ঢাকা ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ১১:৫৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / 233

হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং; বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত। যেখানে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার। ঐতিহাসিক কমলারানীর দীঘি, লক্ষীবাওর জলাবন, ৬শ’ বছরের প্রাচীন বিথলের আখড়া, প্রাচীন মসজিদসহ রয়েছে অনেক পুরাকীর্তি।

গ্রামের চারপাশ বেষ্টিত পরিখাকে চমৎকার ‘লেক’সহ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা সত্ত্বেও গড়ে ওঠেনি পর্যটন কেন্দ্রের কোনো সুবিধা।

পঞ্চাশ খ্রিস্টাব্দে বানিয়াচং গ্রামের গোড়াপত্তন হয়। চারটি ইউনিয়ন পরিষদ কাঠামোর ভিত্তিতে গ্রামটি বিভক্ত। গ্রামের নামে বানিয়াচং উপজেলার নামকরণ হয়েছে। সুলতানী আমলে করদ রাজ্য ও মোগল আমলে লাউর রাজ্যের রাজধানী ছিল বানিয়াচং।

সাধারণত কয়েকটি পাড়া বা মহল্লা নিয়ে গঠিত হয় গ্রাম। কিন্তু এই সংজ্ঞা অচল বানিয়াচং গ্রামের ক্ষেত্রে। ১২০টি পাড়া ও চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বানিয়াচং গ্রামে এক লাখ ২০ হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামটির দৈর্ঘ্য ৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৮ কিলোমিটার বা ৩২ দশমিক ৪৩ বর্গমাইল; আয়তনের বিশাল ভুখণ্ডটি মানুষের কাছে ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

একসময় পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো। তখন বানিয়াচং ছিল এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম। শিকাগো নগরে পরিণত হওয়ায় আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে পৃথিবীর বড় গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বানিয়াচং।

দ্বাদশ শতাব্দীতে কমলারানীর দীঘি খনন করেন রাজা পদ্মনাভ। ৬৬ একর আয়তনের কমলারানীর দীঘি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দীঘি হিসেবে স্বীকৃত। তৎকালীন মন্ত্রী সিরাজুল হুসেন খানের প্রচেষ্টায় ১৯৯০ সালে দীঘিকে পুনঃখনন করা হয়। সাগরের মতো বিশাল হওয়ায় সাগরদীঘিও বলে থাকেন লোকজন।

মোগল আমলের প্রাচীন বিবির দরগা মসজিদ, পুরান বাগ, ২নং হাবেলি ও কালিকাপাড়ার মসজিদ, জয়কালি মন্দির, রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ কালের সাক্ষী।

বানিয়াচং গ্রামের চারপাশ ঘেরা প্রায় ২০ কিলোমিটার পরিখা। এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া পরিখা স্থানীয়রা চেনেন গড়খাল নামে। পরিখাটি বর্ষাকালে লেকের রূপ ধারণ করে।

বানিয়াচং উপজেলা হাওর এলাকা হওয়ায় এখানে ৯০ শতাংশ জমিতে এক ফসল জন্মে। তাই এই উপজেলার ৯০ শতাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। বাকিদের অধিকাংশই প্রবাসী।

বাইসাইকেলে করে বিশ্ব ভ্রমণকারী প্রথম বাঙালি ভূ-পর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি এই গ্রামে। ১৯৭১ সালে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুল হাসান এই গ্রামের সন্তান। এছাড়াও এই গ্রামে জন্ম নিয়েছেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দী, গায়ক ও সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী, উপমহাদেশের খ্যাতিমান ফুটবল খেলোয়াড় দেবেন্দু মহারতœ রবিসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্ম এই মাটিতে।

গ্রামটি পর্যটনের অপর সম্ভাবনা হতে পারে এবং কোলাহলে মুখরিত হতে পারে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমনে। যা থেকে সরকারও আয় করতে পারে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

শেয়ার করুন

পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম

সময় ১১:৫৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং; বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত। যেখানে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার। ঐতিহাসিক কমলারানীর দীঘি, লক্ষীবাওর জলাবন, ৬শ’ বছরের প্রাচীন বিথলের আখড়া, প্রাচীন মসজিদসহ রয়েছে অনেক পুরাকীর্তি।

গ্রামের চারপাশ বেষ্টিত পরিখাকে চমৎকার ‘লেক’সহ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা সত্ত্বেও গড়ে ওঠেনি পর্যটন কেন্দ্রের কোনো সুবিধা।

পঞ্চাশ খ্রিস্টাব্দে বানিয়াচং গ্রামের গোড়াপত্তন হয়। চারটি ইউনিয়ন পরিষদ কাঠামোর ভিত্তিতে গ্রামটি বিভক্ত। গ্রামের নামে বানিয়াচং উপজেলার নামকরণ হয়েছে। সুলতানী আমলে করদ রাজ্য ও মোগল আমলে লাউর রাজ্যের রাজধানী ছিল বানিয়াচং।

সাধারণত কয়েকটি পাড়া বা মহল্লা নিয়ে গঠিত হয় গ্রাম। কিন্তু এই সংজ্ঞা অচল বানিয়াচং গ্রামের ক্ষেত্রে। ১২০টি পাড়া ও চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বানিয়াচং গ্রামে এক লাখ ২০ হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামটির দৈর্ঘ্য ৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৮ কিলোমিটার বা ৩২ দশমিক ৪৩ বর্গমাইল; আয়তনের বিশাল ভুখণ্ডটি মানুষের কাছে ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

একসময় পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো। তখন বানিয়াচং ছিল এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম। শিকাগো নগরে পরিণত হওয়ায় আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে পৃথিবীর বড় গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বানিয়াচং।

দ্বাদশ শতাব্দীতে কমলারানীর দীঘি খনন করেন রাজা পদ্মনাভ। ৬৬ একর আয়তনের কমলারানীর দীঘি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দীঘি হিসেবে স্বীকৃত। তৎকালীন মন্ত্রী সিরাজুল হুসেন খানের প্রচেষ্টায় ১৯৯০ সালে দীঘিকে পুনঃখনন করা হয়। সাগরের মতো বিশাল হওয়ায় সাগরদীঘিও বলে থাকেন লোকজন।

মোগল আমলের প্রাচীন বিবির দরগা মসজিদ, পুরান বাগ, ২নং হাবেলি ও কালিকাপাড়ার মসজিদ, জয়কালি মন্দির, রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ কালের সাক্ষী।

বানিয়াচং গ্রামের চারপাশ ঘেরা প্রায় ২০ কিলোমিটার পরিখা। এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া পরিখা স্থানীয়রা চেনেন গড়খাল নামে। পরিখাটি বর্ষাকালে লেকের রূপ ধারণ করে।

বানিয়াচং উপজেলা হাওর এলাকা হওয়ায় এখানে ৯০ শতাংশ জমিতে এক ফসল জন্মে। তাই এই উপজেলার ৯০ শতাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। বাকিদের অধিকাংশই প্রবাসী।

বাইসাইকেলে করে বিশ্ব ভ্রমণকারী প্রথম বাঙালি ভূ-পর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি এই গ্রামে। ১৯৭১ সালে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুল হাসান এই গ্রামের সন্তান। এছাড়াও এই গ্রামে জন্ম নিয়েছেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দী, গায়ক ও সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী, উপমহাদেশের খ্যাতিমান ফুটবল খেলোয়াড় দেবেন্দু মহারতœ রবিসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্ম এই মাটিতে।

গ্রামটি পর্যটনের অপর সম্ভাবনা হতে পারে এবং কোলাহলে মুখরিত হতে পারে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমনে। যা থেকে সরকারও আয় করতে পারে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।