ঢাকা ০২:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেধাবীরা দেশ ছাড়ছেন !

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৮:৩৭:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪
  • / 258

বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এ তালিকায় কেবল মাত্র তরুণ শিক্ষার্থীরা আছেন বিষয়টি তেমন নয়। শিক্ষাজীবন শেষে ভালো বেতনের চাকরি ছেড়েও তারা উন্নত দেশে যাওয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন।

স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশ গিয়েছেন বা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন অনেক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানায়, উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়া, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা, সুচিকিৎসা নিয়ে অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ছাড়া সেবা না পাওয়া, ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, দূষিত পরিবেশ এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের মতো বিষয়গুলো তাদের দেশ ছাড়তে উৎসাহিত করছে।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে ৩৫ থেকে ৩৯তম; পাঁচটি বিসিএস’র মাধ্যমে সারাদেশে সরকারি চাকরিতে মাত্র ১৪ হাজার ৮১৩জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেখানেও সরাসরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন ৯ হাজার ৮১৮ জন। বাকিরা বিভিন্ন কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। অন্যদিকে এসব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো কয়েকগুণ উচ্চশিক্ষিত তরুণ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ২০২২’ এর প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ।

অন্যদিকে লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের এক জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে যুবগোষ্ঠীর বড় অংশ আর্থসামাজিক ঝুঁকির মধ্যে আছে। বৈষম্য আর গুণগত শিক্ষার অভাবে ৭৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন, পড়াশোনা করে তারা চাকরি পাবেন না, গরিব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৯০ শতাংশ।

ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন মোট ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী। গত ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৪৯ হাজার ১৫১ বাংলাদেশী। তার আগের বছর ২০২১ সালে বিদেশে গেছেন ৪৪ হাজার ২৪৪ জন। শিক্ষার্থীরা সারা বিশ্বের ৫৮টি দেশে পড়াশোনার জন্য গিয়েছেন। যাদের বেশির ভাগ-ই পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই স্থায়ী হচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর সেখানে গিয়েছেন সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫২৪ জন শিক্ষার্থী। এরপরেই রয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়া এবং জার্মানির মতো দেশগুলোকে। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, প্রতিবেশী দেশ ভারত, কোরিয়া এবং সৌদি আরবের মতো দেশও রয়েছে। ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনার দুই বছর বাদে ২০১৫ সাল থেকে এই সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস নামে জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালে প্রতি হাজারে তিনজন দেশ ছেড়ে বিদেশে অভিবাসী হয়েছিলেন। গত বছর এ সংখ্যা বেড়ে হাজারে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একদিকে যেমন ইতিবাচক অন্যদিকে নেতিবাচক। ইতিবাচক হলো দেশের তরুণ প্রজন্ম সচেতন হয়েছে। তারা এখন উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নেতিবাচক দিক হলো, শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ দেশে ফিরে আসছে না। এমনটা চলতে থাকলে মাত্র কয়েক দশকেই বাংলাদেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।

শেয়ার করুন

মেধাবীরা দেশ ছাড়ছেন !

সময় ০৮:৩৭:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এ তালিকায় কেবল মাত্র তরুণ শিক্ষার্থীরা আছেন বিষয়টি তেমন নয়। শিক্ষাজীবন শেষে ভালো বেতনের চাকরি ছেড়েও তারা উন্নত দেশে যাওয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন।

স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশ গিয়েছেন বা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন অনেক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানায়, উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়া, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা, সুচিকিৎসা নিয়ে অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ছাড়া সেবা না পাওয়া, ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, দূষিত পরিবেশ এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের মতো বিষয়গুলো তাদের দেশ ছাড়তে উৎসাহিত করছে।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে ৩৫ থেকে ৩৯তম; পাঁচটি বিসিএস’র মাধ্যমে সারাদেশে সরকারি চাকরিতে মাত্র ১৪ হাজার ৮১৩জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেখানেও সরাসরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন ৯ হাজার ৮১৮ জন। বাকিরা বিভিন্ন কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। অন্যদিকে এসব পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো কয়েকগুণ উচ্চশিক্ষিত তরুণ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ২০২২’ এর প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ।

অন্যদিকে লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের এক জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে যুবগোষ্ঠীর বড় অংশ আর্থসামাজিক ঝুঁকির মধ্যে আছে। বৈষম্য আর গুণগত শিক্ষার অভাবে ৭৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন, পড়াশোনা করে তারা চাকরি পাবেন না, গরিব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৯০ শতাংশ।

ইউনেস্কোর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন মোট ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী। গত ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৪৯ হাজার ১৫১ বাংলাদেশী। তার আগের বছর ২০২১ সালে বিদেশে গেছেন ৪৪ হাজার ২৪৪ জন। শিক্ষার্থীরা সারা বিশ্বের ৫৮টি দেশে পড়াশোনার জন্য গিয়েছেন। যাদের বেশির ভাগ-ই পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই স্থায়ী হচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর সেখানে গিয়েছেন সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫২৪ জন শিক্ষার্থী। এরপরেই রয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়া এবং জার্মানির মতো দেশগুলোকে। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, প্রতিবেশী দেশ ভারত, কোরিয়া এবং সৌদি আরবের মতো দেশও রয়েছে। ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনার দুই বছর বাদে ২০১৫ সাল থেকে এই সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস নামে জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালে প্রতি হাজারে তিনজন দেশ ছেড়ে বিদেশে অভিবাসী হয়েছিলেন। গত বছর এ সংখ্যা বেড়ে হাজারে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একদিকে যেমন ইতিবাচক অন্যদিকে নেতিবাচক। ইতিবাচক হলো দেশের তরুণ প্রজন্ম সচেতন হয়েছে। তারা এখন উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নেতিবাচক দিক হলো, শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ দেশে ফিরে আসছে না। এমনটা চলতে থাকলে মাত্র কয়েক দশকেই বাংলাদেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।