পাকিস্তান আক্রমণ করবে আফগানিস্তান!
- সময় ১০:৪৭:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 26
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পাকতিকার বারমালে পাকিস্তানি বিমান হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। প্রয়োজনে পাকিস্তানে আক্রমণ চালিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে আফগানিস্তান।
জোর দিয়ে তারা আরও বলেছে, আফগানিস্তানের ভূমি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা তাদের বৈধ অধিকার। ওয়াজিরিস্তানি উদ্বাস্তুদের লক্ষ্য করে বোমা হামলার জবাব পাকিস্তানকে দিতে হবে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে পাকিস্তানের বিমান হামলার পর ওই প্রতিক্রিয়া জানায় মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওই অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে থাকা বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকেও কড়া প্রতিক্রিয়া দেখানোর শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এখনো কয়েক ঘণ্টা আগে বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সূত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছে, বিমান হামলা সীমান্তে পাকিস্তানি তালেবানের আস্তানাকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে। কারণ, তালেবানরা পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা বাড়িয়েছে। আফগান তালেবানরা ওই জঙ্গিদের হামলা ঠেকাতে তাদের সহযোগিতা করছে না। বরং, আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে পাকিস্তানের সীমান্ত অশান্ত করে তুলেছে।
তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়াতুল্লাহ খোয়ারজমি পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্রের দাবি অস্বীকার করেছেন। এক্স-বার্তায় তিনি বলেন, বেসামরিক মানুষদের ওপর হামলা হয়েছে। যাদের বেশিরভাগ ওয়াজিরিস্তানি উদ্বাস্তু। তারাই বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।
যদিও কোনো সঠিক হতাহতের পরিসংখ্যান দেননি তিনি। তবে খোয়ারজমি বলেছেন, হামলায় বেশ কয়েকজন শিশু এবং অন্যান্য বেসামরিক ব্যক্তি শহীদ ও আহত হয়েছেন।
অপরদিকে পৃথক সূত্র বলছে, পাকিস্তানের হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে আফগানিস্তানের একটি নিভৃত গ্রাম। সেই গ্রামের নারী-শিশুসহ অন্তত ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি।
আফগান সংবাদমাধ্যম দ্য খামা প্রেস নিউজ এজেন্সি স্থানীয় সূত্রের বরাতে ওই তথ্য জানিয়েছে। এসব দাবি একতরফা। কারণ, পাকিস্তান এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
খামা প্রেস বলেছে, পাকতিকা থেকে পাওয়া প্রতিবেদনগুলো ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। এ প্রদেশের বারমাল জেলায় পাকিস্তানি বিমান হামলার পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে নারী ও শিশুসহ ১৫টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হামলায় একটি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে বিমান হামলা করা হয়। বারমাল জেলার অন্তত সাতটি গ্রামে মুহুর্মুহু ফেলা হয় বোমা। এর মধ্যে লামন গ্রামে নারী ও শিশুসহ এক পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। অপরদিকে প্রদেশের বারমাল জেলার মুর্গ বাজার এলাকায় একটি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানকার ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহ উদ্ধারের কাজ চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। তাদের সঙ্গে স্থানীয় সাধারণ মানুষ যোগ দিয়েছেন। তারা বলছেন, পাকিস্তান থেকে যুদ্ধবিমান আসতে তারা দেখেছেন। কিছু বুঝে উঠার আগেই বোমা ফেলা শুরু হয়। বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে শান্ত গ্রামগুলো। যে পরিমাণ বোমার বর্ণনা তারা দিচ্ছেন তাতে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, গত বেশ কয়েক বছর ধরে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে তালেবানাগোষ্ঠীর পাকিস্তান শাখা তেহরিক ই তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) তৎপরতা বাড়ছে। পাকিস্তানের সরকার কয়েক বছর নিষিদ্ধ করেছে টিটিপিকে। ওয়াজিরিস্তান টিটিপির একটি শক্তিশালী ঘাঁটি অঞ্চল।
টিটিপিকে দমনে খাইবার পাখতুনখোয়ায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। সেই অভিযান থেকে বাঁচতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক পাকিস্তানি নাগরিক। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারও এই শরণার্থীদের বসবাসের অনুমতি দিয়েছে।
পাকিস্তানের অভিযোগ, তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর টিটিপি ও সমমনা গোষ্ঠীগুলোর ‘স্বর্গরাজ্যে’ পরিণত হয়েছে আফগানিস্তান। নিষিদ্ধ টিটিপিকে বিভিন্নভাবে তালেবান সরকার সহযোগিতা ও সহায়তা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। টিটিপিকে দমনে একাধিকবার কাবুলকে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামাবাদ।
আফগানিস্তান অবশ্য বরাবরই টিটিপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে একই সঙ্গে টিটিপিকে দমনে যৌথ অভিযানের প্রস্তাবেও অনীহা জানিয়েছে তালেবান সরকার। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী এ দু’টি দেশের মধ্যকার উত্তেজনা ক্রমশঃ বাড়ছে।