বর্তমান সরকার কি অবৈধ?
- সময় ১১:২৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
- / 264
তীব্র গণআন্দোলনের মুখে গত পাঁচই আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন কি না, তা নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে।
নতুন এই আলোচনার সূত্রপাত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের এক বিবৃতিকে ঘিরে। তার দাবি, হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এমন কোনও নথি তাঁর কাছে নেই।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার প্রায় সাড়ে তিন মাস অতিক্রান্ত। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান পাঁচই আগস্ট জানিয়েছিলেন, হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়েছেন।
কিন্তু হাসিনার পুত্র জয় দাবি করেছিলেন, তাঁর মা দেশ ছাড়ার আগে পদত্যাগ করেননি।
প্রশ্ন হচ্ছে: আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কোনও প্রয়োজন ছিল কি না? অথবা শেখ হাসিনা যদি সত্যিই পদত্যাগপত্র জমা না দেন, ভবিষ্যতে এটি নিয়ে কোনও সংকট তৈরি হতে পারে কি না?
৫ আগস্ট সেনাপ্রধানের বিবৃতির আগেই ওইদিন দুপুরের পরই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ও তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়। তখন অনেক মানুষকে গণভবন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও সংসদ ভবনে ঢুকে উল্লাস করতে দেখা গিয়েছিল।
পরদিন ছয়ই আগস্ট রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করার কথা জানানো হয়। দুই দিন পর, গত আটই আগস্ট শপথ নেয় অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৭ ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হওয়ার জন্য যে শর্তাবলী রয়েছে, তার মধ্যে দুটি হলো রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগ জমা দেওয়া এবং সংসদ সদস্য পদে না থাকা।
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, একজন প্রধানমন্ত্রী আরেকজন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যান। যেহেতু তিনি দেশ ছেড়ে গেছেন এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, তাই সংসদ ভাঙার পর তার প্রধানমন্ত্রীত্বের আর কোন সুযোগ থাকে না।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেও কোনও প্রথা নেই। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানে উল্লেখ না থাকলেও বিশেষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পরামর্শে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন।
তবে আইন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, ভবিষ্যতে কখনো পরিস্থিতি ও সুযোগ তৈরি হলে আদালতে বিষয়টি উঠতে পারে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী পদ শূন্য হওয়ার পর যে সরকার গঠিত হয়েছে, তা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে যারা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করবে, তাদের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারকে বৈধতা দিতে হবে, যাতে এই নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের সুযোগ না থাকে।
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকাকালে যে সব কাজ করেছিল, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর সংসদে তাদের বেশিরভাগ কাজের বৈধতা দেওয়া হয়েছিল।