্যান্য বারের মতো এবার ১ জানুয়ারি বই উৎসব হচ্ছে না।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
বিলম্বের কারণ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, যেহেতু বাইরের একটি দেশের বই ছাপার কথা ছিল। ৫ আগস্টের পরে সেই টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার আহ্বানের ফলে বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এজন্য বই বিতরণে কিছুটা দেরি হলেও প্রাথমিকের বই জানুয়ারির মধ্যেই বিতরণ করা সম্ভব হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের ওপরে কিছুটা বাড়তি চাপ পড়বে এটি ঠিক। এটি মেনে নিতে হবে। তার কারণ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেশে সকল ক্ষেত্রেই একটি প্রভাব পড়ে। যেটি শিক্ষাক্ষেত্রেও পড়েছে। এটি মেনে নিয়েই আমাদেরকে সামনে এগোতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু হবে। যা আগামী বছরই প্রকল্প আকারে চালু হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়াতে কেবল বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ সবচেয়ে কম, বাজেটের মাত্র দুই শতাংশ। কিন্তু ইউনেস্কোর মতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাজেটের ছয় শতাংশ হওয়া উচিত। শিক্ষকদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদার উন্নতি ঘটানো এখন সময়ের দাবি। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যই হলো শিশুদের অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তোলা। একই সঙ্গে তাকে ভাষাজ্ঞানে ও গণিতে দক্ষ করা। পড়তে পারা মানুষের সামনে বিশ্বের জ্ঞানরাজ্যের দ্বার খুলে যায়। যার সূচনা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই হয়।
উপদেষ্টা আরও বলেন, যেসকল বিদ্যালয়গুলোয় খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী আছে সেগুলোকে পার্শ্ববর্তী স্কুলের সঙ্গে একীভূত করার চিন্তা রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের মতো কোটা না রাখার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সাধারণভাবে অন্য চাকরিতে যেমন সাত শতাংশ কোটা রয়েছে, এখানেও তেমনটি থাকবে। তবে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও গণিতে দক্ষ করে তুলতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট নিয়োগের ২০ শতাংশ গণিত ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলো থেকে পাস করাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। গাইড বই ও প্রাইভেট কোচিংয়ের বিষয়টি নিরুৎসাহিত করতে হবে। শহরাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করার কাজ চলমান আছে।
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ ফিরোজ সরকার। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আতিকুর রহমান। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক হোসাইন শওকত।
সভায় খুলনা বিভাগের ১০ জন জেলা প্রশাসক, প্রতিনিধি এবং বিভাগীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এনসিটিবির তথ্য অনুসারে, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি বই ছাপানো হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের বই ৯ কোটির বেশি আর মাধ্যমিকে ২১ কোটি ৩২ লাখ। চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই দেয়া হয়েছিল। আগামী বছর এটা যাবে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রতিটি শ্রেণিতে ১০টি করে বই হওয়ায় এবার তিন কোটি বই কম ছাপা হচ্ছে। গত বছর প্রায় ৩৩ কোটি বই ছাপানো হয়েছিল।
মুদ্রণ সমিতি সূত্রে জানা যায়, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আর মাত্র দেড় মাস অবশিষ্ট থাকলেও এখনো প্রায় ১৮ কোটি বই ছাপানো বাকি। এরমধ্যে ২য় ও ৩য় শ্রেণির বইয়ে সংশোধনী থাকায় দেরিতে ছাপা শুরু হয়েছে। এছাড়া প্রথম ও ৫ম শ্রেণির ৮০ শতাংশ বই ছাপা শেষ হয়েছে। এতে প্রাথমিকের ৩ কোটির বেশি বই এখনো ছাপা বাকি রয়েছে। এছাড়া ৯ম শ্রেণির বইয়ের ওয়ার্ক অর্ডার হয়নি। এটির ছাপা শুরু হতেও সময় লাগবে। ষষ্ঠ আর সপ্তম শ্রেণির মোট বইয়ের অর্ধেক ছাপানো হয়েছে। এছাড়া অষ্টম শ্রেণির বইও ছাপা শুরু হয়নি। সব মিলিয়ে মাধ্যমিকে ১৪ কোটি বই এখনো ছাপা বাকি রয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান ও ইতিহাস বইতে সংশোধনের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে ১৮ কোটি বই এখনও ছাপা হয়নি। ফলে নতুন বছরের প্রথমদিনে সব শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই উঠবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।