মিরপুরে চাঁদার নাম “জমিদারি ভাতা”, অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
- সময় ০১:২৩:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪
- / 237
রাজধানীর জনবহুল এলাকা মিরপুর। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ জনপদে অন্যতম সমস্যা চাঁদাবাজি। সরকার পাল্টালেও ভাগ্য বদলায়নি এই এলাকার ব্যবসায়ীদের। হাত বদল হয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা যাচ্ছে এখন নতুন কর্তা বখাটেদের হাতে। মার্কেট পরিচালনা কমিটির নামে চলছে হাটার রাস্তা দখল ও পজেশন বিক্রি। চাঁদা থেকে বাদ যাচ্ছে না লেগুনা ও অটোরিকশাও।
মিরপুর -১ নম্বর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনের ফুটপাত। গোপন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দুই বখাটে বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা তুলছেন। জুয়েল ও কামাল নামে এই দুই বখাটে স্থানীয় লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত। অনুসন্ধানে এই দুই বখাটের সাথে লিয়াকত নামে আরো এক বখাটের নাম উঠে আসে।
মাঝে মাঝেই ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করা হলেও কয়েক ঘণ্টার বেশি তা স্থায়ী হয় না। চাঁদা নয়; স্থানীয়ভাবে এটি “জমিদারি ভাতা” হিসেবে পরিচিত। কেবল ফুটপাত নয়; সীমানা ছাড়িয়ে মূল রাস্তাও দখলে রেখেছেন তারা। মার্কেটের সামনে যেহেতু দোকান, তাই কমিটিকে দিতে হবে টাকা।
মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট পার হতেই শাহআলী থানা রোডের পাশের ফেয়ার প্লাজার সামনে পসরা সাজানো হরেক রকম অস্থায়ী দোকান। দোকানগুলোতে উঠতে-বসতে দিতে হয় অর্থ। এখানে ৩৫/৪০টি দোকানে এককালীন ছাড়াও নিয়মিত ২শ টাকা করে নিচ্ছেন জাকির নামে এক বখাটে।
১ নম্বরের কোন কাজই এক নম্বর নয়! তাই বাংলা অ্যাফেয়ার্স টিম মিরপুর ১০ এর আইডিয়াল স্কুলের সামনে। একটু অনুসন্ধানেই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উঠে আসে দুটি নাম – আবুল ও শাহিনুর ইসলাম জীবন। গত ১৭ বছর আইডিয়াল স্কুল ও হোপের সামনের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলার দায়িত্ব তাদের হাতে।
অভিযোগ রয়েছে, সদ্য সাবেক ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম মানিকের ঘনিষ্ঠতায় মোটা অংকের নিয়মিত লেনদেন হতো উপরমহলে। শুধু ফুটপাত নয়; এই এলাকার রাস্তায় স্থায়ী ব্যারিকেড সৃষ্টি করে গোটা রাস্তাজুড়েই মার্কেট বসানো হয়েছে।
ক্ষমতায় যে-ই থাকুক চাঁদা তাদের লাগবেই! প্রয়োজনে ভোল পাল্টাতে সময় লাগে না তাদের। ১৫/২০ জনের সংঘবদ্ধ এই গ্রুপে আছে সাদ্দাম, শহীদ, বাপ্পি, মুরসালীন, জাপান, মুসা, রনি, এরশাদ, পারভেজ, সাকিবসহ কিশোর গ্যাং সদস্যরা।
চাঁদাবাজির এসব ঘটনায় স্থানীয় থানা পুলিশে একাধিক মামলা ও অভিযোগ থাকলেও এ বিষয়ে বরাবরই নীরব স্থানীয় প্রশাসন। যে কারণে এতোদিন ভয়ে মুখ খোলার সাহস করেননি কেউ।
দেড় লাখ টাকায় বছরখানেক আগে এই ফুটপাতে পজিশন কিনেন বাবুল নামে স্থানীয় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এরপরও নিয়মিত চাঁদা দিতে হতো তাকে। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন চাঁদাবাজরা সেই পজিশন অন্য আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় এখন বাবুল এলাকা ছাড়া।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক, সুজন ও আনছু মোল্লার দাবি, সরকার পরিবর্তনের পর লিয়াকত নামে এক বখাটেকে নিয়মিত চাঁদা পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের। লিয়াকতের ভয়ে অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও অসহায় হয়ে পড়েছে।
দর্শক শুরুতেই যেমনটি বলেছিলাম মিরপুরের নানান সমস্যার মধ্যে লেগুনার কথা। কোনো রকম রুট পারমিট কিংবা নিয়মের তোয়াক্কা না করে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরদের বেপরোয়া গতির সাথে অর্ধেক রাস্তা দখল করে সারিবদ্ধ শতশত লেগুনা থেকে কতজন যে চাঁদার ভাগ পেতো তার হিসাব দিতে প্রয়োজন আরো সময়। দেখতে চোখ রাখুন পরবর্তী অনুসন্ধানে।