বিমানবন্দরের ঘটনায় নায়িকা নিপুণ বললেন ‘ফালতু’
- সময় ০৫:২৩:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
- / 37
চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার ঢাকা থেকে সড়কপথে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে গোয়েন্দা সংস্থার আপত্তির কারণে বিমানবন্দর থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়। পরে গোয়েন্দা সংস্থা তাকে অভিবাসন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনার কারণে সড়কপথে সিলেট বিমানবন্দরে পৌঁছালেও দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি এই নায়িকার। তবে খবরটি সঠিক নয় বলে জানান নিপুণ।
আজ শুক্রবার সকালে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তবে এ বিষয়ে নিপুণ আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, খবরটি সঠিক নয়।
নিপুণ বলেন, ‘আমি বনানীর বাসায় আছি। এই খবর ভুয়া। এর বাইরে এ বিষয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না। ফালতু সব বিষয়।’
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ বলেন, ‘সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে আজ (শুক্রবার) সকাল ১০টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে গিয়েছিলেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। এ সময় একটি গোয়েন্দা সংস্থার আপত্তিতে তাকে আটকে দেওয়া হয়। পরে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।’
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারের নামে সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে কোনো মামলা নেই। তাকে যুক্তরাজ্যগামী ফ্লাইট থেকে অফলোড করা হয়েছে।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য তিনি সড়কপথে সিলেটে এসেছিলেন। ইমিগ্রেশনে তাকে আটকে দেওয়ার পর তিনি আর ওই বিমানে উঠতে পারেননি। পরে তিনি বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।’
সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, আজ সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে সিলেট থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি ২০১ ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের হিথরো যাওয়ার কথা ছিল। ওই বিমানের যাত্রী ছিলেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য মুখে মাস্ক ও চোখে চশমা পরে ইমিগ্রেশনে উপস্থিত হন। এ সময় দেশের একটি গোয়েন্দা শাখার সদস্যদের সন্দেহে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে ওই যাত্রী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা জানান। তবে চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারের পাসপোর্টে তার নাম নাসরিন আক্তার উল্লেখ করা ছিল। তিনি চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার কি না জানতে চাইলে নিশ্চুপ থাকেন। পরে গোয়েন্দা সংস্থার আপত্তিতে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাঁর যাত্রা বাতিল করে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
এদিকে, নানা সময় নায়িকা নিপুণের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে শিল্পী সমিতির নির্বাচন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খালাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে ঘিরে। ক্যারিয়ার জীবনে তেমন কোন সফল মুভি না থাকলেও নায়িকার তকমা কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছেন ব্যক্তি জীবনে। হাতে সিনেমা না থাকলেও দুহাত ভরে টাকা কামাতেন নিপুণ। বছরের বেশির ভাগ সময় বিদেশ ভ্রমণ, মেয়েকে বিদেশে পড়ালেখা করানো, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় পার্লারের ব্যবসা, দামি গাড়ি কিভাবে আসতো এত টাকা?
এছাড়াও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচন নিয়ে হয়েছেন বেশ সমালোচিত। সাধারণ সম্পাদকের পদে হেরে গিয়েও ক্ষমতা দেখিয়ে বসেছেন চেয়ারে।
শিল্পী সমিতির সেই নির্বাচন নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। নির্বাচনে হেরেও নিপুণ কীভাবে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসলেন তা নিয়েও বিস্তর আলাপ হয়েছে। তবে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুললেননি। সে সময়ে চুপ থাকলেও চিত্রনায়িকা নিপুণের বিরুদ্ধে এবার মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকে। যাদের একজন ২০২২ সালে শিল্পী সমিতির ভোটে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা পীরজাদা হারুন।
সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ভোট গণনার রাতে তার ওপর দেশের ক্ষমতাবান একজন রাজনীতিবিদ (শেখ সেলিম) চাপ প্রয়োগ করেছিলেন নিপুণকে জেতানোর জন্য।
হারুন বলেন, ‘সেদিন রাতে একের পর এক ফোনে আমাকে ভয় দেখানো হয় যে তুলে নিয়ে যাবে। পরে একটা জায়গায় যেতে বলেন, যেখানে বড় অঙ্কের টাকা রাখা ছিল। যখন রাজি হলাম না, তখন ফলাফল নিয়ে মামলা করা হলো। সেটা চলে গেল কোর্টে। তখন নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমাকে বানিয়ে দেওয়া হলো অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। নানা কাণ্ডে আমাকে ছোট করা হলো, এফডিসিতে নিষিদ্ধ করা হলো।’
দীর্ঘদিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদে দায়িত্বরত ছিলেন হারুন। নিজের এই সততার কারণে বারবার সরকারি চাকরিতে পদবঞ্চিত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ওই নির্বাচনেই হারুনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে যুক্ত এক সদস্য বলেন, ‘নিপুণকে জয়ী করতে সেদিন রাতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম সাহেব। এমনকি নির্বাচন কমিশনারকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে গালিগালাজ করেন। বলেন, পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাবেন।’
তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে নিপুণ না কোন নামকরা নায়িকা না কোন নামকরা ব্যবসায়ী। না কোন এমপি বা মন্ত্রী। তাহলে এতটাকা আর এত প্রভাব পেল কোথায়। এর সবের পিছনে নাকি ছিল রাজনৈতিক হাত। ছিল শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভালোবাসা আর আশীর্বাদ।বিষয়টি অনেকেরই জানাছিল কিন্তু মুখ খোলার দুঃসাহস দেখাননি কেউ।
শেখ সেলিমের হাতের ছায়া তার মাথার উপর থাকায় নায়িকা নিপুণ হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। অনেক সরকারি দপ্তরে তার ছিল দৌড়। যে কোন কাজ ভাগিয়ে আনতে নিপুন ছিলেন এক বিশ্বস্ততার নাম। রাজউক থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে নিপুণের বিরুদ্ধে।
নিপুণের সঙ্গে শেখ সেলিমের সখ্যতা চোখে পড়েছে একাধিকবার। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে অভিজাত এলাকা বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে নিপুণ গড়ে তোলেন প্রসাধনী ও লাইফ-স্টাইল কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ‘টিউলিপ নেইলস অ্যান্ড স্পা’। সাধারণত শেখ সেলিমের মতো নেতা পার্লার উদ্বোধন করার কথা না হলেও নিপুণের এই পার্লারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন তিনি।