ঢাকা ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্য ইকোনমিস্টের তালিকা: ২০২৪-এর বর্ষসেরা দেশ বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৫:৫১:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 19

বর্ষসেরা বাংলাদেশ

চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পালিয়ে ভারতে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটাসংস্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলনের সূচনা হলেও দীর্ঘ ১৫ বছরে তার শাসনামলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল গোটা দেশের মানুষ। এরই জের ধরে ছাত্র আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। তাতে স্বতঃফূর্তভাবে যোগ দেন আপামর জনতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এতে বহু শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ নিহত হন। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দেশ থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এই আন্দোলনের জন্য বর্ষসেরা দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার স্বৈরশাসক আসাদের পতনের ঘটনাকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান।

প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ প্রতিবছরই এই তালিকা প্রকাশ করে থাকে। বৃহস্পতিবার এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

সিরিয়ায় এক যুগের বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছিল। তাতে পাঁচ লাখের মতো মানুষ নিহত হয়। স্বৈরশাসনের পতনের দাবিতে শুরু হওয়া সেই দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের শেষমেশ অবসান ঘটে গত ৮ ডিসেম্বর। দেশটির বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে স্বৈরশাসক বাশার আল–আসাদকে পালিয়ে রাশিয়া যান। আসাদের দুই যুগের নিষ্ঠুর শাসনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও লাখো মানুষ। তবে বর্ষসেরা দেশের তালিকায় সেই সিরিয়াকেও টপকে গেছে বাংলাদেশ।

বর্ষসেরা দেশের তালিকাসংবলিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেরা ধনী, সবচেয়ে সুখী বা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ স্থানের অধিকারী—এমন সব বিবেচনায় নয়; বরং গত ১২ মাসে সবচেয়ে ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনার জন্য দেশগুলোকে নির্বাচন করা হয়েছে।

সেরা দেশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদদাতাদের মধ্যে জোরাল বিতর্ক হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। পরে বর্ষসেরা দেশ নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ, রানারআপ সিরিয়া। এ বছর চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ। বাংলাদেশ ও সিরিয়া ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনা।

বাংলাদেশ সম্পর্কে দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, “আমাদের বিজয়ী বাংলাদেশ, তারাও এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। গত আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথের আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তিনি সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশটিকে ১৫ বছর ধরে শাসন করেন। দেশের স্বাধীনতার একজন নায়কের কন্যা হাসিনা। একসময় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু পরে দমনপীড়ন শুরু করেন, নির্বাচনে জালিয়াতি করেন, বিরোধীদের কারাগারে ভরেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার আমলে বিরাট অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলকালে প্রতিহিংসামূলক সহিংসতার ইতিহাস আছে। তবে এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন পরিবর্তন আশাব্যঞ্জক। শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছে। এটি ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এ সরকার আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে ও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।”

বাংলাদেশ-ভারত
বাংলাদেশ-ভারত

দ্য ইকোনমিস্ট আরও বলেছে, “অন্তর্বর্তী সরকারকে ২০২৫ সালে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করা দরকার। কবে নির্বাচন হবে তা–ও নির্ধারণ করতে হবে। আদালতগুলোর নিরপেক্ষভাবে কাজ করা ও বিরোধী দলগুলোর সংগঠিত হওয়ার সময় পাওয়ার বিষয় প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনওটি সহজ হবে না। তবে, একজন অত্যাচারী শাসককে হটানো এবং আরও উদার সরকার গঠনের পথে এগোনোর জন্য বাংলাদেশ আমাদের এ বছরের সেরা দেশ।”

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট’

শেয়ার করুন

দ্য ইকোনমিস্টের তালিকা: ২০২৪-এর বর্ষসেরা দেশ বাংলাদেশ

সময় ০৫:৫১:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

চলতি বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পালিয়ে ভারতে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটাসংস্কারকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলনের সূচনা হলেও দীর্ঘ ১৫ বছরে তার শাসনামলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল গোটা দেশের মানুষ। এরই জের ধরে ছাত্র আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। তাতে স্বতঃফূর্তভাবে যোগ দেন আপামর জনতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এতে বহু শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ নিহত হন। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দেশ থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এই আন্দোলনের জন্য বর্ষসেরা দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার স্বৈরশাসক আসাদের পতনের ঘটনাকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান।

প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ প্রতিবছরই এই তালিকা প্রকাশ করে থাকে। বৃহস্পতিবার এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

সিরিয়ায় এক যুগের বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছিল। তাতে পাঁচ লাখের মতো মানুষ নিহত হয়। স্বৈরশাসনের পতনের দাবিতে শুরু হওয়া সেই দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের শেষমেশ অবসান ঘটে গত ৮ ডিসেম্বর। দেশটির বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে স্বৈরশাসক বাশার আল–আসাদকে পালিয়ে রাশিয়া যান। আসাদের দুই যুগের নিষ্ঠুর শাসনে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও লাখো মানুষ। তবে বর্ষসেরা দেশের তালিকায় সেই সিরিয়াকেও টপকে গেছে বাংলাদেশ।

বর্ষসেরা দেশের তালিকাসংবলিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেরা ধনী, সবচেয়ে সুখী বা নৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠ স্থানের অধিকারী—এমন সব বিবেচনায় নয়; বরং গত ১২ মাসে সবচেয়ে ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনার জন্য দেশগুলোকে নির্বাচন করা হয়েছে।

সেরা দেশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদদাতাদের মধ্যে জোরাল বিতর্ক হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। পরে বর্ষসেরা দেশ নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ, রানারআপ সিরিয়া। এ বছর চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ। বাংলাদেশ ও সিরিয়া ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনা।

বাংলাদেশ সম্পর্কে দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, “আমাদের বিজয়ী বাংলাদেশ, তারাও এক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। গত আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজপথের আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তিনি সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশটিকে ১৫ বছর ধরে শাসন করেন। দেশের স্বাধীনতার একজন নায়কের কন্যা হাসিনা। একসময় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু পরে দমনপীড়ন শুরু করেন, নির্বাচনে জালিয়াতি করেন, বিরোধীদের কারাগারে ভরেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার আমলে বিরাট অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলকালে প্রতিহিংসামূলক সহিংসতার ইতিহাস আছে। তবে এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন পরিবর্তন আশাব্যঞ্জক। শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছে। এটি ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এ সরকার আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে ও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।”

বাংলাদেশ-ভারত
বাংলাদেশ-ভারত

দ্য ইকোনমিস্ট আরও বলেছে, “অন্তর্বর্তী সরকারকে ২০২৫ সালে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করা দরকার। কবে নির্বাচন হবে তা–ও নির্ধারণ করতে হবে। আদালতগুলোর নিরপেক্ষভাবে কাজ করা ও বিরোধী দলগুলোর সংগঠিত হওয়ার সময় পাওয়ার বিষয় প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনওটি সহজ হবে না। তবে, একজন অত্যাচারী শাসককে হটানো এবং আরও উদার সরকার গঠনের পথে এগোনোর জন্য বাংলাদেশ আমাদের এ বছরের সেরা দেশ।”

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট’