বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কেন!
- সময় ১১:২২:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৫
- / 24
বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত পৃথিবীতেই প্রযুক্তি ব্যবসা থেকে শুরু করে এ শিল্পের নানা ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেড় দশক ধরে দুই দেশের যে সম্পর্কের মাত্রা ছিল; সেখানে নানামূখী পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের পক্ষে বিভিন্ন মন্তব্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেয়া নিয়ে জল ঘোলা কম হয়নি। এরই মাঝে সীমান্তে নানামূখী তৎপরতার কথাও শোনা গেছে।
এবার সামনে এসেছে বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে ভারত নিজেদের শক্তি প্রদর্শন ও কৌশল দেখানোর বিষয়টি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপর জোর দেয়ার কথা জানিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক টানাপোড়নের মধ্যে দেশটি এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালো।
ঢাকায় গত জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর ভারতে বাংলাদেশীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ বেড়েছে বলে দাবি নয়া দিল্লীর। সেই অনুপ্রবেশ ঠেকাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
বিএসএফের দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি নীলোৎপল কুমার পান্ডে ৯ জানুয়ারি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, সীমান্ত প্রহরায় প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে আধুনিক প্রযুক্তির উপর জোর দিয়েছে বিএসএফ। আর এতে সাফল্য মিলেছে হাতেনাতে।
ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত শুধু দুই দেশের ভূখণ্ডের বিভাজন নয়, বরং এটি দুই দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জনগণের জীবনের একটি অঙ্গ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান এবং মানবপাচারের মতো অপরাধগুলো দুই দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৩ সালে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ৯৩১ জন ভারতীয় এবং ১৫৪৮ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছিল বিএসএফ। কিন্তু ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা ভারতীয়দের ক্ষেত্রে কমে ৫৮৬ জনে নামলেও, বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৭৫ জনে।
দুই দেশের সীমান্তের ৯১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি বড় অংশ এখনো কাঁটাতার বিহীন। ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত প্রতিকূলতাকে মাথায় রেখে বিএসএফ প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে। কন্ট্রোল রুম থেকে প্রতিটি গতিবিধি নজরদারি এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বিএসএফ জানায়, তারা সেন্সরযুক্ত নাইট ভিশন ক্যামেরা এবং প্যান-টিল্ট-জুম ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি বাড়িয়েছি। এর পাশাপাশি জওয়ানরা পায়ে টহল দিচ্ছেন। পাম্প অ্যাকশন বন্দুকের মতো নন-লিথাল অস্ত্র ব্যবহারও করা হচ্ছে।
এছাড়া বেষ্টনিবিহীন এলাকাগুলোতে স্মার্ট বেড়া স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ চলছে। ইতোমধ্যে কিছু জমি হস্তান্তর করা হয়েছে এবং শীঘ্রই আধুনিক বেড়া বসানোর কাজ শুরু হবে। দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের প্রায় ৩৬৩ কিলোমিটার নদী সীমান্ত। ফ্রন্টিয়ারের নয়শো কিলোমিটারেরও বেশি এলাকার মধ্যে প্রায় চারশো কিলোমিটারে চিরাচরিত কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া গেছে, বাকি প্রায় অর্ধেক এলাকায় এখনও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে বিএসএফ জানাচ্ছে।
এই এলাকায় বেশ কিছু অরক্ষিত বা ভালনারেবল জায়গা চিহ্নিত করেছে বিএসএফ; যেগুলি দিয়ে সীমান্ত-অপরাধ হচ্ছে। চিহ্নিত জায়গাগুলোতে প্রহরীরা তো থাকবেনই আগের মতো, কিন্তু তার সঙ্গে সমন্বিত একগুচ্ছ অন্য ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
নতুন সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় একসারি কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হবে এবং একই সঙ্গে নজরদারির জন্য একাধিক বৈদ্যুতিক যন্ত্র এবং অত্যাধুনিক ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সঙ্গে প্রহরীদের সতর্ক করার জন্যও কিছু যন্ত্র লাগানো হয়েছে।
এদিকে, সীমান্তে অবৈধ কার্যক্রম রোধে ভারত এবং বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এবং বিজিবি একসাথে কাজ করছে। পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দুই বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়।