নিরাপত্তা জোরদার, প্রশাসন সক্রিয়
পর্যটকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মুখরিত কক্সবাজার
- সময় ০৯:৪৪:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 25
অবকাশকালীন বড় দিন, সাপ্তাহিক ছুটি ও থার্টি ফার্স্ট নাইটকে সামনে রেখে কক্সবাজার এখন যানজটের নগরীতে পরিনত হয়েছে। এমনিতে পুরো ডিসেম্বর জুড়ে দৈনিক লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে কক্সবাজারে। তাদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে উঠেছে সমুদ্রনগরী। সমুদ্র সৈকতের ৭ পয়েন্টের ৫ কিলোমিটার জুড়ে সকাল সন্ধ্যা পর্যটকে ভরপুর থাকে। আজ ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনের ছুটিতে সমুদ্র সৈকতে বিকাল ছিল বিচিত্র মানুষের মহামিলন মেলা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পর্যটন শহরে এখন অবস্থান করছে তিন লক্ষাধিক পর্যটক। অনেকে কক্ষ না পেয়ে বালিয়াড়ির ছাতায় রাত কাটাচ্ছেন অসংখ্য পর্যটক। বীচ কর্মী রফিক মাহমুদ বলেন, ডিসেম্বর মাসের বিশেষ করে সরকারী ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অগণিত পর্যটককে বীচে রাত কাটাতে দেখা গেছে।
হোটেল মালিক সমিতির নেতা রমজান আলী সিকদার জানিয়েছেন যারা হোটেল বুকিং কনফার্ম না করে এসেছেন তারা পরেছেন চরম ভোগান্তিতে। তাদের অনেককে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নিম্নমানের হোটেলে রুম নিতে হয়েছে, নয়তো খোলা আকাশের নীচে কনকনে শীতে রাত কাটাতে হয়েছে। তবে অতিথিদের নিরাপত্তা দিতে নিরাপদ ছক কষে মাঠে রয়েছে প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে যা জানা গেছে, চলতি মৌসুমের ডিসেম্বর ছিল ব্যবসায়ীদের গোল্ডেন পিরিয়ড। আর প্রশাসনের জন্য ছিল অসাধারণ চ্যালেঞ্জিং। তবে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। কোন বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটেনি।
সাপ্তাহিক ছুটিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে হোটেল হোটেল জোন, সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট সমূহে। যদিওবা রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘ তিন মাস যাবৎ পর্যটন ব্যবসায়ী ও প্রশাসন পরিস্থিতি সামলাতে নানা ভাবে হিমশিম খেতে হয়েছে। তারা এখন ব্যস্ত ক্ষতিপূরণ পুষাতে। আগে থেকেই প্রস্তুতি সেরে রেখে নানা আয়োজন পর্যটন ব্যবসায়ীরদের। কয়েকটি সরকারি ছুটি মিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি প্রায় ১১ দিন। আদালত পাড়ায় চলছে মাসব্যাপী অবকাশকালীন ছুটি। গত বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত সপ্তাহ থেকে পর্যটন শহরে শতভাগ হোটেল কক্ষ খালী নেই। আগাম বুক হওয়াতে যারা বুকিং না দিয়ে এসেছেন তাদের অধিকাংশ পড়েছে ভোগান্তিতে । বন্ধের সময়টা কাজে লাগাতে ভ্রমণে এত সংখ্যক পর্যটক আগে চোখে পড়েনি। পার্বত্য চট্টগ্রমের কিছু স্পটে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সবার লক্ষ্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
কলাতলী হোটেল মোটেল জোনের সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটক সমাগম সমান থাকবে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে পুরো ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯০-৯৮ শতাংশ হোটেল রুম বুকিং হয়েছে। দীর্ঘদিন মন্দা যাওয়া পর্যটন ব্যবসায় সতেজতা এনেছে ডিসেম্বরের ছুটি। জানুয়ারিতেও কক্সবাজার আসতে আগাম বুকিং দিয়েছেন প্রচুর ভ্রমণপ্রেমী পরিবার। চলতি মাসের ছুটিতে আমরা এখন পর্যন্ত শতভাগ বুকিং সম্পন্ন করেছি। মৃত প্রায় পর্যটনে সতেজতা ফেরার কারণে সংশ্লিষ্টরা খুবই খুশি।
টুয়াকের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান মিল্কি বলেন- কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস রয়েছে প্রায় সড়ে পাঁচশত। এসব আবাসনে দৈনিক প্রায় ৩ লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে চাপ বেড়েছে হোটেলগুলো।
হোটেল সী-নাইটের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, ‘টানা বন্ধে অতীতেও প্রায় প্রতিটি আবাসিক প্রতিষ্ঠান কম-বেশি পর্যটক বুকিং দিয়ে এসেছেন । গত বৃহস্পতিবার হতে পর্যটকের চাপ আরো বেড়েছে। টানা ছুটি কাজে লাগানোর কারণে কলাতলির সবকটি হোটেল এখন ভরপুর। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আন্দোলনের সময় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে আনা সম্ভব হবে।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, পর্যটকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে টুরিস্ট পুলিশের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশও মাঠে নিরলস ভাবে কাজ করছে সব ধরনের যানজট এড়াতে। ব্যবসায়ীরা বলেন, পর্যটকরা আমাদের অতিথি নারায়ণ। তাদের সেবা দিতে আমরা প্রানপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পর্যটকরা নির্ভয়ে যাতে বেড়াতে পারে তার প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সকল পক্ষের সাথে বসে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।
হোটেল টাইড ওয়াটারের ব্যবস্থাপক আনোয়ার শিকদার বলেন, কক্সবাজারকে নিয়ে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে, সেভাবে পর্যটনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নেই। এরপরও দীর্ঘ সৈকত, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, রাখাইন পল্লী, রামু বৌদ্ধ বিহার, পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি লেক, গয়াল প্রজনন কেন্দ্র, ঘুমধুমের কুমির প্রজনন কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলায় কিছু পর্যটন স্পট থাকায় লোকজন আসেন। ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরী করা দরকার। সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা পর্যটন ব্যবসাকে আরো চাঙ্গা করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে আসা রফিকুল ইসলাম, লিলি চৌধুরী জানান- এবার আমরা রুম বুকিং দিয়ে এসেছি। অতীতে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেখান থেকে সচেতন হয়ে এসেছি বলে রুম ভাড়া তেমন একটা বেশি পরেনি। এখানে এসে রুম ভাড়া করলে দাম বেশি পরে এবং অনেক কষ্টে রুম যোগাড় করতে হয়। কক্সবাজারের প্রশাসন খুবই আন্তরিক এবং পরিকল্পনা করে মাঠে রয়েছে আমরা বুঝেছি, যোগ করেন রফিকুল ও লিলি।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি আবুল কালাম বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে নিরাপত্তার চাদরে আমরা ঢেকে রেখেছি শুধুমাত্র পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য। আমাদের চিহ্নিত বিশেষ জায়গাগুলোতে আমরা টহলদারি নজরদারী এবং সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন রেখেছি। পর্যটকদের সহযোগিতা করতে টুরিস্ট পুলিশ সদা সর্বদা পাশে আছে। বিশেষ এলাকার মধ্যে কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্ট, ইনানী বিচ,পাটোয়ারটেক,কাকড়া বিচ, টেকনাফ বিচ পর্যন্ত পুলিশরা সর্বদা নিয়োজিত থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নামানো হয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে অবস্থান ও কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পুরো সৈকত নজরদারির আওতায় আছে। থাকবে যৌথ টহল, প্রশাসনের মোবাইল টিম, পেট্রোলিং রয়েছে টিমগুলো।’
ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো জসিম উদ্দিন চৌধুরী যানজট নিয়ন্ত্রণ ও পরিষেবা বৃদ্ধি সম্পর্কে বলেন- আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে পুরো ডিসেম্বরের জন্য। ১২ টি স্পটে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ নিজস্ব পরিকল্পনায় সদা সচেষ্ট রয়েছে। অতিরিক্ত পর্যটক চাপ সামলাতে এবং গাড়ির বিন্যাস সাজাতে আমরা উদ্যোগ গ্রহনের কারনে বেগ পেতে হচ্ছে না। সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন- পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম নামানো হয়েছে । সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এডাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনদের আমরা দিকনির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি পর্যটকরা কক্সবাজারকে ভিন্নরূপে উপভোগ করবে নিরাপত্তায় – বিনা সংকোচে। অতিরিক্ত ভাড়া এবং খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে জেলা প্রশাসনের টিম। তিনি কক্সবাজারে নিরাপদ ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের শতভাগ নিরাপত্তা জোরদার করেছেন বলে নিশ্চিত করেন।