ঢাকা ০২:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রহস্যপুরুষের তত্ত্ব নিলেন তারেক

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ কতটা প্রয়োজনীয়!

নিউজ ডেস্ক
  • সময় ০৪:১৩:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
  • / 51

জাতীয় সংসদ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বারবার সংবিধান ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করা এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষার জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থায় অনেকেই আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, বিএনপি সম্প্রতি সংবিধান সংস্কারসহ একগুচ্ছ প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে।

বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবনায় রয়েছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারকে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করার সুপারিশ। এরমধ্যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ধারনাটি এর আগেও বহুবার আলোচিত হলেও নানা কারনে তা বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু কেন ?

মূলত বিশ্বজুড়ে সংসদীয় ব্যবস্থায় দুই ধরনের কাঠামো দেখা যায়- এর একটি এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও অপরটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ। এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদ সরাসরি জনগণের প্রতিনিধিত্বে গঠিত হয়। যেখানে সমস্ত আইন প্রণয়ন একটি কক্ষের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

বিএনপি
বিএনপি

অন্যদিকে, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে আইন প্রণয়ন দুটি পৃথক কক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে উপরি কক্ষ এবং নিম্ন কক্ষের নিজস্ব ভূমিকা থাকে। এই ধারণাটি সাধারণত বড় এবং বৈচিত্র্যময় দেশগুলোতে কার্যকর। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং যুক্তরাজ্যের সংসদীয় কাঠামো।

এই কাঠামো ভারসাম্য রক্ষা, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে গভীর চিন্তাভাবনা নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত। কিন্তু প্রশ্ন হলো – বাংলাদেশে কি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন রয়েছে ?

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালে এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংবিধান প্রণেতারা মনে করেছিলেন, একটি কার্যকর এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এককক্ষ ব্যবস্থা বেশি উপযোগী।

কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই ধারণা মাঝে মাঝে আলোচনায় এসেছে। ১৯৭৫ সালে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা চালু করার সময় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের একটি প্রস্তাব তোলা হয়।

ধারণা করা হয়েছিল, একটি উপরি কক্ষ যোগ করলে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা আইন প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। তবে এটি বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৮০ এর দশকে জেনারেল এরশাদের শাসনামলেও কিছু মহল থেকে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব উঠেছিল। বিশেষ করে সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা আলোর মুখ দেখেনি।

রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খান
রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খান

এর আগে রাজনীতির রহস্যপুরুষ হিসেবে পরিচিত, জাসদের আধ্যাতিক নেতা প্রয়াত সিরাজুল আলম খান দাদা ভাই প্রথম দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ধারনা উপস্থাপণ করেন। সেখান থেকেই বিএনিপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই তত্ত্ব গ্রহণ করেছেন বলে দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এরশাদের সময়ে এই প্রস্তাব তুললেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে এ নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন।

১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু হয়। রাজনৈতিক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি উপরি কক্ষ থাকলে রাজনৈতিক ভারসাম্য নিশ্চিত করা সম্ভব। উপরন্তু, এটি বিশেষজ্ঞদের মতামত বিবেচনায় এনে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে পারে।

তবে এই ধারণার বিপক্ষে যুক্তিও রয়েছে। সমালোচকদের মতে, একটি অতিরিক্ত কক্ষ পরিচালনা করতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া, বাংলাদেশের মতো তুলনামূলক ছোট দেশের জন্য এককক্ষ ব্যবস্থা যথেষ্ট। কেননা এখানে অনেক সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে হয়। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে সিদ্ধান্তগ্রহণ কিছুটা বিলম্ব হয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমাদের জাতীয় বাজেট ও প্রশাসনিক কাঠামো এমন কোনো অতিরিক্ত ব্যয় বহন করার জন্য প্রস্তুত নয়।

দ্বিকক্ষ সংসদের একটি বড় সুবিধা হলো সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা। উপরি কক্ষে বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের উপস্থিতি আইন প্রণয়নে গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারে।

বর্তমানে দেশের জাতীয় সংসদে ৩০০ নির্বাচিত ও ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনসহ মোট ৩৫০ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন।

 

শেয়ার করুন

রহস্যপুরুষের তত্ত্ব নিলেন তারেক

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ কতটা প্রয়োজনীয়!

সময় ০৪:১৩:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বারবার সংবিধান ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করা এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষার জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থায় অনেকেই আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, বিএনপি সম্প্রতি সংবিধান সংস্কারসহ একগুচ্ছ প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে।

বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবনায় রয়েছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারকে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করার সুপারিশ। এরমধ্যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ধারনাটি এর আগেও বহুবার আলোচিত হলেও নানা কারনে তা বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু কেন ?

মূলত বিশ্বজুড়ে সংসদীয় ব্যবস্থায় দুই ধরনের কাঠামো দেখা যায়- এর একটি এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও অপরটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ। এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদ সরাসরি জনগণের প্রতিনিধিত্বে গঠিত হয়। যেখানে সমস্ত আইন প্রণয়ন একটি কক্ষের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

বিএনপি
বিএনপি

অন্যদিকে, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে আইন প্রণয়ন দুটি পৃথক কক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে উপরি কক্ষ এবং নিম্ন কক্ষের নিজস্ব ভূমিকা থাকে। এই ধারণাটি সাধারণত বড় এবং বৈচিত্র্যময় দেশগুলোতে কার্যকর। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং যুক্তরাজ্যের সংসদীয় কাঠামো।

এই কাঠামো ভারসাম্য রক্ষা, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে গভীর চিন্তাভাবনা নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত। কিন্তু প্রশ্ন হলো – বাংলাদেশে কি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন রয়েছে ?

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালে এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংবিধান প্রণেতারা মনে করেছিলেন, একটি কার্যকর এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এককক্ষ ব্যবস্থা বেশি উপযোগী।

কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই ধারণা মাঝে মাঝে আলোচনায় এসেছে। ১৯৭৫ সালে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা চালু করার সময় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের একটি প্রস্তাব তোলা হয়।

ধারণা করা হয়েছিল, একটি উপরি কক্ষ যোগ করলে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা আইন প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। তবে এটি বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৮০ এর দশকে জেনারেল এরশাদের শাসনামলেও কিছু মহল থেকে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব উঠেছিল। বিশেষ করে সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা আলোর মুখ দেখেনি।

রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খান
রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খান

এর আগে রাজনীতির রহস্যপুরুষ হিসেবে পরিচিত, জাসদের আধ্যাতিক নেতা প্রয়াত সিরাজুল আলম খান দাদা ভাই প্রথম দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ধারনা উপস্থাপণ করেন। সেখান থেকেই বিএনিপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই তত্ত্ব গ্রহণ করেছেন বলে দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এরশাদের সময়ে এই প্রস্তাব তুললেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে এ নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন।

১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু হয়। রাজনৈতিক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি উপরি কক্ষ থাকলে রাজনৈতিক ভারসাম্য নিশ্চিত করা সম্ভব। উপরন্তু, এটি বিশেষজ্ঞদের মতামত বিবেচনায় এনে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে পারে।

তবে এই ধারণার বিপক্ষে যুক্তিও রয়েছে। সমালোচকদের মতে, একটি অতিরিক্ত কক্ষ পরিচালনা করতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া, বাংলাদেশের মতো তুলনামূলক ছোট দেশের জন্য এককক্ষ ব্যবস্থা যথেষ্ট। কেননা এখানে অনেক সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে হয়। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে সিদ্ধান্তগ্রহণ কিছুটা বিলম্ব হয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমাদের জাতীয় বাজেট ও প্রশাসনিক কাঠামো এমন কোনো অতিরিক্ত ব্যয় বহন করার জন্য প্রস্তুত নয়।

দ্বিকক্ষ সংসদের একটি বড় সুবিধা হলো সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা। উপরি কক্ষে বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের উপস্থিতি আইন প্রণয়নে গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারে।

বর্তমানে দেশের জাতীয় সংসদে ৩০০ নির্বাচিত ও ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনসহ মোট ৩৫০ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন।