বাংলাদেশ-মিয়ানমার: সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে
- সময় ০৯:৪৯:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪
- / 276
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সহিংসতার সময় ছোড়া গোলা প্রায়ই বাংলাদেশের ভিতরে এসে পড়ছে, যাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের কোন দেশের সামরিক শক্তি কতটুকু, সে বিষয়ে প্রতিবছর তালিকা প্রকাশ করে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার।
২০২৪ সালেও প্রতিষ্ঠানটি ১৪৫টি দেশের সামরিক শক্তির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সামরিক শক্তি সম্পর্কেও একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ি, জনসংখ্যার দিক থেকে মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে থাকলেও সামরিক দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স ২০২৪ অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তিতে মিয়ানমারের অবস্থান ৩৫ তম। অন্যদিকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭তম। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪০তম। সে হিসাবে সামরিক শক্তিতে তিন ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। তালিকা তৈরি করার সময় দু’দেশের সৈন্যসংখ্যা, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক অবস্থা, ভৌগোলিক অবস্থান-সহ ৬০ টিরও বেশি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়।
সংস্থাটির প্রতিবেদন বলছে, মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশের সৈন্য সংখ্যা খানিকটা বেশি। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত সৈন্যের সংখ্যা এক লাখ ৬৩ হাজার। সেখানে মিয়ানমারের বাহিনীতে নিয়মিত সৈন্য রয়েছে প্রায় দেড় লাখ।
এছাড়া আধা-সামরিক বাহিনীতেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৬৮ লাখের বিশাল এক আধা-সামরিক বাহিনী রয়েছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারের আধা-সামরিক বাহিনীতে সদস্য রয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার।
তবে মিয়ানমারের ২০ হাজার রিজার্ভ ফোর্স রয়েছে। বাংলাদেশের এ ধরনের কোনো ফোর্স নেই। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে, বছরে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাখাতে ব্যয় হয় ৬৯৯ কোটি মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, মিয়ানমারের বাৎসরিক প্রতিরক্ষা বাজেট মাত্র ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার।
প্রতিরক্ষা বাজেটে এগিয়ে থাকলেও মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশের যুদ্ধবিমান কম রয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কাছে ২১৬টি বিমান রয়েছে, যেখানে যুদ্ধ বিমান রয়েছে ৪৪টি। অন্যদিকে, মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর কাছে মোট বিমান রয়েছে ২৯৩টি, যার এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৫৮টি। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে বিশেষ যুদ্ধবিমান রয়েছে চারটি। অন্যদিকে, মিয়ানমারের কাছে এ ধরনের যুদ্ধবিমান রয়েছে পাঁচটি। এছাড়া মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর কাছে ৮০টি হেলিকপ্টার রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের কাছে হেলিকপ্টার রয়েছে ৭৩টি।
বাংলাদেশের কোনো অ্যাটাক হেলিকপ্টার না থাকলেও মিয়ানমারের রয়েছে ৯টি। বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যক ট্যাঙ্ক রয়েছে মিয়ানমারের। দেশটির সামরিক বাহিনীর কাছে বর্তমানে ৭০৫টি ট্যাঙ্ক রয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশের ট্যাঙ্ক রয়েছে ৩২০টি।
ট্যাঙ্কের সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও অন্যান্য সামরিক যানের সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে সব মিলিয়ে ১৩ হাজারেরও বেশি সামরিক যান রয়েছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে রয়েছে আট হাজারের কিছু বেশি সামরিক যান।
কামানের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে মিয়ানমার। দেশটির সামরিক বাহিনীর কাছে দুই হাজারেরও বেশি কামান আছে, যার মধ্যে ২১৫টি স্বয়ংক্রিয় কামান। বিপরীতে বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ৪৬৪টি কামান রয়েছে। এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে মাত্র ২৭টি।
এছাড়া মোবাইল রকেট প্রজেক্টরের সংখ্যাতেও মিয়ানমারের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মোবাইল রকেট প্রজেক্টর হচ্ছে এমন একটি স্বয়ংক্রিয় সামরিক অস্ত্র, যেটি দিয়ে এক সাথে কয়েকটি রকেট বোমা নিক্ষেপ করা যায়।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে ৫৮০টিরও বেশি রকেট প্রজেক্টর রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের রয়েছে মাত্র ৭১টি মোবাইল রকেট প্রজেক্টর।
মিয়ানমারের নৌ-বাহিনীর কাছে বিভিন্ন ধরনের মোট ৩৬২টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। যা বাংলাদেশের রয়েছে ১৯০টি। এক্ষেত্রে ফ্রিগেট ও কর্ভেটের মতো যুদ্ধজাহাজের সংখ্যায় মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের ছয়টি ফ্রিগেট থাকলেও বাংলাদেশের রয়েছে সাতটি।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের তিনটি কর্ভেট যুদ্ধজাহাজের বিপরীতে বাংলাদেশের রয়েছে ছয়টি। এছাড়া মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফট এবং বাণিজ্যিক নৌযানের দিক থেকে মিয়ানমার এগিয়ে রয়েছে।
মিয়ানমারের নৌবাহিনীর কাছে এখন পর্যন্ত তিনটি সাবমেরিন রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কাছে সাবমেরিন রয়েছে দু’টি। যদিও মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কারো কাছেই বিমান ও হেলিকপ্টারবাহী কোনো রণতরী নেই।
মিয়ানমারের তুলনায় সামরিক শক্তিতে দুই ধাপ পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ স্বস্তিতে রয়েছে। কেননা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ বেশ প্রকট। দেশটির সেনাবাহিনীকে সার্বক্ষণিক বেশ কয়েকটি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। যা বাংলাদেশের জন্য শাপে বর হয়ে ধরা দিয়েছে।