ঢাকা ০১:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে শেভরন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • সময় ০৭:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 18

শেভরন

এনার্জি জায়ান্ট শেভরন দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রয়াসে বাংলাদেশে নতুন গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন ভিত্তিক কোম্পানিটির সিনিয়র কর্মকর্তারা।

শেভরনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা আনন্দিত যে, বিগত শেখ হাসিনা সরকার গত দুই বছরে কোম্পানিটিকে অর্থ প্রদান বন্ধ করার পর অন্তর্বর্তী সরকার কয়েক মিলিয়ন ডলারের বকেয়া পরিশোধ শুরু করেছে।

কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলোর এর নেতৃত্বে শেভরনের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ক্যাসুলো বলেন, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা শেভরনকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন খনন কার্যক্রমে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ব করেছে।

তিনি বলেন,’আমরা নতুন উপকূলীয় গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করব। নতুন গ্যাসের মজুদ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তুলব।’ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নতুন গ্যাসের মজুদ অন্বেষণে শেভরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির মধ্যে স্থানীয় কোম্পানিগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত।

পার্বত্য অঞ্চল
পার্বত্য অঞ্চলে গাস অনুসন্ধান

আমরা দেশে আরও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। প্রধান বহুজাতিক কোম্পানি ইতোমধ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।’

এসময় দেশে ভালো বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে তার একটি সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য শেভরনের সামাজিক দায়বদ্ধতার কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সরকার আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেভরনের বকেয়া পরিশোধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই শেভরন এবং পেট্রোবাংলা ছয় মাসের ঋণ পরিশোধের চুক্তিতে পৌঁছেছে।

উল্লেখ্য, ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ বিশ্ব মোড়লদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার ওপর তীক্ষ্ম নজরদারি ছিল পরাশক্তির কয়েকটি দেশের। সমুদ্রের পাশাপাশি অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে চোখ রয়েছে বিদেশি কোম্পানির।

প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তবু দেশের পার্বত্য অঞ্চল রয়ে গেছে অপেক্ষাকৃত অনাবিষ্কৃত। বর্তমানে পেট্রোবাংলা নতুন করে পার্বত্য অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ কি দেশের জ্বালানি খাতের জন্য আশার আলো দেখাবে, নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে?

পার্বত্য অঞ্চল, যেখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য মেলে ধরেছে তার সুষমা। এই এলাকায় রয়েছে গ্যাসের বিপুল সম্ভাবনা। পেট্রোবাংলা এবার ব্লক ২২বি অঞ্চলকে লক্ষ্য করে কাজ শুরু করতে চায়। এই ব্লকটি বান্দরবান, কক্সবাজার ও কাপ্তাইয়ের কিছু অংশজুড়ে বিস্তৃত।

পাশের দেশ ভারতের ত্রিপুরায় মাত্র ১৬০টি কূপ খননের মাধ্যমে ১১টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪টি কূপ খনন করেছে বাংলাদেশ। অথচ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অঞ্চল দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূতাত্ত্বিক গঠন গ্যাসের সন্ধানের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিদেশি কোম্পানিকে এই অঞ্চলে কাজ করতে উৎসাহিত করা উচিত।

পেট্রোবাংলা জানায়, প্রায় তিন দশক পর অনশোরের জন্য প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট বা পিএসসি হালনাগাদ করা হয়েছে। নতুন চুক্তিতে এমন প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা বিদেশি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ বাড়াবে।

ব্লক ২২বি অঞ্চলটি ঘিরে উচ্চাশা বেশি। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন অ্যাসোসিয়েটস একটি গবেষণায় উল্লেখ করেছিল, এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় গ্যাসের সম্ভাবনা প্রবল।

শেয়ার করুন

নতুন গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে শেভরন

সময় ০৭:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

এনার্জি জায়ান্ট শেভরন দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রয়াসে বাংলাদেশে নতুন গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন ভিত্তিক কোম্পানিটির সিনিয়র কর্মকর্তারা।

শেভরনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা আনন্দিত যে, বিগত শেখ হাসিনা সরকার গত দুই বছরে কোম্পানিটিকে অর্থ প্রদান বন্ধ করার পর অন্তর্বর্তী সরকার কয়েক মিলিয়ন ডলারের বকেয়া পরিশোধ শুরু করেছে।

কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলোর এর নেতৃত্বে শেভরনের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ক্যাসুলো বলেন, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা শেভরনকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন খনন কার্যক্রমে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ব করেছে।

তিনি বলেন,’আমরা নতুন উপকূলীয় গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করব। নতুন গ্যাসের মজুদ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তুলব।’ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নতুন গ্যাসের মজুদ অন্বেষণে শেভরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির মধ্যে স্থানীয় কোম্পানিগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত।

পার্বত্য অঞ্চল
পার্বত্য অঞ্চলে গাস অনুসন্ধান

আমরা দেশে আরও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। প্রধান বহুজাতিক কোম্পানি ইতোমধ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।’

এসময় দেশে ভালো বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে তার একটি সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য শেভরনের সামাজিক দায়বদ্ধতার কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সরকার আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেভরনের বকেয়া পরিশোধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই শেভরন এবং পেট্রোবাংলা ছয় মাসের ঋণ পরিশোধের চুক্তিতে পৌঁছেছে।

উল্লেখ্য, ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ বিশ্ব মোড়লদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার ওপর তীক্ষ্ম নজরদারি ছিল পরাশক্তির কয়েকটি দেশের। সমুদ্রের পাশাপাশি অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে চোখ রয়েছে বিদেশি কোম্পানির।

প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তবু দেশের পার্বত্য অঞ্চল রয়ে গেছে অপেক্ষাকৃত অনাবিষ্কৃত। বর্তমানে পেট্রোবাংলা নতুন করে পার্বত্য অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ কি দেশের জ্বালানি খাতের জন্য আশার আলো দেখাবে, নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে?

পার্বত্য অঞ্চল, যেখানে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য মেলে ধরেছে তার সুষমা। এই এলাকায় রয়েছে গ্যাসের বিপুল সম্ভাবনা। পেট্রোবাংলা এবার ব্লক ২২বি অঞ্চলকে লক্ষ্য করে কাজ শুরু করতে চায়। এই ব্লকটি বান্দরবান, কক্সবাজার ও কাপ্তাইয়ের কিছু অংশজুড়ে বিস্তৃত।

পাশের দেশ ভারতের ত্রিপুরায় মাত্র ১৬০টি কূপ খননের মাধ্যমে ১১টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪টি কূপ খনন করেছে বাংলাদেশ। অথচ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অঞ্চল দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূতাত্ত্বিক গঠন গ্যাসের সন্ধানের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বিদেশি কোম্পানিকে এই অঞ্চলে কাজ করতে উৎসাহিত করা উচিত।

পেট্রোবাংলা জানায়, প্রায় তিন দশক পর অনশোরের জন্য প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট বা পিএসসি হালনাগাদ করা হয়েছে। নতুন চুক্তিতে এমন প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা বিদেশি কোম্পানিগুলোর আগ্রহ বাড়াবে।

ব্লক ২২বি অঞ্চলটি ঘিরে উচ্চাশা বেশি। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন অ্যাসোসিয়েটস একটি গবেষণায় উল্লেখ করেছিল, এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় গ্যাসের সম্ভাবনা প্রবল।