ঢাকা ০৩:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশী নারীর ডান দিকে হার্ট!

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১০:১৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
  • / 259

ভারত জুড়ে তোলপাড় বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরার বাসিন্দা মোনারাণী দাস। সম্প্রতি কলকাতার একটি হাসপাতালে তার হার্টে এমন একটি অপারেশন হয়েছে, যা ‘অতি বিরল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন চিকিৎসকরা।

স্বাভাবিক একজন মানুষের শরীরে হৃৎপিন্ড বুকের বাঁদিকে থাকে, কিন্তু এই রোগীর হৃৎপিন্ড ছিলো ডানদিকে। কেবল হৎপিন্ড নয়; শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ – যেমন যকৃৎ, ফুসফুস, প্লীহা, পাকস্থলী – সবই উল্টোদিকে অবস্থান করছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ রকম রোগী ৪০ লক্ষ মানুষের মধ্যে একজন পাওয়া যায়।

তবে এটি কোন রোগ নয়। মোনারাণী দাসের এই ঘটনা তার জন্মদাত্রীর গর্ভধারণের সময়কার একটি অবস্থা মাত্র। চিকিৎসা বিজ্ঞানে, হার্ট বাঁ দিকের বদলে ডান দিকে থাকলে তাকে বলা হয় ডেক্সট্রো কার্ডিয়া আর মোনারাণীর সব প্রত্যঙ্গগুলি উল্টোদিকে থাকার অবস্থাটিকে বলা হয় ‘ডেক্সট্রোকার্ডিয়া উইথ সাইটাস ইনভার্সিস’।

কোলকাতার মনিপাল হসপিটাল ব্রডওয়ের ডা. সিদ্ধার্থ মুখার্জীর নেতৃত্বে এই বাইপাস অপারেশন হয়েছে।

অপারেশনের সাথে জড়িত এই চিকিৎসকরা দাবি করছেন, এরকম পেসমেকার বসানোর অপারেশন বিশ্বে আগে হয়নি।

মোনারাণী দাস জানতেন না যে তার দেহে হার্ট বা অন্য প্রত্যঙ্গগুলি স্বাভাবিক অবস্থানের উল্টোদিকে রয়েছে। বছর দুয়েক আগে বুকের ডান দিকে ব্যথা শুরু হয় তার। পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন যেহেতু ডানদিকে ব্যথা, তাই অ্যাসিডিটি বা অম্বলের সমস্যা হচ্ছে।

অপারেশনের পরে মোনারাণী দাস বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় তার মেয়ের কাছে রয়েছে। তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, “বুকের ডান দিকে ব্যথা শুরু হওয়ার কিছুদিন পরে শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। এর মধ্যেই হার্ট অ্যাটাক হয়। সেই চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়েই বাংলাদেশের ডাক্তারেরা বলেন যে আমার হার্ট বুকের ডান দিকে”।

তার কন্যা বিষ্ণু প্রিয়া দাস বলছিলেন, তখনও তারা জানতেন না যে শুধু হার্ট নয়, শরীরের অন্যান্য প্রত্যঙ্গও উল্টোদিকে।

ডা. মুখার্জীর কথায়, “ডেক্সট্রো কার্ডিয়া নিয়ে যে রোগী আসেন, তার অপারেশন করা বেশ কঠিন, কারণ সাধারণত চিকিৎসকরা বেশিরভাগই ডানহাতে কাজ করেন আর রোগীর ডানদিকে দাঁড়িয়ে অপারেশন করেন। কিন্তু মোনারাণীর ক্ষেত্রে বাঁদিকে দাঁড়িয়ে অপারেশন করতে হয়েছে, সেটা কিছুটা নতুন পরিস্থিতি।

এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, মোনারাণী এখন ভালই আছেন। কতটা সুস্থ হয়ে উঠলেন, সেটা দেখার জন্য কিছুদিনের মধ্যেই পরীক্ষা করবেন তারা।

বিজ্ঞানী মার্কো সেভেরিনো ১৬৪৩ সালে প্রথম ডেক্সট্রো কার্ডিয়া চিহ্নিত করেন। এরও প্রায় এক শতাব্দী পরে ম্যাথু বেইলি ব্যাখ্যা করেন সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে অবস্থান করা প্রত্যঙ্গগুলি, তার নাম দেওয়া হয় সাইটাস ইনভার্সিস। আর হৃৎপিন্ডসহ পেটের ভেতরের প্রত্যঙ্গগুলি বিপরীত দিকে অবস্থান করলে সেই অবস্থার নাম ডেক্সট্রোকার্ডিয়া উইথ সাইটাস ইনভার্সিস, যেরকম অবস্থা ছিল বাংলাদেশের মোনারাণী দাসের প্রত্যঙ্গগুলির।

শেয়ার করুন

বাংলাদেশী নারীর ডান দিকে হার্ট!

সময় ১০:১৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪

ভারত জুড়ে তোলপাড় বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরার বাসিন্দা মোনারাণী দাস। সম্প্রতি কলকাতার একটি হাসপাতালে তার হার্টে এমন একটি অপারেশন হয়েছে, যা ‘অতি বিরল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন চিকিৎসকরা।

স্বাভাবিক একজন মানুষের শরীরে হৃৎপিন্ড বুকের বাঁদিকে থাকে, কিন্তু এই রোগীর হৃৎপিন্ড ছিলো ডানদিকে। কেবল হৎপিন্ড নয়; শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ – যেমন যকৃৎ, ফুসফুস, প্লীহা, পাকস্থলী – সবই উল্টোদিকে অবস্থান করছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ রকম রোগী ৪০ লক্ষ মানুষের মধ্যে একজন পাওয়া যায়।

তবে এটি কোন রোগ নয়। মোনারাণী দাসের এই ঘটনা তার জন্মদাত্রীর গর্ভধারণের সময়কার একটি অবস্থা মাত্র। চিকিৎসা বিজ্ঞানে, হার্ট বাঁ দিকের বদলে ডান দিকে থাকলে তাকে বলা হয় ডেক্সট্রো কার্ডিয়া আর মোনারাণীর সব প্রত্যঙ্গগুলি উল্টোদিকে থাকার অবস্থাটিকে বলা হয় ‘ডেক্সট্রোকার্ডিয়া উইথ সাইটাস ইনভার্সিস’।

কোলকাতার মনিপাল হসপিটাল ব্রডওয়ের ডা. সিদ্ধার্থ মুখার্জীর নেতৃত্বে এই বাইপাস অপারেশন হয়েছে।

অপারেশনের সাথে জড়িত এই চিকিৎসকরা দাবি করছেন, এরকম পেসমেকার বসানোর অপারেশন বিশ্বে আগে হয়নি।

মোনারাণী দাস জানতেন না যে তার দেহে হার্ট বা অন্য প্রত্যঙ্গগুলি স্বাভাবিক অবস্থানের উল্টোদিকে রয়েছে। বছর দুয়েক আগে বুকের ডান দিকে ব্যথা শুরু হয় তার। পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন যেহেতু ডানদিকে ব্যথা, তাই অ্যাসিডিটি বা অম্বলের সমস্যা হচ্ছে।

অপারেশনের পরে মোনারাণী দাস বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় তার মেয়ের কাছে রয়েছে। তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, “বুকের ডান দিকে ব্যথা শুরু হওয়ার কিছুদিন পরে শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। এর মধ্যেই হার্ট অ্যাটাক হয়। সেই চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়েই বাংলাদেশের ডাক্তারেরা বলেন যে আমার হার্ট বুকের ডান দিকে”।

তার কন্যা বিষ্ণু প্রিয়া দাস বলছিলেন, তখনও তারা জানতেন না যে শুধু হার্ট নয়, শরীরের অন্যান্য প্রত্যঙ্গও উল্টোদিকে।

ডা. মুখার্জীর কথায়, “ডেক্সট্রো কার্ডিয়া নিয়ে যে রোগী আসেন, তার অপারেশন করা বেশ কঠিন, কারণ সাধারণত চিকিৎসকরা বেশিরভাগই ডানহাতে কাজ করেন আর রোগীর ডানদিকে দাঁড়িয়ে অপারেশন করেন। কিন্তু মোনারাণীর ক্ষেত্রে বাঁদিকে দাঁড়িয়ে অপারেশন করতে হয়েছে, সেটা কিছুটা নতুন পরিস্থিতি।

এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, মোনারাণী এখন ভালই আছেন। কতটা সুস্থ হয়ে উঠলেন, সেটা দেখার জন্য কিছুদিনের মধ্যেই পরীক্ষা করবেন তারা।

বিজ্ঞানী মার্কো সেভেরিনো ১৬৪৩ সালে প্রথম ডেক্সট্রো কার্ডিয়া চিহ্নিত করেন। এরও প্রায় এক শতাব্দী পরে ম্যাথু বেইলি ব্যাখ্যা করেন সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে অবস্থান করা প্রত্যঙ্গগুলি, তার নাম দেওয়া হয় সাইটাস ইনভার্সিস। আর হৃৎপিন্ডসহ পেটের ভেতরের প্রত্যঙ্গগুলি বিপরীত দিকে অবস্থান করলে সেই অবস্থার নাম ডেক্সট্রোকার্ডিয়া উইথ সাইটাস ইনভার্সিস, যেরকম অবস্থা ছিল বাংলাদেশের মোনারাণী দাসের প্রত্যঙ্গগুলির।