মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব হারানোর শঙ্কায় ইরান
- সময় ০২:০৫:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 23
দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়া। বাশার আল আসাদ সরকারের দুই যুগের শাসনের অবসান ঘটলো বিদ্রোহীদের দামেস্ক দখলের মধ্য দিয়ে। কিন্তু আসাদের পতন কি শুধু একটি শাসকের পতন, নাকি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের বার্তা- সেই প্রশ্ন এখন অনেকেরই।
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ। গৃহহীন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। এই যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে আসাদ সরকারকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নিতে হয়েছে। তার এই পতন শুধু সিরিয়ার ইতিহাস নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
ইরান, যার সহযোগিতায় আসাদ সরকার টিকে ছিল এতদিন, তারাও এখন গভীর সঙ্কটে। সিরিয়া ছিল ইরানের মধ্যপ্রাচ্য কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দামেস্ক ছিল তেহরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং হিজবুল্লাহর অস্ত্র সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ পথ।
আসাদের পতন তাই ইরানের জন্য শুধু একটি রাজনৈতিক ধাক্কা নয়, বরং তাদের আঞ্চলিক প্রভাবের ওপর একটি বড় আঘাত।
অন্যদিকে, আসাদের পতনকে সুযোগ হিসেবে দেখছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যেই গোলান মালভূমি দখল করেছে তারা। এমনকি সাম্প্রতিক হারমন পার্বত্য অঞ্চলেও ইসরায়েলি বাহিনীর পদচারণা। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলি ট্যাংক এখন দামেস্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যদিও আইডিএফ এই দাবি অস্বীকার করেছে।
বাসার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় প্রায় ৫০০ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ধ্বংস হয়ে গেছে বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। আক্রমণ জোরদার করা বা পিছু হটার মতো দুটি কঠিন পথের মুখে দাঁড়িয়েছে ইরান। আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় তারা হয়তো পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর বেশি নির্ভর করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে, তেহরান এখনো তাদের প্রভাব হারানোর বিষয়টি মানতে রাজি নয়। ইরান ঘোষণা দিয়েছে, তারা সিরিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, এই প্রচেষ্টা কি মধ্যপ্রাচ্যের বদলে যাওয়া রাজনীতিতে ইরানকে টিকিয়ে রাখতে পারবে?
ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, কাতার ও ইরাক। তারা বলেছে, “সিরিয়ার ওপর ইসরায়েলের হামলা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর আঘাত এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পুরো অঞ্চলকে আরও সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে।
অন্যদিকে, সিরিয়ার সাধারণ মানুষের দুর্দশা আরও বেড়েছে। শরণার্থী শিবিরে দিন কাটছে লাখ লাখ মানুষের। একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে ভূমি হারানোর শঙ্কা। রাশিয়ায় আশ্রয় নেওয়া আসাদ কি ভবিষ্যতে সিরিয়ার রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারবেন? নাকি তার অধ্যায় চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে? আর ইরান, যারা দীর্ঘ ১৩ বছর আসাদ সরকারকে সমর্থন জুগিয়েছে, তাদের পররাষ্ট্র নীতিতে কি পরিবর্তন আনতে হবে দুটি প্রশ্নই এখন ঘুরে ফিরে সামনে আসছে।