ঢাকা ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিবাক্যং হেডম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মৌজা বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান
  • সময় ০৩:৫১:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • / 282

মিবাক্যং হেডম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মৌজা বাসিন্দারা

গ্রামপ্রধান (কারবারী) হতে চাইলে টাকা নিয়ে আসেন’ মদ নিয়ে আসেন’ টকবগে দেশী মুরগীর নিয়ে আসেন” সবকিছু নিয়ে যাওয়ার পর হেডম্যান মোটা অংকের অনৈতিকভাবে গ্রামপ্রধান দায়িত্ব দিয়ে থাকেন অপরজনকে। এভাবে এলাকার গ্রামপ্রধান ও মৌজাবাসিন্দাদের অত্যাচারের কথা বাখ্যা দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। তাছাড়া বিভিন্ন গ্রাম থেকে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন, জোড়পূর্বক জায়গা দখল, গাছ কর্তন ও গ্রামবাসিন্দাদের মধ্যে বাকদন্ডিতাসহ বিভিন্ন অপকর্মে অভিযোগ উঠেছে ৩৬৮ নং মিবাক্যং মৌজার হেডম্যান অংসাথুই মারমা বিরুদ্ধে।

মৌজারবাসীদের অভিযোগ, হেডম্যান অংসাথুই মারমা দীর্ঘ বছর ধরে গ্রামবাসীদের অত্যাচার করে আসছিলেন। জোড়পূর্বক প্রজাদের জায়গা দখল, টাকা ঘুষসহ নানা অপকর্ম করে গ্রামবাসীদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি তৈরি চালিয়েছেন। বর্তমানে এসব অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলমান রেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয় মৌজারবাসীদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব তৈরী করে প্রতিটি গ্রামে বিবাদে সৃষ্টি তৈরী করে রেখেছেন মিবাক্যং মৌজার হেডম্যান অংশৈথুই মারমা।

এসব বিষয়ে প্রশাসন ও রাজার নিকট প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও তাতেও কোন সুরাহা মেলেনি। বরংচ তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে আরো বেশী মৌজাবাসিন্দাদের বর্বরতা অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ফলে হেডম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পুরো মৌজা বাসিন্দারা।

জানা গেছে, মৌজা হেডম্যান নিয়োগ হবার পর গত ১৭ বছর ধরে নিজের মৌজায় ১৩টি গ্রামের সাধারণ মানুষকে জিম্মায় রেখে আসছিলেন। দীর্ঘ বছর ধরে মৌজার গ্রামবাসীদের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি, বেপোরোয়া ভাবে অন্যায়, অত্যাচার, মোটা অংকে ঘুষ আদান-প্রদানসহ পাহাড় সমান অভিযোগ আছে এই হেডম্যানের বিরুদ্ধে। কিন্তু গ্রামবাসীরা অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন স্থানে দারস্থ হলেও কোন প্রতিকার পাননি। বরংচ সেসব গ্রামে সাধারণ মানুষ তার বিপক্ষে কথা বলায় খুন,গুম ও অপরহণে ভয় দেখিয়ে আসছিলেন বহুদিন ধরে। এক পর্যায়ের ১৩ টি গ্রামের মানুষ বিচার পাওয়ার দাবীতে অভিযোগ দিলেও বোমাং রাজার যোগসাজশে ছাড় পেয়ে যান মৌজার হেডম্যান।

গ্রামবাসীরা জানান, হেডম্যনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ৩৬৮নং মিবাক্যং মৌজার গ্রামবাসীরা। তার অপকর্মে পাহাড় সমান অভিযোগ থাকলেও মুখ ফুটে বলার সাহস পান না কেউ। তার অনৈতিক কর্মকান্ডকে প্রতিবাদ করতে গেলে জোড়পূর্বকভাবে জায়গায় দখল, হেডম্যান সনদ আটকে রাখার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত হয়রানি করতে থাকেন তিনি। হেডম্যানের কাছে বাবার ওয়ারিশ সূত্রে গ্রামপ্রধান হতে গেলে মানতে হবে শর্ত। তার কাছে দিতে হবে এক লক্ষ টাকা, প্রজাদের কোন বিবাদ সৃষ্টি হলে হেডম্যনের পক্ষে থাকতে হবে সমর্থন ও হেডম্যানে প্রজাদের উপর অত্যাচার করা হলে প্রতিবাদ করা যাবে না। সেসব শর্ত না মানলে গ্রামবাসীদের মাঝে লাগিয়ে দেন বিবাদের সৃষ্টি।

ভুক্তভোগী রুনাজম পাড়া, কামসিং পাড়া ও হরিশচন্দ্র ত্রিপুড়া পাড়া বাসিন্দা হাঁনারাম , সাদিজম ও অংছাই খুমী গ্রামপ্রধান (কারবারী) জানান, দীর্ঘ বছর থেকে আমাদের বাবা কারবারী ( গ্রামপ্রধান) দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বাবার মৃত্যু পর ওয়ারিশ হিসেবে তারাই গ্রামপ্রধান হবেন। কিন্তু মিবাক্যা হেডম্যন টাকা নিয়ে আসো,মুরগী নিয়ে আসো মদ নিয়ে আসো এসব চেয়ে বাড়িতে ডাকেন। সবকিছু নিয়ে যাওয়ার পর মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে অন্যজনকে কারবারী দিয়ে দেন।

তারা আরো জানান, হেডম্যান কোন নোটিশ ছাড়া ইচ্ছে মতন গ্রামপ্রধানদের পালটিয়ে দেন মোটা অংকের বিনিময়ে। এই হেডম্যান মৌজাবাসিন্দাদের মধ্যে অশান্তি, ঝগড়াসহ নানা অপরাধমূলক চলমান রেখেছে। এসব বিরুদ্ধে একাধিকবার জেলা প্রশাসক ও রাজার কাছে অভিযোগ দিলেও কোন সুরাহা পাইনি। তাদের দাবী এই হেডম্যানকে বাতিল করা হোক।

৩৬৮ নং মিবাক্যং মৌজার হেডম্যান অংসাথুই মারমা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সবগুলো মিথ্যা বলে অস্বীকার করেন তিনি। হেডম্যানের ক্ষমতা অপব্যবহার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি মুঠোফোনটি কেটে দেন।

বোমাং রাজার কার্যালয়ের সচিব অংক্যজাই খেয়াং বলেন, হেডম্যানের বিরুদ্ধে এই নিয়ে ভুক্তভোগীরা দুবার অভিযোগ দিয়েছে। সেসব অভিযোগ প্রেক্ষিতে ৭দিনের জবাব দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। হেডম্যানের জবাবদিহি পেলে পূণরায় ভুক্তভোগীদের নিয়ে বিচার বসা হবে।

এবিষয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, অভিযোগ বিষয়টি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দিয়েছি। সেই বিষয়ে তদন্ত করে হেডম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

মিবাক্যং হেডম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মৌজা বাসিন্দারা

সময় ০৩:৫১:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

গ্রামপ্রধান (কারবারী) হতে চাইলে টাকা নিয়ে আসেন’ মদ নিয়ে আসেন’ টকবগে দেশী মুরগীর নিয়ে আসেন” সবকিছু নিয়ে যাওয়ার পর হেডম্যান মোটা অংকের অনৈতিকভাবে গ্রামপ্রধান দায়িত্ব দিয়ে থাকেন অপরজনকে। এভাবে এলাকার গ্রামপ্রধান ও মৌজাবাসিন্দাদের অত্যাচারের কথা বাখ্যা দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। তাছাড়া বিভিন্ন গ্রাম থেকে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন, জোড়পূর্বক জায়গা দখল, গাছ কর্তন ও গ্রামবাসিন্দাদের মধ্যে বাকদন্ডিতাসহ বিভিন্ন অপকর্মে অভিযোগ উঠেছে ৩৬৮ নং মিবাক্যং মৌজার হেডম্যান অংসাথুই মারমা বিরুদ্ধে।

মৌজারবাসীদের অভিযোগ, হেডম্যান অংসাথুই মারমা দীর্ঘ বছর ধরে গ্রামবাসীদের অত্যাচার করে আসছিলেন। জোড়পূর্বক প্রজাদের জায়গা দখল, টাকা ঘুষসহ নানা অপকর্ম করে গ্রামবাসীদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি তৈরি চালিয়েছেন। বর্তমানে এসব অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলমান রেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয় মৌজারবাসীদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব তৈরী করে প্রতিটি গ্রামে বিবাদে সৃষ্টি তৈরী করে রেখেছেন মিবাক্যং মৌজার হেডম্যান অংশৈথুই মারমা।

এসব বিষয়ে প্রশাসন ও রাজার নিকট প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও তাতেও কোন সুরাহা মেলেনি। বরংচ তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে আরো বেশী মৌজাবাসিন্দাদের বর্বরতা অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ফলে হেডম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পুরো মৌজা বাসিন্দারা।

জানা গেছে, মৌজা হেডম্যান নিয়োগ হবার পর গত ১৭ বছর ধরে নিজের মৌজায় ১৩টি গ্রামের সাধারণ মানুষকে জিম্মায় রেখে আসছিলেন। দীর্ঘ বছর ধরে মৌজার গ্রামবাসীদের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি, বেপোরোয়া ভাবে অন্যায়, অত্যাচার, মোটা অংকে ঘুষ আদান-প্রদানসহ পাহাড় সমান অভিযোগ আছে এই হেডম্যানের বিরুদ্ধে। কিন্তু গ্রামবাসীরা অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন স্থানে দারস্থ হলেও কোন প্রতিকার পাননি। বরংচ সেসব গ্রামে সাধারণ মানুষ তার বিপক্ষে কথা বলায় খুন,গুম ও অপরহণে ভয় দেখিয়ে আসছিলেন বহুদিন ধরে। এক পর্যায়ের ১৩ টি গ্রামের মানুষ বিচার পাওয়ার দাবীতে অভিযোগ দিলেও বোমাং রাজার যোগসাজশে ছাড় পেয়ে যান মৌজার হেডম্যান।

গ্রামবাসীরা জানান, হেডম্যনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ৩৬৮নং মিবাক্যং মৌজার গ্রামবাসীরা। তার অপকর্মে পাহাড় সমান অভিযোগ থাকলেও মুখ ফুটে বলার সাহস পান না কেউ। তার অনৈতিক কর্মকান্ডকে প্রতিবাদ করতে গেলে জোড়পূর্বকভাবে জায়গায় দখল, হেডম্যান সনদ আটকে রাখার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত হয়রানি করতে থাকেন তিনি। হেডম্যানের কাছে বাবার ওয়ারিশ সূত্রে গ্রামপ্রধান হতে গেলে মানতে হবে শর্ত। তার কাছে দিতে হবে এক লক্ষ টাকা, প্রজাদের কোন বিবাদ সৃষ্টি হলে হেডম্যনের পক্ষে থাকতে হবে সমর্থন ও হেডম্যানে প্রজাদের উপর অত্যাচার করা হলে প্রতিবাদ করা যাবে না। সেসব শর্ত না মানলে গ্রামবাসীদের মাঝে লাগিয়ে দেন বিবাদের সৃষ্টি।

ভুক্তভোগী রুনাজম পাড়া, কামসিং পাড়া ও হরিশচন্দ্র ত্রিপুড়া পাড়া বাসিন্দা হাঁনারাম , সাদিজম ও অংছাই খুমী গ্রামপ্রধান (কারবারী) জানান, দীর্ঘ বছর থেকে আমাদের বাবা কারবারী ( গ্রামপ্রধান) দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বাবার মৃত্যু পর ওয়ারিশ হিসেবে তারাই গ্রামপ্রধান হবেন। কিন্তু মিবাক্যা হেডম্যন টাকা নিয়ে আসো,মুরগী নিয়ে আসো মদ নিয়ে আসো এসব চেয়ে বাড়িতে ডাকেন। সবকিছু নিয়ে যাওয়ার পর মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে অন্যজনকে কারবারী দিয়ে দেন।

তারা আরো জানান, হেডম্যান কোন নোটিশ ছাড়া ইচ্ছে মতন গ্রামপ্রধানদের পালটিয়ে দেন মোটা অংকের বিনিময়ে। এই হেডম্যান মৌজাবাসিন্দাদের মধ্যে অশান্তি, ঝগড়াসহ নানা অপরাধমূলক চলমান রেখেছে। এসব বিরুদ্ধে একাধিকবার জেলা প্রশাসক ও রাজার কাছে অভিযোগ দিলেও কোন সুরাহা পাইনি। তাদের দাবী এই হেডম্যানকে বাতিল করা হোক।

৩৬৮ নং মিবাক্যং মৌজার হেডম্যান অংসাথুই মারমা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সবগুলো মিথ্যা বলে অস্বীকার করেন তিনি। হেডম্যানের ক্ষমতা অপব্যবহার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি মুঠোফোনটি কেটে দেন।

বোমাং রাজার কার্যালয়ের সচিব অংক্যজাই খেয়াং বলেন, হেডম্যানের বিরুদ্ধে এই নিয়ে ভুক্তভোগীরা দুবার অভিযোগ দিয়েছে। সেসব অভিযোগ প্রেক্ষিতে ৭দিনের জবাব দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। হেডম্যানের জবাবদিহি পেলে পূণরায় ভুক্তভোগীদের নিয়ে বিচার বসা হবে।

এবিষয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, অভিযোগ বিষয়টি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দিয়েছি। সেই বিষয়ে তদন্ত করে হেডম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।