ববিতে রাব্বানি- মনিরুলের কেরামতি!
- সময় ০৬:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
- / 1082
৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর বর্তমানে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্র. ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বতীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। নানামূখী সংস্কারের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। যারা জুলাই আগস্ট বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে না, তাদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের পদায়নও করা হয়েছে। এর ব্যতিক্রম ঘটেনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। একই সঙ্গে প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপ উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানি।
নিয়োগ প্রাপ্তির এক মাস পূর্তির আগেই তিনি এবং রেজিস্ট্রার মো: মনিরুল ইসলাম মিলে নতুন কেরামতি শুরু করেছেন এমন অভিযোগ করেছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়টি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তারা বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য হিসাবে যোগদানের পর থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু প্রথমবারের মতো উপ উপাচার্য পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। ড. গোলাম রাব্বানি যোগদানের পর থেকেই রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. রেজা শরীফকে ব্যবহার করছেন ঢাল হিসাবে।
যদিও রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। তিনি নতুন ভিসি ড. শুচিতা শরমিনকে নিজের দলে ভিড়াতে না পারায় উপ উপাচার্য গোলাম রাব্বানির দারস্থ হয়েছেন। নিজের মেয়াদ বৃদ্ধির পাঁয়তারা করতে এবং আগামী বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে লুটপাটের আশায় তিনি মূলত এমন কাজে ছাত্রদলের সাবেক নেতা রেজাসহ আরো অনেককে ব্যবহার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করেছে এমনটি।
উপ উপাচার্য হিসাবে গোলাম রাব্বানি যোগদানের পর থেকেই উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনেকে চাপে রাখতে নানামুখী তৎপরতা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। । তৃতীয় পক্ষের এই ইন্ধনেই এমনটা হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
উপ উপাচার্য ৩০ অক্টোবর নিয়োগ পেয়েছেন। তার আগেই উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। ২৩ সেপ্টেম্বর উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পেয়ে তিনি ২৬ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন। এরপর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ঠিকমতো চললেও উপ উপচার্য গোলাম রাব্বনিকে নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে নতুন কারসাজি।
ইতিমধ্যে ড. শুচিতা শরমিনকে চাপে রাখতে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের মাঠে নামানো হয়েছে। এমনকি ভিসির কক্ষে তালা পর্যন্ত দেয়া হয়েছিল। ২৮ নভেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানি বলেছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক যে একমাস হয়েছে আমি এখানে এসেছি । আমি নিজেই বৈষম্যের শিকার। আপনারা সবই জানেন। আমি এখানে কাজ করতে এসেছি। আমি রুমে বসে পত্রিকা পড়তে আসিনি। আমি একটা মাস ধরে অফিসে নয়টার সময় যাই ,কখনো পাচঁটায় কখনো সাতটায় রুমে ফিরে যাই। কর্মহীন দিন অতিবাহিত করি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ ও আহতদের স্মরণে এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার ( ২৮ নভেম্বর ) দুপুর আড়াই টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এটিএম রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী। এর আগে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের নাম ব্যানার থেকে কালো কালি দিয়ে মুছে দেন শিক্ষার্থীরা। এমন কাজটির পিছনে নাটের গুরু হিসাবে কাজ করেছেন ড. গোলাম রাব্বানি এবং রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম।
এমনকি ভিসি ড. শুচিতার পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষার্থীরা। আল্টিমেটামে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ববি উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। উপাচার্য কার্যালয়ের লোকজনকে বের করে দিয়ে দুটি কলাপসিবল গেট তালবদ্ধ করে রাখেন। দপ্তর থেকে উপাচার্যের নামফলকও তুলে দেন বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা।
কিন্তু ড. শুচিতা শরমিন আজ ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস করেছেন। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার ঘোষণার পাশাপশি তাদের ১৭ দফা দাবি পূরণে আশ্বাস দিয়েছেন।
উপ-উপাচার্য গোলাম রাব্বানি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আমি চব্বিশকে লালন করি ধারণ করি। গত ১৫ বছর যাবৎ স্বৈরশাসক যেভাবে আমাদের কণ্ঠরোধ ও দমন করার চেষ্টা করেছে তা কোনো গণতান্ত্রিক ও সভ্য দেশে সম্ভব না। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুধু কোটা বিরোধী আন্দোলনই ছিল না বরং ছাত্র-জনতা ও মেহনতি মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছিল এই জুলাই এবং আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে।
নির্ভরযোগ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র দাবি করেছেন, দেশত্যাগী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম সহযোগী শিক্ষাখাত ধ্বংসের অন্যতম মূল হোতা সাবেক মন্ত্রী ড. দীপু মনির প্রেতাত্মারা এখনো শিক্ষাখাতে সক্রিয় রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন বরিশালের নতুন উপ উপাচার্য ড. গোলাম রাব্বানি। মূলত দীপু মনির ভাই ডা. ওয়াদুদ টিপুর ঘনিষ্ঠজন হিসাবেই পরিচিত গোলাম রাব্বানি।
বরিশালের ছাত্রদলের একটি সূত্র দাবি করেছে, ড. মো: গোলাম রব্বানি নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো মনিরুল ইসলাম তাদের বলেছে, ড. শুচিতাকে চাপে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে নিয়োগ এবং ঠিকাদারি কাজ পাবে।
রেজিস্ট্রার হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ফেব্রুয়ারিতে কিন্তু তিনি নিজের দায়িত্ব প্রলম্বিত করার জন্য উপ- উপাচার্যের সাথে হাত মিলিয়ে এই নোংরা খেলায় মেতে উঠেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে একাধিক সাবেক ছাত্রদল নেতা।
ববির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনকে বরিশাল থেকে দূরে রাখা যায় তাহলে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী হবেন বর্তমানে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম। তিনি তার দুর্নীতি এবং অসৎ কার্যকলাপ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারেন এবং পূর্বের দুর্নীতি চাপা রাখতে পারেন ।
বর্তমান রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল চাকরিচ্যুত করেছিলেন তৎকালীন উপাচার্য এবং তিনি চার বছর চাকরি থেকে বরখাস্ত ছিলেন ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে উপ উপচার্য ড. গোলাম রাব্বানির সাথে মুঠোফোনে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রার মনিরুলের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তার সঙ্গে আমার অফিসিয়াল সম্পর্কের বাইরে কোনো কথা হয়নি। এছাড়া আমি এখনো একমাস দায়িত্ব নিয়েছি। এখনো কর্মহীন রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে যেসব সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা তার কিছুই পাইনি। ববিতে এসে গেস্ট হাউজের একটি রুমে আমাকে থাকতে হচ্ছে। ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ততা এবং মনিরুলের সঙ্গে কারসাজির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামকে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।