০৬:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যুবদল নেতার চাঁদাবাজি

‘বিকাশ করো, কেউ জানলে ঘাড় বাঁকা করে ফেলবো’

নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালী
  • সময় ১২:২৭:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
  • / 34

যুবদল নেতার চাঁদাবাজি

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন নয়নের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারীকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘বাঁচতে চাইলে দ্রুত এক লাখ টাকা বিকাশ করো।’

শুক্রবার (১৪ মার্চ) চাঁদা দাবির কথোপকথনের বেশ কিছু অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। এরমধ্যে কয়েকটি অডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন নয়ন কবিরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেহজঙ্গপুর গ্রামের মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে। তিনি জেলা যুবদলের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক এবং কবিরহাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক।

অন্যদিকে ভুক্তভোগী মো. সাকায়েত উল্যাহ শিপন একই উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের চন্দ্রশুদ্ধি গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে। তিনি আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে কর্মরত।

একটি অডিওতে সাকায়েত উল্যাকে ফোন দিয়ে নয়নকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনাকে চাকরি দিয়েছে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ (বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য)। কিন্তু গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আপনি নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট করেছেন, ডোনেশনও দিয়েছেন। তাই আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে আমাকে একলাখ টাকা দিবেন। না দিলে এটার পরিণাম কী হবে তা চিন্তাও করতে পারবেন না। আর এ কথা যদি আপনি-আমি ছাড়া তৃতীয় কানে যায় তাহলে আপনার ঘাড় বাঁকা করে ফেলবো। এটা যেন মনে থাকে। এটাকে থ্রেড (হুমকি) মনে করলেও করতে পারেন।’

ভুক্তভোগী মো. সাকায়েত উল্যা শিপন বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন নয়ন উদ্ভট কথা বলে প্রতিনিয়ত এক লাখ টাকার জন্য ফোনে আমাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন। না দিলে হত্যাসহ আমার বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছেন। গ্রামের বাড়িতে আমার স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী, চার শিশু সন্তান ও মা-বাবা থাকে। আমি তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কালরেকর্ড ও মোবাইল নম্বরসহ ঢাকার শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছি।

শাহবাগ থানা সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী মো. সাকায়েত উল্যার অভিযোগটি সাধারণ ডায়রিতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুনুর রশিদকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভাইরাল ও ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড নিজের বলে নিশ্চিত করেন অভিযুক্ত যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন নয়ন।

তিনি দাবি করে বলেন, এই সাকায়েত উল্যা শিপন বিগত সময়ে আমাকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যার পরিমাণ আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা হবে। তাই তাকে এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে বলেছি। কথাগুলো বলতে গিয়ে ঝগড়ার মতো হয়ে গেছে। তাই কিছু গালমন্দও করেছি।

আনোয়ার হোসেন নয়ন আরও বলেন, স্থানীয় নেতারা জানার পর এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। আমি চুপচাপ আছি। এখন আমাদের কমিটি ঘোষণার কথা চলছে। আমি উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। এ মুহূর্তে কেউ ষড়যন্ত্র করে আমার কাটছাঁট করা অডিও ভাইরাল করে দিয়েছে। আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমন বলেন, বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। বিষয়টি আমরা অনুসন্ধান করছি। এভাবে টাকা দাবি করা অন্যায়। কিন্তু দলের কতিপয় নেতার জন্য আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুনুর রশিদ আজাদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব বিষয়ে খুবই কঠোর। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেবো।

শেয়ার করুন

যুবদল নেতার চাঁদাবাজি

‘বিকাশ করো, কেউ জানলে ঘাড় বাঁকা করে ফেলবো’

সময় ১২:২৭:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন নয়নের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারীকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘বাঁচতে চাইলে দ্রুত এক লাখ টাকা বিকাশ করো।’

শুক্রবার (১৪ মার্চ) চাঁদা দাবির কথোপকথনের বেশ কিছু অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। এরমধ্যে কয়েকটি অডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন নয়ন কবিরহাট পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেহজঙ্গপুর গ্রামের মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে। তিনি জেলা যুবদলের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক এবং কবিরহাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক।

অন্যদিকে ভুক্তভোগী মো. সাকায়েত উল্যাহ শিপন একই উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের চন্দ্রশুদ্ধি গ্রামের আবদুল ওহাবের ছেলে। তিনি আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে কর্মরত।

একটি অডিওতে সাকায়েত উল্যাকে ফোন দিয়ে নয়নকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনাকে চাকরি দিয়েছে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ (বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য)। কিন্তু গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আপনি নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট করেছেন, ডোনেশনও দিয়েছেন। তাই আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে আমাকে একলাখ টাকা দিবেন। না দিলে এটার পরিণাম কী হবে তা চিন্তাও করতে পারবেন না। আর এ কথা যদি আপনি-আমি ছাড়া তৃতীয় কানে যায় তাহলে আপনার ঘাড় বাঁকা করে ফেলবো। এটা যেন মনে থাকে। এটাকে থ্রেড (হুমকি) মনে করলেও করতে পারেন।’

ভুক্তভোগী মো. সাকায়েত উল্যা শিপন বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন নয়ন উদ্ভট কথা বলে প্রতিনিয়ত এক লাখ টাকার জন্য ফোনে আমাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন। না দিলে হত্যাসহ আমার বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছেন। গ্রামের বাড়িতে আমার স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী, চার শিশু সন্তান ও মা-বাবা থাকে। আমি তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কালরেকর্ড ও মোবাইল নম্বরসহ ঢাকার শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছি।

শাহবাগ থানা সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী মো. সাকায়েত উল্যার অভিযোগটি সাধারণ ডায়রিতে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুনুর রশিদকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভাইরাল ও ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড নিজের বলে নিশ্চিত করেন অভিযুক্ত যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন নয়ন।

তিনি দাবি করে বলেন, এই সাকায়েত উল্যা শিপন বিগত সময়ে আমাকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যার পরিমাণ আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা হবে। তাই তাকে এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে বলেছি। কথাগুলো বলতে গিয়ে ঝগড়ার মতো হয়ে গেছে। তাই কিছু গালমন্দও করেছি।

আনোয়ার হোসেন নয়ন আরও বলেন, স্থানীয় নেতারা জানার পর এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। আমি চুপচাপ আছি। এখন আমাদের কমিটি ঘোষণার কথা চলছে। আমি উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। এ মুহূর্তে কেউ ষড়যন্ত্র করে আমার কাটছাঁট করা অডিও ভাইরাল করে দিয়েছে। আমি আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমন বলেন, বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। বিষয়টি আমরা অনুসন্ধান করছি। এভাবে টাকা দাবি করা অন্যায়। কিন্তু দলের কতিপয় নেতার জন্য আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুনুর রশিদ আজাদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব বিষয়ে খুবই কঠোর। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেবো।