পুলিশের মধ্যে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ সমস্যা তৈরি করে
- সময় ১১:৫৬:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 26
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেছেন, ‘র্যাব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি। এত ভয়াবহ ঘটনার পর র্যাবকে সমাজে রাখা ঠিক হবে না। এরা জনগণের সেবা করতে পারে না।’
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহী নগরের পদ্মাপারে লালনশাহ মুক্তমঞ্চে গুমের বিরুদ্ধে একটি গণজমায়েতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
নূর খান বলেন, পুলিশের কাজ পুলিশকে দিয়ে করানো উচিত, পুলিশের মধ্যে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ নতুন করে সমস্যা তৈরি করে।
গণজমায়েতে উপস্থিত ছিলেন গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদুর রহমান ও নাবিলা ইদ্রিস।
পরে গণজমায়েতে গুম, ক্রসফায়ার, পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। তারা এসব ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
আরো বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন খান, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবা হাবিবা, মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম, সমন্বয়ক রিমন ইসলাম।
এর আগে গুম নিয়ে নূর খান লিটন বেসরকারি টেলিভশনে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, আমরা যে পরিমাণ সিক্রেট সেল বা আয়নঘর দেখেছি, যে পরিমাণ বন্দিরা ফেরত এসেছে, তাদের বয়ান থেকে আমরা যা জেনেছি তা, ভয়াবহ। বন্দিদেরকে রাখা হতো ৪ ফিট লম্ব আর ৩ ফিট চওড়া ছোট্টো ঘরে। সেখানে রাতদিনের তফাৎ বোঝা যেত না। বন্দিরা তাদের খাবার দেখে দিনরাতের হিসাব মেলাতেন। বন্দি ঘরের দেয়ালে গুহামানবদের মতো আঁচড় দিয়ে বিভিন্ন কথা লিখে রাখতেন বন্দিরা। অনেকে আয়নাঘরে পবিত্র কোরআন শরীফের আয়াতও লিখে রেখেছেন।
নূর খান লিটন বলেন, বাথরুমের চেয়েও ছোট সেসব বন্দি ঘর। সেখানে আলো-বাতাস সীমিত পরিমাণে প্রবেশ করানো হতো, যাতে সেখানকার বন্দিরা রাতদিনের পার্থক্য না বোঝে। যখন খাবার দেওয়া হতো, বন্দিরা খাবার দেখে শনাক্ত করতে পারতেন এখন দিন না রাত। সকালের নাস্তায় সাধারণত রুটি বা খিচুড়ি দেওয়া হতো, যা দেখে বুঝতো তারা একটি দিন পার করেছে। আমরা গুহামানবের কথা শুনেছি, যেখানে তারা দেয়ালে চিত্র আঁকতো, সংকেত লিখে রাখতো। আমরা এখানে দেখেছি বন্দিরা থালা দিয়ে বা ইটের টুকরা দিয়ে দেয়াল আঁচড় কেটে দিনের হিসাব রাখতো। এভাবে আমরা ১৮২ দিন থেকে ৩০০ দিনের মতো ডেট পেয়েছি। অস্পষ্ট কয়েকটি মোবাইল নম্বর এবং দু’একটি নামও পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, মানুষ মৃত্যুর আগে যে আকুতি জানাই- সেসব মর্মস্পর্শী বার্তাও পেয়েছি। যেমন- কেউ লিখেছেন ‘আই লাভ মাই ফ্যামিলি’। কেউ লিখেছেন- ‘বিজয় সুনিশ্চিত’। কেউ লিখেছেন- ‘হে আল্লাহ তুমি আমাকে রক্ষা করো’ আবার কেউ ‘পবিত্র কোরআনের আয়াত লিখে রেখেছেন।’
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, পাশাপাশি মানুষকে কিভাবে নির্যাতন করা হতো তার কিছু সিনড্রোম (নমুনা) আমরা পেয়েছি। কাউকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যখন হত্যা করা হয়; তখন তাকে ইনজেকশন পুশ করা হয় অথবা কাউকে পলিথিন দিয়ে মুখ মুড়িয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। সেসব মরদেহ পেট কেটে সিমেন্টের বস্তা দিয়ে বেঁধে নদীর মাঝখানে ফেলে দেওয়া হতো।
নূর খান লিটন বলেন, লাশ ফেলে দেওয়ার কিছু কিছু জায়গা আমরা দেখেছি। যেমন পোস্তগোলায় একটা নৌকা রাখা ছিলো, যেটা সুন্দরবনের দস্যুদের কাছ থেকে উদ্ধার করা। পরে সে নৌকাটি ঢাকায় নিয়ে এসে গুমের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হতো।