যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রবন্ধ লেখায় তুর্কি ছাত্রী আটক

- সময় ১২:২৮:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
- / 44
যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট এক ছাত্রীকে ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রবন্ধ লেখায় আটক করেছে দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এজেন্টরা। তুর্কি ওই নাগরিকের আটকের বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি মার্কিন প্রশাসন। বুধবার (২৬ মার্চ) এ তথ্য জানিয়েছেন বোস্টনের ফেডারেল আদালতের আইনজীবী মাহসা খানবাবাই। খবর এবিসি নিউজের
আইনজীবী মাহসা খানবাবাই বলেন, ৩০ বছর বয়সি শিক্ষার্থী রুমেসা ওজতুর্ক গত মঙ্গলবার রাতে সোমারভিলে তার বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন, ঠিক তখনই তাকে আটক করা হয়।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রাপ্ত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মুখ ঢাকা ছয়জন ব্যক্তি ওজতুর্ককের ফোন কেড়ে নিচ্ছেন, ওই সময় ওই ছাত্রী চিৎকার করছেন। পরে তাকে হাতকড়া পরানো হচ্ছে। ভিডিওতে দলের সদস্যদের বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমরা পুলিশ।’ তাদের মধ্যে একজন লোককে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি মুখ লুকাচ্ছ কেন?’
আইনজীবী খানবাবাই এক বিবৃবিতে জানান, ওজতুর্ক একজন মুসলিম, তিনি ইফতারের জন্য বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আসছিলেন। পরে তাকে আটক করা হয়। বর্তমানে আমরা তার অবস্থান সম্পর্কে অবগত নই এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। ওজতুর্ককের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। ওজতুর্ককের মার্কিন স্টুডেন্ট ভিসা রয়েছে।
ওজতুর্ককের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে আবাসিক ব্লকে এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় তারা হতবাক হয়ে গেছেন।
৩২ বছর বয়সি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাইকেল ম্যাথিসের ক্যামেরায় আটকের দৃশ্যটি ধরা পড়ে। তিনি জানান, ‘এটা অপহরণের মতো মনে হচ্ছিল। তারা মুখ ঢেকে আসে। পরে তাকে তাকে (শিক্ষার্থী) আটক করে। তারা ‘চিহ্ন’ ছাড়া গাড়িতে করে আসে।’
টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সুনীল কুমার এক বিবৃতিতে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগে থেকে এই ঘটনার সম্পর্কে অবগত ছিল না। ঘটনার আগে ফেডারেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনও ধরনের তথ্য শেয়ার করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওজতুর্ককের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের একজন ডক্টরেট শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র প্যাট্রিক কলিন্স এ তথ্য স্বীকার করেছেন।
এদিকে ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি আয়ান্না প্রেসলি এই গ্রেপ্তারকে ওজতুর্কের সাংবিধানিক অধিকারের যথাযথ প্রক্রিয়া এবং বাকস্বাধীনতার ভয়াবহ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বিবৃতিতে জানান, ওজতুর্ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যখন বৈধ মর্যাদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অপহরণ এবং আমাদের মৌলিক স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে; তখন আমরা চুপ করে থাকবো না।
ম্যাসাচুসেটস অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া জয় ক্যাম্পবেল ভিডিওটিকে ‘বিরক্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ফেডারেল প্রশাসন অতর্কিত ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আটক করা উদ্বেগজনক। এটি জননিরাপত্তা নয়, এটি ভীতি প্রদর্শন। এই আটক আদালতে নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হবে।’
মার্কিন ডিস্ট্রিক বিচারক ইন্দিরা তালওয়ানি শুক্রবার পর্যন্ত সরকারকে ওজতুর্ককে কেন আটক করা হয়েছে- তার জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তালওয়ানি আরও নির্দেশ দিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার আগে নোটিস ছাড়া ওজতুর্ককে ম্যাসাচুসেটস জেলার বাইরে স্থানান্তর করা যাবে না।
কিন্তু গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মার্কিন ইমিগ্রেশন এবং কাস্টম এনফোর্সমেন্টের অনলাইন ডিটেনি লোকেটার সিস্টেম তাকে লুইসিয়ানার বেসাইলে অবস্থিত সাউথ লুইসিয়ানা আইসিই প্রসেসিং সেন্টারে আটক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
ডিএইচএসের একজন জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র ওজতুর্কের আটক এবং তার ভিসা বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি এপিকে জানান, ডিএইচএস, ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের তদন্তে দেখা গেছে, ওজতুর্ক হামাসের সমর্থনে জড়িত ছিলেন। একটি বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন, যারা আমেরিকানদের হত্যা করতে পছন্দ করে। আর ভিসা একটি বিশেষ অধিকার, অধিকার নয়। আমেরিকানদের হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের প্রশংসা এবং সমর্থন করায় ভিসা তার ভিসা বাতিলের প্রধান কারণ।
গত মার্চে টাফ্টস ডেইলিতে চারজন শিক্ষার্থীর মধ্যে ওজতুর্ক ছিলেন একজন। এই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি ইউনিয়ন সিনেট কর্তৃক পাস করা প্রস্তাবের সমালোচনা করে একটি উপ-প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেই প্রবন্ধে টাফ্টসকে ‘ফিলিস্তিনি গণহত্যা স্বীকার করতে হবে, তাদের বিনিয়োগ প্রকাশ করতে হবে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্কযুক্ত কোম্পানিগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে’ বলে দাবি করে।
ওজতুর্ককের বন্ধুরা জানিয়েছেন, ওজতুর্ক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর, তার নাম, ছবি এবং কাজের ইতিহাস ক্যানারি মিশনে প্রকাশিত হয়। আর এই ওয়েবসাইট উত্তর আমেরিকার কলেজ ও ক্যাম্পাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা প্রচারকারী ব্যক্তিদের নথিভুক্ত করে। এই উপসম্পাদকীয়টি ছিল ওজতুর্ককের ‘ইসরায়েল বিরোধী সক্রিয়তার’ একমাত্র উদ্ধৃত উদাহরণ।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত তুর্কি দূতাবাস জানিয়েছে, তারা ওজতুর্কের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে, পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং পররাষ্ট্র দপ্তর এবং আইসিইয়ের সঙ্গে ‘উদ্যোগ’ নিচ্ছে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের এক বিবৃতিতে তারা আরও জানিয়েছে, তারা তাদের নাগরিকদের অধিকার রক্ষার জন্য কনস্যুলার পরিষেবা এবং আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য ‘সর্বাত্মক প্রচেষ্টা’ করছে।
সম্প্রতি দেশটির বিভিন্ন স্থানের একাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া অনেককে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসাবে জানা যায়, যে সকল শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন অথবা প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন; তাদেরকে এই হয়রানি করা হয়েছে।