মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক কেন?
- সময় ১০:৫৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪
- / 235
সরকারের পতনের পর হঠাৎ করেই ‘মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা’ নিয়ে বিতর্ক তুলেছেন আওয়ামী বিরোধীরা। এমনকি তারা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবেও মানতে নারাজ।
আওয়ামী বিরোধীরা বলছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের যে ধাপ, সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তার কোনো ভূমিকা ছিল না। কারণ, তিনি মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আসলে ঘটনা কী? আর এই বিতর্কের পেছনে কারণই বা কী?
ইতিহাসবিদদের মতে, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ, রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সেই ভাষণে তিনি জনগণকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন।
এই ভাষণ মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, শেখ মুজিব কি শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, নাকি তিনি মুক্তিযুদ্ধের কার্যকর কৌশলগত নেতা হিসেবেও ভূমিকা রেখেছেন?
২৫শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করলে শেখ মুজিবকে আটক করা হয় এবং তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে যুদ্ধ কিভাবে পরিচালিত হলো এবং তাঁর গ্রেফতারের পরও কি তিনি কার্যকর নেতৃত্ব প্রদান করতে পেরেছিলেন?
মুজিবনগর সরকার, যেটি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত হয়, শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা করে। মুজিবের অনুপস্থিতি নিয়ে সমালোচকরা বলেন, তিনি যুদ্ধের সময় সরাসরি অংশ নেননি। কিন্তু অপরদিকে সমর্থকরা বলছেন, শেখ মুজিব ছিলেন জাতির প্রতীক, যার ডাকে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছিল। তাঁর গ্রেফতারও ছিল একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা বিশ্বকে বাংলাদেশকে সমর্থনে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
শেখ মুজিবের গ্রেফতার ও কারাবন্দি থাকার সময় আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ নিয়ে সহানুভূতি তৈরি হয়। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ মুজিবের মুক্তির দাবি জানায় এবং পাকিস্তান সরকারকে চাপ দেয়। এটি মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিকীকরণে বড় ভূমিকা পালন করে।
যুদ্ধ শেষ হয় ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে। পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে, কিন্তু তখনও শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগারে। ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি মুক্তির পর শেখ মুজিব দেশে ফেরেন এবং বিজয়ী জাতিকে নেতৃত্ব দেন।
মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, তাঁর আদর্শ, নেতৃত্ব ও প্রেরণা মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ের মূল চালিকা শক্তি ছিল। তাঁর অনুপস্থিতি সত্ত্বেও মুজিবনগর সরকার ও মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছে।
তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করলেও, শেখ মুজিবের অনুপ্রেরণামূলক ভূমিকা প্রশ্নাতীত – এমনটাই মনে করছেন ইতিহাসবিদরা।
তবে এই যুদ্ধে আরো বেশ কয়েকজন নায়ক রয়েছেন; যারা কিনা শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র জেনারেল ওসমানী, যিনি প্রধান সেনাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মওলানা ভাসানী এবং তাজউদ্দীন আহমদ। কারণ তিনি প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তিনি অস্থায়ী সরকারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।