বিমান-সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ : কেউ বেঁচে নেই!
- সময় ০৩:২৮:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫
- / 28
ওয়াশিংটন ডিসিতে আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি আঞ্চলিক জেট এবং একটি মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের মধ্যে সংঘর্ষের পর কাউকে জীবিত পাওয়া যায়নি। ২০০১ সালের পর সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা ছিল এটি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ তথ্য জানিয়েছেন বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ ঘটনায় কমপক্ষে ১৪ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
একাধিক সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, পোটোম্যাক নদী থেকে বহু মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে সংঘর্ষের পর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল।
সংঘর্ষের পর নদীতে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারটি। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে, স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টার দিকে ওয়াশিংটনের রিগ্যান জাতীয় বিমানবন্দরে রানওয়ের কাছে আসার সময় মাঝ আকাশে সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে উড়োজাহাজটির সংঘর্ষ হয়।
যাত্রীবাহী বিমানটিতে মোট ৬০ জন যাত্রী এবং চারজন ক্রু সদস্য ছিলেন আর হেলিকপ্টারে তিনজন মার্কিন সেনা ছিলেন। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।
আমেরিকান এয়ারলাইনসের মতে, উড়োজাহাজটি ছিল আমেরিকান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৫৩৪২, যা ক্যানসাসের উইচিটা থেকে আসছিল। এদিকে পেন্টাগন জানিয়েছে, হেলিকপ্টারটি ছিল একটি সিকরস্কি এইচ-৬০, যেটি ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভোয়ার থেকে উড্ডয়ন করেছিল।
সংঘর্ষের তদন্তে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় পরিবহন সুরক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে। সংস্থাটি ৩০ দিনের মধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করার আশা করছে।
এদিকে মার্কিন ফিগার স্কেটিং জানিয়েছে, তাদের বেশ কয়েকজন সদস্য ওই বিমানে ছিলেন। বোস্টনের স্কেটিং ক্লাব ছয়জন নিহতের নাম ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ১৯৯৪ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এভজেনিয়া শিশকোভা এবং ভাদিম নাউমভও রয়েছেন।
এদিকে ঘটনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনৈতিক আক্রমণ শুরু করেছেন।
১০ দিন আগে দায়িত্ব গ্রহণকারী ট্রাম্প এই দুর্ঘটনাকে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশ (এফএএতে) বৈচিত্র্যময় কর্মী নিয়োগের প্রচেষ্টার ফল হিসেবে মনে করছেন। এ দুর্ঘটনায় সাবেক প্রশাসনকে দুষেছেন ট্রাম্প। সামরিক হেলিকপ্টার ও যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সংঘর্ষের ঘটনার পেছনে সাবেক বাইডেন ও ওবামা সরকারের দায় রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলছেন, জো বাইডেন এবং বারাক ওবামার প্রশাসনের সময় ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফএএ) এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার নিয়োগের ক্ষেত্রে মানদণ্ড কমিয়ে আনার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। গতকাল রাতে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার রাতের দুর্ঘটনার বিষয়ে জানানোর সময় ট্রাম্প এসব মন্তব্য করেন। বাইডেন ও ওবামা সরকারের সমর্থিত ‘ডাইভার্সিটি হায়ারস’ নীতিকে এই দুর্ঘটনার জন্য দায় দিলেন।
ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এখনো দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়নি। কিন্তু তিনি কিভাবে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (ডিইআই) নিয়োগকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করতে পারেন। তখন ট্রাম্প উত্তর দেন, ‘কারণ আমার সাধারণ জ্ঞান আছে।’
তিনি বলেন, ‘এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দক্ষ হতে হবে।’ এদিকে বিমানের মান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী এবং ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা ট্রম্পের সমালোচনা করেছেন। ডিইআই কর্মসূচির সমর্থকরা ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈষম্য ও কাঠামোগত বর্ণবাদের মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে রিগ্যান জাতীয় বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারে কর্মীদের সংখ্যা কম ছিল, যেখানে সংঘর্ষের সময় বিমানটি অবতরণ করতে যাচ্ছিল। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, স্বাভাবিক দুইজনের পরিবর্তে একজন বিমান এবং হেলিকপ্টার নিয়ন্ত্রক উভয় ট্র্যাফিক পরিচালনা করছিলেন।
ওয়াশিংটনের অগ্নিনির্বাপক প্রধান জন ডোনেলি বলেছেন, এখন পর্যন্ত ২৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে ২০০৯ সালে নিউ ইয়র্কের বাফেলোর কাছে ৪৯ জন নিহত হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটিই প্রথম বড় দুর্ঘটনা। রিগ্যান জাতীয় বিমানবন্দরের হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগন থেকে অল্প দূরে অবস্থিত। আকাশসীমা অত্যন্ত ব্যস্ত, বেসামরিক এবং সামরিক বিমানগুলো ওঠা-নামা করে।
সূত্র : সিএনএন, এএফপি