ভারতে যাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ৭৮ স্থানে ঝামেলা রয়েছে
- সময় ১০:৩১:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
- / 27
গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারত সীমান্তে ১৬০টি বেড়া দিতে পারলেও, বাংলাদেশের প্রতিরোধে পিছু হটেছে নওগাঁ, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ কমপক্ষে ৫ টি স্থানে। তবে এখনো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ৭৮ স্থানে এখনো ঝামেলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ-ভারতের বিবাদমান সীমান্তের বিষয়গুলোসহ অসম চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ভারতে যাবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানান, দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক চুক্তির বাইরে গিয়ে ভারতকে দেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধার কারণে সীমান্তে ঝামেলা হচ্ছে। অসম চুক্তি বাতিলে ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি সফর করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে উত্তেজনা, প্রেক্ষাপট তৈরি হয় গেল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। যা এখনো চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ অংশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌকা সীমান্তের অপরপারে শূন্য রেখার ১০০ গজের ভেতরে মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার সুকদেবপুর এলাকায় বেড়া নির্মাণের তৎপরতা শুরু করে ভারত। দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী শূন্য রেখার দেড়শ’ গজের মধ্যে বেড়া নির্মাণ করা যাবে না। সেই শর্ত না মানায় ভারতের এমন কার্যক্রমে বাঁধা দেয় বাংলাদেশ। শুরু হয় দুই দেশের সীমান্তবর্তী মানুষ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মাঝে উত্তেজনা।
এরপর বিএসএফ ও বিজিবির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে দফায় দফায় হয় পতাকা বৈঠক, আলোচনা। যেসবের সারমর্ম নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বৈঠক শেষ করে ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাটের তিন বিঘা করিডোর, নওগাঁর পত্নীতলা, ফেনী কুষ্টিয়া ও কুমিল্লা সীমান্তে সম্প্রতি, ভারত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে শুরু করে, বিজিবির পদক্ষেপে যা এখন বন্ধ আছে।
সীমান্ত নিয়ে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে থাকা সমঝোতার বাইরে গিয়ে, গেল দুই যুগে আওয়ামী লীগ সরকারের অসমভাবে যেসব অনুমতি ও সুবিধা দিয়ে আসছিল, সেসবও দুই দেশের মধ্যে এই সংকট তৈরি হওয়ার কারণ।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আগের সরকার তাদের কতগুলো সুযোগ দিয়েছে। এই সুযোগের মধ্যে তারা প্রায় ১৬০টি স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। আবার ৭৮টি স্থানে ঝামেলা রয়েছে। আমাদের বিজিবি শক্ত অবস্থান নেওয়ায় তারা এই জায়গা থেকে কাজ বন্ধ করত বাধ্য হয়েছে।’
উপদেষ্টা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের অন্তত ১৬০টি স্থানে অসম বেড়া দিয়েছে ভারত। প্রশ্ন ছিল, ভারতকে দেয়া এসব অবৈধ সুবিধা বাতিলে উদ্যোগ নেবে কি এই সরকার?
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘এজন্যই ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত যাচ্ছে। এবং আমরা চিঠি দিবো যে আমাদের যে সমস্ত অসম চুক্তি আছে সেগুলো বাতিল করার জন্য।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আপাতত পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারকে ডেকে এসব বিষয় নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায় থেকে অবহিত করা হবে ভারতকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে।
তিনি জানান, ভারত বাংলাদেশের প্রায় চার হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে যার মধ্যে তিন হাজার ২৭১ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে ফেলেছে ভারত।
বাকি থাকা অংশে যাতে আর বেআইনিভাবে বেড়া না নির্মাণ করতে না পারে একইসঙ্গে তিন বিঘা করিডরসহ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে যেসব অসম সুবিধা নিয়ে আছে ভারত, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তার সুরাহা হয়ে, প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সমতার সম্পর্কের নতুন যাত্রা শুরু হবে বলে আশা করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।